পুষ্পস্তবক ভেঙে লাঠি, ইবির শহিদবেদিতে মারামারি
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শহিদবেদিতে একাত্তরের শহিদদের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে কর্মকর্তাদের দুটি পক্ষের সমর্থকরা হাতাহাতি, মারামারিতে লিপ্ত হয়েছেন।
আজ বুধবার সকালের দিকে ক্যাম্পাসে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম স্মারক ভাস্কর্য ‘মুক্ত বাংলা’য় এ ঘটনার সময় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা সমিতির সদস্যরা পুষ্পস্তবক ভেঙে বাঁশের লাঠি বানিয়ে একে-অপরের ওপর চড়াও হয়।
সংঘর্ষে লিপ্ত থাকাদের নিবৃত্ত করতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক ও সাংবাদিক লাঞ্ছিত হয়েছেন। এ ছাড়া শ্রদ্ধাঞ্জলির পুষ্পমাল্য ভেঙে পায়ে মাড়ানোরও অভিযোগ উঠেছে। গোটা শহিদবেদি তখন তছনছ করা হয়।
খবর পেয়ে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রো-ভিসি) ড. মো. শাহিনুর রহমান ও ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতারা ঘটনাস্থলে এলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
বিজয় দিবসে এহেন কর্মকাণ্ডে বিরক্ত হয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে উপ-উপাচার্য ড. মো. শাহিনুর রহমান বলেন, ‘এ রকম প্রতিহিংসাপরায়ণ মনোভাব নিয়ে শহিদবেদিতে ফুল না দিতে আসাই শ্রেয়। এটা খুবই দুঃখজনক ঘটনা।’
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, আজ সকাল ১০টার দিকে ক্যাম্পাসের মুক্ত বাংলায় শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম ও উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. শাহীনুর রহমানের নেতৃত্বে কর্তৃপক্ষ ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়।
এ সময় সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও তাদের শাখাগুলোর নেতাকর্মীরাও সেখানে জড়ো হয়ে ফুল দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। তখন সেখানে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা সমিতির সদস্যরাও ছিলেন। সম্প্রতি কর্মকর্তা সমিতি থেকে একটি অংশ বেরিয়ে গিয়ে অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন গঠন করে।
উপাচার্যের নেতৃত্বে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের ব্যানারে নেতারা ফুল দেওয়ার সময়ে শহিদবেদিতে উঠেন। তখন অনেকের পায়েই জুতা ছিল বলে অভিযোগ করে প্রত্যক্ষদর্শীরা। তারা আরো জানায়, এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা সমিতির নেতারা।
মুহূর্তের মধ্যেই এ নিয়ে কর্মকর্তা সমিতি ও অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের মধ্যে প্রথমে বাকবিতণ্ডা এবং পরে তা হাতাহাতি ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ায় রূপ নেয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা আরো জানায়, এ সময় কর্মকর্তা সমিতির নেতারা ধাওয়া দিয়ে অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদের বিশ্ববিদ্যালয় ফটক পার করে দিয়ে আসে। একপর্যায়ে তাদের সবাইকে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. পরেশ চন্দ্র বর্মণ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমার ২২ বছরের শিক্ষকতা জীবনে কখনো এমন ঘটনার সৃষ্টি হয়নি। এ ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক, অনাকাঙ্ক্ষিত এবং অপ্রত্যাশিত।’
‘আমি প্রশাসনের একজন ব্যক্তি হয়েও নিবেদন করব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হোক,’ বলেন প্রক্টর।
এদিকে, জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের কমকর্তাদের এমন মারামারি ও পুষ্পমাল্য ভেঙে পায়ে মাড়ানোর ঘটনায় নিন্দার ঝড় বইছে। বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন, ছাত্রসংগঠন এই ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
ঘটনাটিকে ইবির ইতিহাসের জঘন্যতম ঘটনা হিসেবে আখ্যায়িত করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও সরব হয়েছেন সাবেক বর্তমান শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।