পেটে কাঁচি রেখেই সেলাই, দুর্ভোগময় দেড় বছর পর অপসারণ
চিকিৎসকের অবহেলায় অস্ত্রোপচারের পর পেটে কাঁচি নিয়ে দেড় বছর নিদারুণ দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছিল মনিরা খাতুনকে। অবশেষে আবারও অস্ত্রোপচার করে তিন ঘণ্টার চেষ্টায় কাঁচিটি বের করা হয়েছে।
ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রতন কুমার সাহার নেতৃত্বে কয়েকজন ডাক্তার শনিবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত অস্ত্রোপচার চালিয়ে কাঁচিটি বের করতে সক্ষম হন।
ডা. রতন কুমার সাহা বলেন, ‘আমরা তিন ঘণ্টা চেষ্টার পর অপারেশন করে কাঁচিটি বের করতে সক্ষম হই। মনিরা অজ্ঞান রয়েছে, তাই সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছে না।’
ডা. রতন কুমার সাহা জানান, দীর্ঘদিন পেটের ভেতর কাঁচি থাকায় মনিরার পেটের নাড়ির কিছু অংশ পচন ধরেছিল। সেগুলো কেটে ফেলতে হয়েছে। প্রয়োজনে কৃত্রিম নাড়ি লাগানো হতে পারে বলে জানান এ চিকিৎসক।
ভুক্তভোগী মনিরা খাতুনের বাবার বাড়ি গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার ঝুটি গ্রামে।
মনিরার ভাই মো. কাইয়ুম জানান, দেড় বছর আগে এক অস্ত্রোপচারের কয়েক দিন পর মনিরার বিয়ে হয়। বিয়ের পরেও তাঁর পেটে ব্যথা ছিল। এরপর তিনি অন্তঃসত্ত্বা হন। পরে মনিরার গর্ভের সন্তান নষ্ট হয়ে গেলে তাঁকে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন স্বামী। এর পর বিভিন্ন গ্রাম্য চিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসা করানো হয়। কিন্তু মনিরার পেটব্যথা কমেনি। তাঁকে এ সময়ে ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়ানো হয়।
মো. কাইয়ুম আরও জানান, দুদিন আগে মনিরার পেটে অসহনীয় ব্যথা উঠলে গত বুধবার তাঁকে মুকসুদপুরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসার জন্য আনা হয়। ওই ক্লিনিকে এক্স-রের মাধ্যমে চিকিৎসক দেখতে পান, মনিরার পেটের মধ্যে একটি কাঁচি রয়েছে। এরপর গত শুক্রবার মনিরাকে ফরিদপুর আনা হয়। এখানে এসে একটি বেসরকারি ক্লিনিকে মনিরার এক্স-রে করা হলে একই রিপোর্ট আসে।
মনিরা খাতুন গত বছরের ৩ মার্চ পেটে টিউমার নিয়ে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। ভর্তির সাত দিন পর তাঁর অস্ত্রোপচার করা হয়। অস্ত্রোপচারের পর মনিরার পেটে কাঁচি রেখেই সেলাই করেন চিকিৎসক। সহযোগী অধ্যাপক মোল্লা সরফউদ্দিন এবং রেজিস্ট্রার সালেহ মো. সৌরভ ওই অস্ত্রোপচারটি করেছিলেন। তাঁরা এ ব্যাপারে কথা বলতে রাজি হননি।