পৌর নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক বলা যায় না : ইসি মাহবুব
চলমান পৌরসভা নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক বলা যায় না বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। আজ শনিবার বিকেলে আগারগাঁওস্থ নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে লিখিত বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
মাহবুব তালুকদার বলেন, 'আজ শনিবার আমি সাভার পৌরসভার তিনটি ভোটকেন্দ্রের ১৮টি বুথ পরিদর্শন করি। দুপুর ১টা পর্যন্ত ওইসব ভোটকেন্দ্রে সাত হাজার ৩১১ জন ভোটারের মধ্যে এক হাজার ২৩২ জন ভোট প্রদান করেছেন। তিনটি বুথে আমি তিনজন বিরোধী দলীয় প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট দেখতে পাই। কিন্তু অন্য কোথাও এজেন্ট ছিলেন না। এ ছাড়া সাভার পৌর এলাকায় আমি বিরোধীদলীয় প্রার্থীর কোনো পোস্টার দেখতে পাইনি। এমতাবস্থায়, এই নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক বলা যায় না। যেকোনো নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না হলে তা সিদ্ধ হয় না।’
নির্বাচন কমিশনার আরো বলেন, 'পৌরসভার নির্বাচনে ক্রমাগত সহিংসতা বেড়ে চলেছে। সহিংসতা ও নির্বাচন এক সঙ্গে চলতে পারে না। নির্বাচন প্রক্রিয়ার পরিবর্তন না হলে এই সহিংসতা বন্ধ করা সম্ভব নয়। এ বিষয়ে সবার ঐকমত্য আবশ্যক। যেকোনো নির্বাচনের চেয়ে মানুষের জীবন অনেক বেশি মূল্যবান।’
দীর্ঘদিন পর আজ মাহবুব তালকুদার লিখিত বক্তব্যের পর সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। সুষ্ঠু ভোটের পরিবেশ তৈরি করতে না পারার দায় কমিশন নেবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে মাহবুব তালুকদার বলেন, 'নির্বাচন কমিশন এককভাবে নির্বাচনের আয়োজন করে না। অনেক প্রতিষ্ঠান মিলে এই আয়োজন করে। তবে এই দায় কমিশন এড়াতে পারে না।'
আরেক প্রশ্নের জবাবে মাহবুব তালুকদার বলেন, 'সহিংসতার মাত্রা বুঝে পৌরসভা নির্বাচন বাতিল করা যেতে পারে। সামগ্রিক পরিবেশ যদি নির্বাচনের জন্য সহায়ক না হয়, তাহলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না।’
টানটান উত্তেজনা, বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, হাতবোমা বিস্ফোরণ আর ভোট বর্জনের মতো ঘটনার মধ্যে দিয়ে আজ বিকেলে শেষ হয় দ্বিতীয় ধাপের ৬০ পৌরসভার ভোটগ্রহণ। ভোট চলাকালে চারটি পৌরসভায় ভোট বর্জন করেন বিএনপির মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থীরা। একটিতে ভোট বর্জন করেছেন স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী। এ ছাড়া কাউন্সিলর প্রার্থীও ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন।
ভোটে অনিয়মের অভিযোগ তুলে বাগেরহাটের মোংলা পোর্ট পৌরসভা, কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর পৌরসভা, রাজশাহীর বাগমারার ভবানীগঞ্জ পৌরসভা, পাবনার ঈশ্বরদী পৌরসভায় বিএনপির মেয়র পদপ্রার্থীরা ভোট বর্জন করেছেন। মেহেরপুরের গাংনী পৌরসভায় ভোট বর্জন করেছেন স্বতন্ত্র মেয়র পদপ্রার্থী। সবশেষ মোংলা পোর্ট পৌরসভায় একযোগে ১২ কাউন্সিলর পদপ্রার্থী ভোট বর্জন করেন।
ভোট চলাকালে দেখা গেছে, কয়েকটি এলাকায় কাউন্সিলর পদপ্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে হাতাহাতি, মারামারি, গাড়ি ভাঙচুরের মতো ঘটনা। বিএনপির প্রার্থীরা বলছেন, এই ভোট কারচুপি করেছে সরকার সমর্থিত প্রার্থীরা।
এই ধাপে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি-জাপা, ইসলামী আন্দোলন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টি এনপিপির প্রার্থী অংশ নিয়েছেন। এর আগে প্রথম ধাপে পাঁচটি রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করেছিল। এ ধাপে আটটি রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র মিলিয়ে মোট মেয়র পদপ্রার্থী ২২১ জন। সাধারণ কাউন্সিলর পদে দুই হাজার ৩৩২ জন এবং সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদপ্রার্থীর সংখ্যা ৭২৪ জন।
আজ যে ৬০ পৌরসভায় ভোট হয়েছে
গাজীপুরের শ্রীপুর (ইভিএম), চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ (ব্যালট), সিরাজগঞ্জের কাজীপুর (ইভিএম), বেলকুচি (ব্যালট), উল্লাপাড়া (ব্যালট), সদর (ব্যালট) ও রায়গঞ্জ (ব্যালট), নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ (ব্যালট), কুষ্টিয়া সদর (ব্যালট), কুমারখালী (ইভিএম), ভেড়ামারা (ব্যালট) ও মিরপুর (ব্যালট), মৌলভীবাজারের কুলাউড়া (ব্যালট) ও কমলগঞ্জ (ব্যালট), নারায়ণগঞ্জের তারাবো (ইভিএম), শরীয়তপুর সদর (ইভিএম), কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী (ব্যালট), গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ (ব্যালট) ও সদর (ব্যালট), দিনাজপুর সদর (ব্যালট), বিরামপুর (ব্যালট) ও বীরগঞ্জ (ইভিএম), নওগাঁর নজিপুর (ইভিএম), পাবনার ভাঙ্গুড়া (ব্যালট), ফরিদপুর (ইভিএম), সাঁথিয়া (ব্যালট) ও ঈশ্বরদী (ব্যালট), রাজশাহীর আড়ানী (ইভিএম), ভবানীগঞ্জ (ব্যালট) ও কাকনহাট (ইভিএম), সুনামগঞ্জ সদর (ব্যালট), ছাতক (ব্যালট) ও জগন্নাথপুর (ইভিএম), হবিগঞ্জের মাধবপুর (ব্যালট) ও নবীগঞ্জ (ব্যালট), ফরিদপুরের বোয়ালমারী (ব্যালট), ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া (ইভিএম) ও মুক্তাগাছা (ব্যালট), মাগুরা সদর (ইভিএম), ঢাকার সাভার (ইভিএম), নাটোরের নলডাঙ্গা (ইভিএম), গুরুদাসপুর (ব্যালট) ও গোপালপুর (ব্যালট), বগুড়ার শেরপুর (ব্যালট), সারিয়াকান্দি (ইভিএম) ও সান্তাহার (ইভিএম), পিরোজপুর সদর (ইভিএম), নেত্রকোনার কেন্দয়া (ইভিএম), মেহেরপুরের গাংনী (ইভিএম), ঝিনাইদহের শৈলকুপা (ইভিএম), পার্বত্য খাগড়াছড়ি সদর (ইভিএম), বান্দরবান জেলার লামা (ব্যালট), টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী (ইভিএম), কুমিল্লার চান্দিনা (ইভিএম), ফেনীর দাগনভূঞা (ইভিএম), কিশোরগঞ্জ সদর (ব্যালট) ও কুলিয়ারচর (ইভিএম), নরসিংদীর মনোহরদী (ইভিএম), নোয়াখালীর বসুরহাট (ইভিএম) এবং বাগেরহাটের মোংলা (ইভিএম) পৌরসভা।