প্রক্টরের কাছে নিরাপত্তা চেয়েও বিশ্ববিদ্যালয়ছাত্র নির্যাতনের শিকার
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ছাত্রলীগকর্মীকে ক্যাম্পাস থেকে ধরে নিয়ে পৌনে দুই ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ রোববার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে একটি ভবনে এই নির্যাতনের ঘটনা ঘটে।
প্রতিপক্ষ ছাত্রলীগকর্মীরা এই নির্যাতন চালায় বলে ওই শিক্ষার্থী অভিযোগ করেছেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর তাকে উদ্ধার করেন। নির্যাতনের শিকার রাব্বি খান রাজ লোকপ্রশাসন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র।
এর আগে গত ৭ আগস্ট রাব্বি খান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও বিভাগীয় চেয়ারম্যান বরাবর নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন করেছিলেন।
রাব্বি খান বরিশাল সদর আসনের সংসদ সদস্য ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীমের অনুসারী অমিত হাসান রক্তিম গ্রুপের সক্রিয় কর্মী। প্রতিপক্ষ মহিউদ্দীন আহমেদ ওরফে সিফাতের নেতৃত্বে এই হামলার ঘটনা ঘটে বলে হাসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রাব্বি অভিযোগ করেন।
শিক্ষার্থীরা জানায়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কোনো কমিটি না থাকলেও মহিউদ্দিন আহমেদ সিফাত দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের একটি পক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর অনুসারী। অন্যদিকে বরিশাল সদর আসনের সংসদ সদস্য ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীমের অনুসারী ছাত্রলীগের অমিত হাসান রক্তিম পক্ষও বিশ্ববিদ্যালয়ে সক্রিয়।
রাব্বি খান অভিযোগ করে বলেন, ‘আজ দুপুর ১২টায় আমার ক্লাস টেস্ট পরীক্ষা ছিল। প্রক্টরের আশ্বাসে আমি ক্যাম্পাসে পরীক্ষা দিতে যাই। পরীক্ষা দিয়ে বের হয়ে দুপুর ১টার দিকে উপাচার্যের বাসভবনের ফটক থেকে নগরীতে আসার জন্য গাড়ির অপেক্ষা করছিলাম। এ সময় চার সন্ত্রাসী এসে আমাকে ধরে ফেলে। পেছনে আরও ১০ থেকে ১২ জন ছিল। পরে আমাকে তুলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে নাজেমস নামের একটি হোটেলে নিয়ে যায়। সেখানে মহিউদ্দীন আহমেদ সিফাত ৩০ থেকে ৩৫ জন সন্ত্রাসী নিয়ে অপেক্ষা করছিল। সেখানে নেওয়ার পর মহিউদ্দীন এক অনুসারীকে হলে তার কক্ষ থেকে বগি দা নিয়ে আসতে নির্দেশ দেয়। এরপর বগি দা আনার পর মহিউদ্দীন নিজেই দায়ের কাঠের হাতল দিয়ে আমার দুই হাঁটুতে এবং হাঁটুর নিচে পেটায়। এ ছাড়া সিফাতের সহযোগীরা আমার মাথায় ও পিঠে কিল, ঘুষি মেরে গুরুতর আহত করে। এভাবে প্রায় পৌনে দুই ঘণ্টা আটকে আমার ওপর নির্মম নির্যাতন চালানো হয়। এ সময় প্রক্টর খবর পেয়ে মহিউদ্দীন আহমেদ সিফাতকে ফোন করে কথা বলেন এবং আমাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু সিফাত তা উপেক্ষা করে আমার ওপর নির্যাতন অব্যাহত রাখে। পরে ২টা ৫১ মিনিটের দিকে প্রক্টর খোরশেদ আলম স্যার ঘটনাস্থলে আসেন এবং আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান।’
পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম পক্ষের অমিত হাসান রক্তিম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে নাজেমস ভবনে এই নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। সন্ত্রাসী সিফাত ও তার দলবল ওই ভবনেই আড্ডা দেয়। তাদের সব অস্ত্র ওই ভবনেই থাকে। আমাদের চার ছাত্রলীগকর্মী নিরাপত্তার আবেদন করেও এই নির্যাতনের শিকার হয়েছে। রাব্বি খান রাজকে সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে। এখন তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে।’
নির্যাতনের বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের একটি পক্ষের নেতৃত্ব দেওয়া মহিউদ্দিন আহমেদ সিফাত বলেন, ‘আপনার কাছেই প্রথম শুনলাম এই ঘটনা। আর এই ধরনের কিছুই শুনিনি। আমার কোনো লোকজন এমনটা করলে জানতাম। আমার জানামতে এই ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। আর আমি এই সম্পর্কে কোনো কিছুই জানি না। যদি কেউ এই ধরনের অভিযোগ করে থাকে তবে, তা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত।’
প্রক্টর খোরশেদ আলম বলেন, ‘রাব্বি খান আমাদের কাছে নিরাপত্তার জন্য আবেদন করেছিল। তাকে বলা হয়েছিল পরীক্ষা থাকলে সেই সময় নিরাপত্তাহীনতা বোধ করলে আমাদের জানাতে। কিন্তু রোববার তার পরীক্ষা ছিল কি না সে বিষয়টি আমাদের জানায়নি। দুপুরের দিকে রাব্বিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের একটি বাসা থেকে বের করে আনা হয়। এরপর জানায় সে শারীরিকভাবে অসুস্থ এবং শহরে যেতে চায়। তারপর তাকে শহরে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। তবে তার সঙ্গে কী হয়েছিল সেই বিষয়ে আমাদের কিছু বলেনি। আমরা বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ নিব এবং রাব্বির সঙ্গে পুনরায় কথা বলব।’
উল্লেখ্য, গত ৫ জুলাই রাত ১টার দিকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সিফাত ও রক্তিম গ্রুপের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় উভয় পক্ষের সাতজন আহত হন। এরপর ঈদুল আজহার ছুটি শুরু হয়। পরে গত ২০ জুলাই ক্যাম্পাস খুললেও প্রতিমন্ত্রীর পক্ষের নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাসে আসছেন না। মূলত মেয়রের অনুসারীদের হামলার আশঙ্কায় তাঁরা ক্যাম্পাসে আসছেন না বলে জানিয়েছেন। এরইমধ্যে হামলার আশঙ্কায় চার ছাত্রলীগকর্মী নিরাপত্তা চেয়ে প্রক্টরের কাছে আবেদন করেন। তাঁদের মধ্যে রাব্বি খান একজন।