প্রদীপ-লিয়াকত-নন্দদুলাল তৃতীয় দফায় রিমান্ডে
অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার, পরিদর্শক লিয়াকত আলী ও এসআই নন্দদুলালকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তৃতীয় দফায় রিমান্ডে পেয়েছে তদন্তকারী সংস্থা র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
আজ শুক্রবার বেলা ৩টার দিকে তিন আসামিকে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে চারদিন করে রিমান্ডের আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিনিয়র পুলিশ সুপার খায়রুল ইসলাম। শুনানি শেষে বিচারক তামান্না ফারাহ তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এ নিয়ে তাদের মোট ১৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হলো।
র্যাবের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ মোস্তফা প্রমুখ। এর আগে তিন আসামিকে কক্সবাজার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করোনা হয়। আসামিদের আদালতে নিয়ে আসার আগে সেখানে বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়।
অপরদিকে আসামিদের পক্ষে আদালতে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট আহসানুল হক হেনার নেতৃত্বে চট্টগ্রাম থেকে আসা একটি আইনজীবী প্যানেল। তারা আসামিদের রিমান্ড আবেদন বাতিল এবং আসামিদের জামিনের আবেদন করেন। বিচারক তাদের দুটি আবেদনই খারিজ করে দেন। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বিচারক তিন আসামির তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুরের আদেশ দেন।
পরে আদালত চত্বরে তদন্ত কর্মকর্তা খাইরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মামলাটি খুবই স্পর্শকাতর। তাই অধিকতর তদন্তের স্বার্থে আসামিদের আরো জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডের প্রয়োজন। তাই আসামিদের চার দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আমরা চাই, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।'
আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আহসানুল হক হেনা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ওসি প্রদীপ কুমার দাস তো গুলি করেননি। আমরা বলেছি, ঘটনার সময় প্রদীপ কুমার ঘটনাস্থল থেকে ৩২ কিলোমিটার দূরে টেকনাফ থানায় ছিলেন। তিনি পরে ঘটনাস্থলে এসেছেন। যদি তিনি না আসতেন, তাহলে তো দায়িত্বে অবহেলা করেছেন বলা হতো।‘
তিন আসামির ফের রিমান্ডের সিদ্ধান্তকে ‘অপ্রত্যাশিত’ বলে মন্তব্য করেন এই আইনজীবী। তিনি আরো বলেন, তারা খুব শিগগিরই বিষয়টি নিয়ে উচ্চ আদালতে যাবেন।
অপরদিকে র্যাবের পক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ মোস্তফা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চার দিনের রিমান্ড চেয়েছিলেন। আমরা সেটা সমর্থন করেছি। আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।‘
গত ৩১ জুলাই ঈদুল আজহার আগের রাত সাড়ে ১০টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশ কর্মকর্তা লিয়াকত আলীর গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। ঘটনার পর পুলিশ বাদী হয়ে টেকনাফ থানায় দুটি মামলা করে। আর রামু থানায় একটি মামলা করে।
পরে ৫ আগস্ট কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হত্যা মামলা করেন সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। এতে নয়জনকে আসামি করা হয়। আসামিরা হলেন টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ, টেকনাফের বাহারছড়া শামলাপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের প্রত্যাহার হওয়া পরিদর্শক লিয়াকত আলী, উপপরিদর্শক (এসআই) নন্দদুলাল রক্ষিত, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) লিটন মিয়া, পুলিশ কনস্টেবল সাফানুর রহমান, কামাল হোসেন, আবদুল্লাহ আল মামুন, মো. মোস্তফা ও এসআই টুটুল। এদের মধ্যে আসামি মোস্তফা ও টুটুল পলাতক।
এরপর গত ৬ আগস্ট প্রথম দফায় বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, পরিদর্শক লিয়াকত আলী ও এসআই নন্দদুলাল রক্ষিতের সাত দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছিলেন কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিনের আদালত।
এরপর গত ২৪ আগস্ট কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক তামান্না ফারাহ আসামিদের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আজ একই আদালত তাদের তৃতীয় দফায় রিমান্ড মঞ্জুর করলেন।
এই মামলায় মোট ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সদস্য তিনজন। তাঁরা হলেন- সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) শাহজাহান, কনস্টেবল মোহাম্মদ আবদুল্লাহ ও কনস্টেবল রাজীব। এই তিনজনই আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
অন্য তিন আসামি হলেন- পুলিশের দায়ের করা দুটি মামলার সাক্ষী টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের মারিশবুনিয়া এলাকার বাসিন্দা মো. নুরুল আমিন, মো. নেজামুদ্দিন ও মোহাম্মদ আয়াছ।
এ ছাড়া পুলিশের দায়ের করা মামলায় দুই আসামি সিনহা রাশেদের দুই সহযোগী সাহেদুল ইসলাম সিফাত এবং অপর সহযোগী শিপ্রা দেবনাথ জামিনে মুক্ত হন।