প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাতের আশায় পায়ে হেঁটে ত্রিশালে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হাবিব
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতের আশায় দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষক হাবিবুর রহমান নেত্রকোনা থেকে ঢাকার উদ্দেশে ১৪৭ কিলোমিটার পথ পথযাত্রা শুরু করে দিয়েছেন। তাঁর আশা প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিজের প্রতিষ্ঠিত প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের খারাপ অবস্থার কথা তুলে ধরে এমপিওভুক্তির পথ সুগম করা। গত রোববার দুপুর সোয়া ১টার দিকে নেত্রকোনা পৌরসভার আন্তঃজেলা বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে এই পদযাত্রা শুরু করেন তিনি। পায়ে হেঁটে দুদিনে ত্রিশাল জিরো পয়েন্ট পৌঁছেছেন। হাবিবুর রহমান নেত্রকোনা সদর উপজেলার সাজিউড়া অটিজম ও প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক।
আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষক হাবিবুর রহমানের সঙ্গে মোবাইলফোনে কথা বললে তিনি বলেন, ‘আমি ময়মনসিংহের ত্রিশাল জিরো পয়েন্টে আছি এবং সুস্থ আছি, আমার জন্য সবাই দোয়া করবেন, যাতে নিজ লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারি।’
দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হাবিবুর রহমানের যাত্রার আগে পারলা বাসস্টান্ড এলাকায় জেলার বিভিন্ন প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তাঁর পদযাত্রায় সংহতি জানান। এ সময় কয়েকজন শিক্ষক অংশ নেন।
হাবিবুর রহমান জানান, নেত্রকোনা সদরসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ২৬টি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ২৫ বছর আগে ১৯৯৭ সালে সদর উপজেলার মদনপুর ইউনিয়নের সাজিউড়া গ্রামে সাজিউড়া অটিজম ও প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়টি স্থাপন করেন তিনি। বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে বুদ্ধি, বাক, দৃষ্টি, অটিজম ও শারীরিক মিলিয়ে ১৬৪ শিক্ষার্থী এবং ১৪ শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন। ২০ শতক জমিতে স্থাপিত এই বিদ্যালয়ে ১০ জন শিক্ষার্থী আবাসিক থেকে পড়াশোনা করছে। বর্তমানে স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, এলাকাবাসীর সহায়তায় চলছে বিদ্যালয়টি। এ অবস্থায় শিক্ষক কর্মচারীদের ভবিষ্যৎ হতাশায় থাকায় তা কাটিয়ে উঠতে বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত করার দাবি দীর্ঘদিনের। কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না। তাই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সরাসরি কথা বলার এবং বিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরার জন্য তিনি পায়ে হেঁটে যাত্রা শুরু করেন। জেলার অন্য প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকরাও চান, প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাতলাভের মাধ্যমে হাবিবুর রহমানের বিদ্যালয়টির এমপিওভুক্তকরণ হোক এবং জেলার অন্য বিদ্যালয়গুলোকেও ধাপে ধাপে এমপিওভুক্ত করা হোক।
বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি নেত্রকোনা জেলা শাখার আহ্বায়ক আবদুর রব খান ঠাকুর বলেন, ‘জেলায় মোট ২৬টি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের মধ্যে কামরুন্নেছা আশরাফ বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী বিদ্যালয়টি একমাত্র এমপিওভুক্ত হয়েছে। আমরা চাই অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোও এমপিওভুক্ত করা হোক। দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে হাবিবুর রহমান অনেক কষ্ট করে বিদ্যালয়টি চালাচ্ছেন। সরকারি নীতিমালার সবকিছুই এই বিদ্যালয়ের আছে। আমরা হাবিবুর রহমানের এই পদযাত্রার শুভ কামনা করি। আশা করি প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাতলাভের মাধ্যমে তাঁর মনের আশা পূরণ হবে।’
নেত্রকোনা প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মামুন মিয়া বলেন, ‘আমরা চাই, যে উদ্যোগটা হাবিবুর রহমান নিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য সেটি যেন সফল হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেন বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করেন। আমরা চাই, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যেন তাঁর সাক্ষাতের ব্যবস্থা হয়।’
নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলার কাছুটিয়া সৈয়দ আলী আকবর অটিজম ও বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষক হাবিবুর রহমান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের জন্যে যে যাত্রা শুরু করেছেন তাঁকে আমরা স্বাগত জানাই।’
পদযাত্রা শুরুর সময় হাবিবুর রহমান বলেন, ‘সরকারি নীতিমালা মেনে দীর্ঘদিন ধরে আবেদন করে যাচ্ছি। কোন সুরাহা না পাওয়ায় বিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্মচারীরা ভবিষ্যত চিন্তায় হতাশায় ভুগছেন। সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য হাবিবা রহমান খান বিদ্যালয়টির দৈন্যদশা ও এমপিওভুক্তিকরণের বিষয় তুলে ধরে গত বছরের ৩১ জানুয়ারি সংসদে এক মিনিট ৩৮ সেকেন্ড কথা বলেছেন। ২০১৮ সালের ২৭ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পরিচালক-৭ আল মামুন মুর্শেদের সই করা চিঠিও পাঠানো হয় সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবরে। এতেও বিদ্যালয়টির এমপিওভু্ক্তকরণ হয়নি। তাই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার জন্য পায়ে হেঁটে রওনা দিয়েছি। প্রতিদিন অন্তত ২৫ থেকে ৩০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে এক সপ্তাহের মধ্যে ঢাকায় পৌঁছানোর আশা করছি।’