প্রবাসীর স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়ার জেরে যুবক খুন, তিন বন্ধু গ্রেপ্তার
গাজীপুরের শ্রীপুরে প্রবাসীর স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়া প্রেমের বিরোধের জেরে এক যুবককে হত্যার ঘটনা ঘটে। চাঞ্চল্যকর এ খুনের প্রায় ১৪ মাস পর রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এ ঘটনায় জড়িত ওই যুবকের তিন বন্ধুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আজ শুক্রবার বিকেলে গাজীপুর পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান এ তথ্য জানিয়েছেন।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন গাজীপুরের শ্রীপুর থানাধীন রাজাবাড়ী ইউনিয়নের পাবুরিয়াচালা এলাকার মো. রানা (২২), একই গ্রামের মো. হেলাল (৪৫) ও মো. কাওছার (২৩)।
পিবিআইয়ের ওই কর্মকর্তা জানান, গত বছরের ১০ জুলাই দুপুরে বাড়ি থেকে পার্শ্ববর্তী স্কুল মার্কেটে যাওয়ার পথে নিখোঁজ হন শ্রীপুর থানাধীন পাবুরিয়াচালা এলাকার জমির আলীর ছেলে রাসেল (১৯)। স্বজনরা বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করেও তার সন্ধান পায়নি। এক পর্যায়ে নিখোঁজের পাঁচ দিন পর স্থানীয় শহুরের টেক গজারী বনের ভেতর গাছের সঙ্গে রশি দিয়ে গলায় ফাঁস লাগানো রাসেলের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পচন ধরা ওই লাশটির পুরো শরীরে পোকায় খাওয়া ছিল। ময়নাতদন্ত রিপোর্টে তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করার কথা উল্লেখ করা হয়।
এ ঘটনায় নিহতের বাবা বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন।
পিবিআই কর্মকর্তা জানান, শ্রীপুর থানা পুলিশ মামলাটি প্রায় পাঁচ মাস তদন্ত করে। এতে কোনো রহস্য উদঘাটন ও আসামি গ্রেপ্তার করতে না পারায় ঢাকা পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স চাঞ্চল্যকর ও ক্লুলেস এ মামলাটি গাজীপুরের পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেন। পিবিআইয়ের তদন্তকালে তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে এ ঘটনায় জড়িত আসামি রানা, হেলাল ও কাওছারকে পাবুরিয়াচালা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। আসামিরা জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে বন্ধু রাসেলকে হত্যায় সরাসরি জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। গতকাল বৃহস্পতিবার তাদের আদালতে সোপর্দ করলে তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ক্লুলেস এ ঘটনার প্রায় ১৪ মাস পর রহস্য উন্মোচন হয়েছে।
জবানবন্দি সূত্রে জানা যায়, ভিকটিম রাসেলের সঙ্গে এক প্রবাসীর স্ত্রীর পরকীয়ার সম্পর্ক গড়ে উঠে। পরবর্তীতে রাসেলের ঘনিষ্ট বন্ধু রানার সঙ্গেও ওই নারীর প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। এ নিয়ে রাসেল ও রানার সঙ্গে বিরোধের সৃষ্টি হয়। রানা এই সুযোগে ওই নারীর দেবর কাওছারকে রাসেলের সঙ্গে ভাবির (কাওছারের) পরকীয়া প্রেমের ঘটনাটি জানান। পরবর্তীতে পরিবারের মানসম্মানের কথা বিবেচনা করে রানা ও হেলালের সঙ্গে বসে রাসেলকে হত্যার পরিকল্পনা করে কাওছার। পরিকল্পনা অনুযায়ী ওই প্রবাসীর স্ত্রী মোবাইল ফোনে রাসেলকে পার্শ্ববর্তী শহুরেটেক গজারী বনে ডেকে নেয়। সেখানে রাসেলের সঙ্গে রানা, হেলাল ও কাওছারের বাকবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে তারা রাসেলের গলায় রশি বেঁধে শ্বাসরোধে হত্যা করে। পরে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিতে লাশটিকে মাটিতে বসিয়ে গলায় বাঁধা রশির একটি মাথা গাছে ঝুলিয়ে রেখে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।