প্রভুর মতো আচরণ না করে সেবক হিসেবে কাজ করুন : সিইসি
কর্মকর্তাদের প্রভুর মতো আচরণ না করে সেবক হিসেবে কাজ করার জন্য কর্মকর্তাদের আহ্বান জানিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা নিতে নাগরিকরা যাতে হয়রানির শিকার না হয়, সে বিষয়ে তৎপর থাকতে হবে।
আজ মঙ্গলবার নির্বাচনি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে ‘এনআইডি প্রাপ্তির ক্ষেত্রে উদ্ভূত সমস্যা নিরসনে উপায় নির্ধারণ’ শীর্ষক কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সিইসি এসব কথা বলেন। এনআইডি সংশোধনকে ঘিরে নাগরিকদের দুর্ভোগ হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। এমন বাস্তবতায় সমস্যা নিরসনে এ কর্মশালার আয়োজন করা হয়।
এতে জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়ার ক্ষেত্রে দ্বৈত ভোটার সংক্রান্ত কার্যক্রম এবং ম্যাচ ফাউন্ড এর ক্ষেত্রে করণীয় নির্ধারণ; দ্বৈত নাগরিকদের এনআইডি পাওয়ার ক্ষেত্রে সুপারিশ প্রণয়ন; মৃত ভোটার সংক্রান্ত কার্যক্রম নির্ধারণ; এবং স্মার্ট কার্ড পেতে নট ফাউন্ড ভোটারদের স্মার্টকার্ড দেওয়ার সুপারিশ প্রণয়ন করা হবে। নবনিযুক্ত পাঁচ সদস্যের ইসি দায়িত্ব নেওয়ার এক মাস পরে এনআইডি সংক্রান্ত এ কর্মশালা হচ্ছে। এতে আঞ্চলিক/জেলা/উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিস, জাতীয় পরিচয়ন নিবন্ধন অনুবিভাগ এবং নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ও নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তারা অংশ নেন।
বর্তমানে ১১ কোটি ৩২ লাখেরও বেশি নাগরিক ভোটার তালিকাভুক্ত রয়েছেন। ২০০৭-২০০৮ সালে ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়নের পর নাগরিকদের এনআইডি কার্ড দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি উন্নতমানের স্মার্ট কার্ড দেওয়াও চলমান রয়েছে।
সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল জানান, জাতীয় পরিচয়পত্রের প্রয়োজন অপরিসীম। এনআইডিতে ভুল বিভিন্ন কারণে হতে পারে। ভুল সংশোধন নিয়ে অনেকেই আসছেন, এটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পরিচয়পত্র দৈনন্দিন কার্যক্রম সহজ করে দিয়েছে। এখন সমস্যাগুলো আইডেন্টিফাই করতে হবে। কারেকশনের ক্ষেত্রে কিন্তু ‘চাহিবামাত্র ইহার বাহককে দিতে বাধ্য থাকিবে’ তা নয়। আমাদের পরীক্ষা নীরিক্ষা করতে হবে। কিন্তু মানুষ যেন হয়রানির শিকার না হয়।
সেবা সঠিকভাবে দিতে পারলে মানুষ উপকৃত হবে উল্লেখ করে সিইসি বলেন, ‘সবদিক থেকে আমাদের নৈতিক অধপতন হয়েছে। আমাদের সব কাজে তদবির করতে হয়। কিছু কিছু মানুষের জন্য সুনাম বিঘ্নিত হচ্ছে। এ নিয়ে সবার সতর্ক থাতে হবে।’
জনগণের সেবক হিসেবে কর্মকর্তাদের কাজ করার নির্দেশ দিয়ে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘আমরা কাজে যোগ দিই জনগণের ভৃত্য হিসেবে। আর কাজে যোগ দিয়ে প্রভুর মতো আচরণ করি। কিন্তু আমাদের প্রভুর মতো আচরণ করলে চলবে না। অন্তর দিয়ে জনগণের ভৃত্য হিসেবে নিজেদের মেনে নিতে হবে।’
কিছু কিছু মানুষের জন্য ইসির সুনাম নষ্ট হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা যদি দক্ষতার সঙ্গে এবং সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন না করে, তাহলে পুরো নির্বাচন কমিশনকে সেই বদনামের দায়ভার নিতে হবে। এই বিষয়টি নজরে রাখতে হবে।’
নির্বাচন কমিশনার অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আহসান হাবিব খান বলেন, ‘এনআইডি সেবাকে কেন্দ্র করে নাগরিকদের আস্থা অর্জন করতে হবে। কোনোভাবেই নাগরিকরা যাতে দুর্ভোগের শিকার না হন—সে বিষয়ে তৎপর থাকতে হবে সংশ্লিষ্টদের।’
ছোটোখাটো ভুল সংশোধনে ‘ক্র্যাশ প্রোগ্রাম’ নেওয়ার পক্ষে মত দেন এ নির্বাচন কমিশনার। মাঠ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘প্রতি মাসে এনআইডি সেবা নিতে কত আবেদন পড়েছে, সেই সঙ্গে যেসব আবেদন নিষ্পত্তি করা যায়নি, তার কারণ উল্লেখ করে প্রতিবেদন জমা দিতে হবে। সততার সঙ্গে কাজ করতে হবে। ইসি সচিব হুমায়ুন কবীর খোন্দকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা, মো. আলমগীর ও মো. আনিছুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।