‘প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতি পাঁচজনে একজন উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন’
উচ্চ রক্তচাপ বিষয়ে গণসচেতনতা বৃদ্ধি ও চিকিৎসাসেবা বৃদ্ধির জন্য দেশের সকল কমিউনিটি ক্লিনিকে রক্তচাপ পরীক্ষা ও উচ্চ রক্তচাপের ওষুধের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা জরুরি বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
মঙ্গলবার ও বুধবার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানারস কনফারেন্স রুমে আয়োজিত ‘হাইপারটেনশন অ্যান্ড হার্ট হেলথ’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী সাংবাদিক কর্মশালায় তারা এসব তথ্য জানান। তাদের মতে, দেশে প্রতি ৫ জনে ১ জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ (২১ শতাংশ) উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। তবে আশঙ্কাজনক বিষয় হলো তাদের অধিকাংশই জানেন না তিনি এই রোগে ভুগছেন।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন বাংলাদেশে বিপুল সংখ্যক মানুষ বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টিকারী অসংক্রামক রোগ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছে। আর যারা উচ্চ রক্তচাপে ভুগছে, তাদের অধিকাংশই জানেন না তিনি আক্রান্ত। বিশেষ করে প্রায় অর্ধেক নারী (৫১ শতাংশ) এবং দুই-তৃতীয়াংশ পুরুষই (৬৭ শতাংশ) জানেই না যে, তাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে। কিন্তু এই উচ্চ রক্তচাপ নীরবে শরীরের বিভিন্ন অংশকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
অনুষ্ঠানে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের রোগতত্ত্ব বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী বলেন, রক্তচাপ যদি স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে অনেক বেড়ে যায় তাহলে তাকে উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন বলে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের রক্তচাপ থাকে ১২০/৮০ মি.মি.। রক্তচাপের মাত্রা দুটি ভিন্ন দিনে ১৪০/৯০ মি.মি. পারদচাপ বা তার বেশি হলে বুঝতে হবে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে। তবে বয়স ভেদে রক্তচাপ কিছুটা কম বা বেশি হতে পারে।
তিনি বলেন, অধিকাংশ সময় উচ্চ রক্তচাপের নির্দিষ্ট কোনো লক্ষণ এবং উপসর্গ থাকে না। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে সকালের দিকে মাথাব্যথা, নাক দিয়ে রক্ত পড়া, হৃৎপিণ্ডের অনিয়মিত ছন্দ, দৃষ্টিতে পরিবর্তন দেখা দিতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে না থাকলে হার্ট, কিডনিসহ শরীরের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি অঙ্গে জটিলতা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
সতর্ক করে তিনি বলেন, কেউ যদি উচ্চ রক্তচাপে ভোগেন, কিন্তু চিকিৎসা না করান, তাহলে বুকে ব্যথা, হার্ট অ্যাটাক, হার্ট ফেল এবং হার্ট বিট অনিয়মিত হওয়ার পাশাপাশি স্ট্রোক হতে পারে।
এসময় জিএইচএআই বাংলাদেশ কান্ট্রি লিড মো. রুহুল কুদ্দুস বলেন, উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি থেকে বাঁচতে প্রত্যেকেরই নিয়মিত রক্তচাপ মাপা করা দরকার। কারও রক্তচাপ যদি ঠিক না থাকে, তাহলে কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে হবে। কারও যদি ডায়াবেটিস হয়, তাকে কিন্তু নিয়মিত একটা মেডিসিন নিতে হয়। হাইপারটেনশনেও এমনই, কেউ যদি একবার আক্রান্ত হয়, তাকেও সবসময় মেডিসিন কন্টিনিউ করতে হবে। বছরে আমাদের প্রায় দুই লাখ ৭৭ হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে। ২০২৫ সালের মধ্যে তা কমিয়ে আনার পরিকল্পনা রয়েছে।
রুহুল কদ্দুস বলেন, সঠিক নিয়মে উচ্চ রক্তচাপ পরীক্ষা, চিকিৎসা সেবাগ্রহণ এবং উচ্চ রক্তচাপজনিত হৃদরোগ ও অন্যান্য অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি বিষয়ে ব্যাপক জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে। একইসঙ্গে সকল হাসপাতাল এবং কমিউনিটি ক্লিনিক পর্যায়ে উচ্চ রক্তচাপ চিকিৎসা এবং ওষুধ প্রদান নিশ্চিত করতে এ খাতে সরকারের বাজেট বরাদ্দ বাড়াতে হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বাংলাদেশের ন্যাশনাল প্রফেশনাল অফিসার (এনসিডি) ডা. সৈয়দ মাহফুজুল হক বলেন, বিশ্বে প্রতিবছর ১ কোটিরও বেশি মানুষ উচ্চ রক্তচাপের কারণে মারা যায়, যা সকল সংক্রামক রোগে মোট মৃত্যুর চেয়েও বেশি।
কর্মশালায় জানানো হয়, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সরকারের বেশ কিছু নীতি ও কর্মপরিকল্পনা থাকলেও এ বিষয়ে দেশব্যাপী উল্লেখযোগ্য কোনো কর্মসূচি নেই। সরকার বৈশ্বিক লক্ষ্যমাত্রা অনুসরণ করে অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে ২০২৫ সালের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপের প্রাদুর্ভাব তুলনামূলকভাবে ২৫ শতাংশ কমানোর (রিলেটিভ রিডাকশন) জাতীয় লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
কর্মশালায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্ডিওলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. এস এম মোস্তফা জামান, ব্র্যাক জেমস পি গ্রান্টস স্কুল অব পাবলিক হেলথের সেন্টার ফর নন কমিউনিকেবল ডিজিজ অ্যান্ড নিউট্রিশন বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মলয় কান্তি মৃধা, এনটিভির হেড অব নিউজ অ্যান্ড কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স জহিরুল আলম, অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া অ্যালায়েন্স- আত্মার কনভেনর মর্তুজা হায়দার লিটন, কো-কনভেনর নাদিরা কিরণ ও মিজান চৌধুরী, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. মাহফুজুর রহমান ভূঁইয়া এবং প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের।