প্লেনের টিকিট বিক্রির নামে প্রতারণায় গ্রেপ্তার ১
ভুয়া ট্রাভেল এজেন্সি খুলে প্লেনের টিকিট বিক্রি করতেন প্রতারকচক্র। পরে যাত্রীকে না জানিয়েই টিকিট ফেরত দিয়ে টাকা নিয়ে উধাও হতেন তাঁরা। এই চক্রের সদস্য মাহবুব উর রশিদকে (৫১) গ্রেপ্তার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) গুলশান বিভাগ। গতকাল বুধবার রাতে রাজধানীর কলাবাগানের গ্রিন রোড এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আজ বৃহস্পতিবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।
গ্রেপ্তারের সময় মাহবুব উর রশিদের কাছ থেকে বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের ৮১টি ভুয়া টিকিট, প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত দুটি মোবাইল ফোন, দুটি কম্পিউটার, একটি গাড়ি, ১২টি বিভিন্ন ব্যাংকের চেক ও একটি এটিএম কার্ড উদ্ধার করা হয় বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, ‘মানুষকে ফাঁদে ফেলে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া ছিল এই চক্রের মূল টার্গেট। হজ মৌসুমকে টার্গেট করেছিল তাঁরা। যাত্রীর কাছ থেকে টাকা নিয়ে এজেন্সি হিসেবে প্লেনের টিকিট কিনতেন এই চক্রের সদস্যরা। পরে যাত্রীকে না জানিয়ে টিকিট রিফান্ড করে অর্থ নিয়ে পালাতেন। বিমানবন্দরে যাওয়ার পর যাত্রী বিষয়টি জানতে পারতেন। তখন আর কিছুই করার থাকত না।’
এ কে এম হাফিজ আক্তার আরও বলেন, ‘গত ২৬ মার্চ সাইদুর রহমানের নামে একজন ভুক্তভোগীর সঙ্গে প্রতারক মাহবুব রশিদের পরিচয় হলে তিনি এমকিউ ট্রেড অ্যান্ড ট্রাভেল কনসালটেন্সি নামে প্রতিষ্ঠানের সিইও বলে দাবি করেন। সব দেশের টিকিটের ব্যবস্থা তিনি করতে পারেন বলে জানান।’
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘তখন সাইদুর তার পরিচিত পাঁচজনের মাস্কট, রিয়াদ ও টরেন্টোর বিমানের টিকিট লাগবে বলে জানান। পাঁচজনের টিকিট বাবদ প্রতারক মাহবুবকে পাঁচ লাখ ১০ হাজার টাকা দিলে প্রথমত মাস্কট এবং রিয়াদের দুটি টিকিট দেন তিনি। কিন্তু, রিয়াদের যাত্রী গত ২৮ মার্চ এয়ারপোর্টে এসে দেখেন তাঁর টিকিট বাতিল হয়ে গেছে। টিকিট এজেন্সি টাকা রিফান্ড করে উঠিয়ে নিয়ে গেছে বলে জানতে পারেন সাইদুর। এরপর প্রতারক মাহবুবের সঙ্গে যোগাযোগ করলে পরে আবার দুটি টিকিট ইস্যু করে দিলেও ফ্লাইটের দিনে সাইদুর জানতে পারেন এ টিকিট দুটিও রিফান্ডেড। পরে টরেন্টোর টিকিট ইস্যু না করেই গ্রেপ্তার মাহবুবুর উর রশিদ অফিস গুটিয়ে লাপাত্তা হয়ে যায়।’
এরকম আরও কিছু অভিযোগের ভিত্তিতে ডিবির গুলশান শাখা তদন্ত শুরু করে বলে জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, ‘প্রতারক মাহবুবুর রশিদ বিভিন্ন ফেসবুক আইডি ও পেজ খুলে বিভিন্ন দেশে গমনাগমন, ওমরা হজ পালন, সিঙ্গেল টিকিট, আপ-ডাউন টিকিট, পরিবারের সদস্যদের বিমানের টিকিটের বিজ্ঞাপন দিতেন। কোনো বিদেশ যাত্রীর টিকিটের প্রয়োজন হলে বা কোনো কাস্টমার রাজি থাকলে তাঁর কাছ থেকে হোয়াটসঅ্যাপ বা ফেসবুক চ্যাটিংয়ের মাধ্যমে যাত্রীর পাসপোর্টের ছবি নেন। বুকিং কনফার্ম করে যাত্রীদের টিকিটের টাকা হাতিয়ে নিতেন। পরে আবার সেই টিকিট রিফান্ড করে টিকিটের মূল্য ফেরত নিতেন এই প্রতারক।’
হাফিজ আক্তার বলেন, ‘প্রতারক মাহবুবুর রশিদ ২০১৫ সালে কানাডায় লোক পাঠানোর কথা বলে মানুষকে জিম্মি করে টাকা পয়সা আদায়ের দায়ে মোহাম্মদপুর থানা এবং ধানমণ্ডি থানায় দুটি মানবপাচারের মামলার আসামি হন। এ সময় তার প্রতিষ্ঠানের নাম ছিল প্লানেট ওভারসিজ। এই লাইনে কাজ করতে করতে একসময় তাঁর মাথায় বিমানের টিকিট প্রতারণার কৌশল শুরু করেন।’
‘বিভিন্ন সময় প্রতারণা কাজের জন্য একাধিকবার অফিস পরিবর্তন করেছেন’ উল্লেখ করে হাফিজ বলেন, ‘এই প্রতারক ২০১৫ সালে মোহাম্মদপুরের লালমাটিয়ায়, ২০১৮ সালে কারওয়ান বাজারে, ২০২১ সালে এলিফ্যান্ট রোডে এবং সর্বশেষ ভাটারা এলাকায় তার সাময়িক অফিস ছিল।’
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, প্রতারণার হাত থেকে পরিত্রাণ পেতে সেসব এজেন্সির কাছ থেকে টিকিট কিনতে হবে যাঁরা আইএটিএ (ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রান্সপোর্ট এজেন্সিস) অথবা এবিএটি (অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্সিস অব বাংলাদেশ) এর অন্তর্ভুক্ত। আইএটিএভুক্ত এজেন্সিগুলো এয়ারলাইন্সের সঙ্গে চুক্তি করার সময় তাঁরা একটি বড় অংকের টাকা নিরাপত্তা জামানত হিসেবে দিয়ে রাখেন। ফলে তাঁরা পালিয়ে যেতে পারেন না।
এ ছাড়া ভ্রমণের ন্যূনতম দুদিন আগে নিজের টিকিট পরীক্ষা করা যেতে পারে বলে জানান হাফিজ আক্তার।