বইমেলায় বই প্রকাশ নিয়ে দুশ্চিন্তায় প্রকাশকরা
বইমেলার বাকি আর আড়াই মাস। মেলায় উপলক্ষে এখন ব্যস্ত সময় পার করার কথা প্রকাশকদের। অথচ তারা এখন বই প্রকাশ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পার করছেন সময়। কাগজের দাম আকাশচুম্বী। দাম বৃদ্ধিতে তৈরি হয়েছে কাগজের সংকট। এতে স্থবির হয়ে পড়েছে দেশের মুদ্রণ শিল্পের প্রাণকেন্দ্র বাংলা বাজার। আর বেচাকেনা কম হওয়ায় কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে কাগজ ব্যবসায়ীদেরও।
ডলার সংকটের কারণে কাচামাল ও দেশের বাইরে থেকে কাগজ আমদানী বাধাগ্রস্থ হওয়ায় অস্বাভাবিক দাম বেড়েছে—দাবি আমদানিকারক ও দেশী উৎপাদকদের। সব মিলিয়ে বড় ধরনের শঙ্কার মুখে আসছে ফেব্রুয়ারির বইমেলা।
কাগজের বাজার ঘুরে জানা গেছে, কয়েকমাস ধরে অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে কাগজের দাম। দেশের বৃহত্তম কাগজের বাজার রাজধানীর নয়াবাজারের ব্যবসায়ীরা গেল পাঁচ মাসে টনপ্রতি ৩৫ থেকে ৩৭ হাজার টাকা বাড়তি দরে কাগজ কিনছেন। হঠাৎ করে এমন বাড়তি দরে কাগজ কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন তাঁরা।
কাগজের বাড়তি দামের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে মুদ্রণ শিল্পে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অন্যান্য খাতের মতো ডলার সংকটের প্রভাব পড়েছে এই খাতেও। খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, পাইকারি বেড়ে গেলে বেড়ে যায় খুচরা বাজার।
এক কাগজ ব্যবসায়ী বলেন, ‘রমি প্রতি কাগজে গুনতে হচ্ছে হজার বারোশ টাকা।’ অপর এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘বারোশ টাকার কাগজ দুই হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’ আরেক ব্যবসায়ীর দাবি, ‘এ রকম দু-চার মাস থাকলে কাগজের সব ব্যবসায়ীরাই দেউলিয়া হয়ে যাবে।’
ডলার সংকটের কারণে কাচামাল ও দেশের বাইরে থেকে কাগজ আমদানী বাধাগ্রস্থ হওয়ায় অস্বাভাবিক দাম বেড়েছে—দাবি আমদানিকারক ও দেশী উৎপাদকদের। বাংলাদেশ কাগজ আমদানিকারক সমিতির সভাপতি মো. শফিকুল ইসলাম ভরসা বলেন, ‘ব্যাংকগুলো আমাদের ইমপোর্টারদেরকে রিফিউজ করে দিয়ে বলছে—আমরা এলসি দিতে পারব না। এইটা আমি মনে করি, বিদেশি আমদানি নির্ভর যে কাগজগুলো আছে, তার ওপর বেশি মাত্রায় ইফেক্টটা পড়েছে। আমাদের এখানে যদিও আজকে লেখার বা ছাপার কাগজে আত্মনির্ভরতার জায়গাটা বেড়েছে, কিন্তু আমাদের এই উৎপাদনে কাঁচামালটায় আমদানি নির্ভরতা আছে।’
সবচে দুশ্চিন্তায় বই ব্যবসায়ীরা। কেননা, মাস দুয়েকের মাথায় বাঙ্গালির প্রাণের উৎসব অমর একুশে গ্রন্থমেলা। যে কারণে এখন থেকেই প্রকাশকদের ব্যস্ত সময় পার করার কথা। অথচ লেখকদের কাছ থেকে পাণ্ডুলিপি নিয়েও কাজ শুরু করতে পারছেন না।
এমন বাস্তবতায় নতুন বই প্রকাশ না করার ঘোষণা দিয়েছে কোনো কোনো ব্যবসাসফল প্রকাশনীও।
নওরোজ কিতাবিস্তানের প্রকাশক মনজুর খান চৌধুরী বলেন, ‘কাগজের মার্কেটটা অনেকটা শেয়ার মার্কেটের মতো। সকালে এক দাম, কেলে এক দাম, দুপুরে এক দাম।’
স্বরবৃত্ত প্রকাশনের প্রকাশক মো. রহমত উল্লাহ বলেন, ‘কাগজের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় আমাদের পক্ষে বই প্রকাশ দুরুহ হয়ে পড়েছে।’
রৌদ্রছায়া প্রকাশের প্রকাশক আহমেদ রউফ বলেন, ‘গত দুই বছর করোনায় এমনিতেই বই প্রকাশ কমে গেছে। এর মধ্যে এবার কাগজের দাম যে পরিমানে বেড়েছে, তাতে বইয়ে খুব বেশি ইনভেস্ট করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারপরও চেষ্টা চলছে ভালো বই করার। যদিও ্তো দাম দিয়ে মানুষ কতো বই কিনতে আগ্রহী হবে, তা নিয়েও ভাবতে হচ্ছে।’
পার্ল পাবলিকেশনের প্রকাশক হাসান জায়েদী বলেন, ‘ঊধ্বগতির কারণে পাঠক বই কিনতে কতোটুকু চাইবে, তা নিয়ে আমরা চিন্তিত।’