বঙ্গবন্ধুই ডিজিটাল বীজ বপন করে গেছেন : মোস্তাফা জব্বার
বঙ্গবন্ধু কেবল বাংলা ও বাঙালির একমাত্র স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেননি, তিনি সোনার বাংলা গড়ার দর্শনের মধ্য দিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ ও ডিজিটাল সাম্য সমাজ প্রতিষ্ঠার বীজ বপন করে গেছেন বলে মন্তব্য করেছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আজ বুধবার বাংলাদেশ পোস্ট অফিস কর্মচারী ইউনিয়ন আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্নকেই বাস্তবায়ন করছেন। একদিকে বঙ্গবন্ধু ধ্বংসস্তূপের মধ্যে একটি প্রযুক্তিনির্ভর, বিজ্ঞানভিত্তিক এবং জ্ঞান, মেধা ও সৃজনশীলতানির্ভর সোনার বাংলা গড়ার সর্বাত্মক চেষ্টা চালান, অন্যদিকে দ্বিতীয় বিপ্লবের মধ্য দিয়ে শোষণ-বঞ্চনাহীন একটি সাম্য সমাজ প্রতিষ্ঠার বীজ বপন করে গেছেন।
মোস্তাফা জব্বার বলেন, বঙ্গবন্ধু হাজার বছরের পরাধীন বাঙালি জাতির মুক্তির মহানায়ক। অপরদিকে মাত্র তিন বছর সাত মাসে তার শাসনকাল ছিল বাঙালির অর্থনৈতিক মুক্তির সোপান। তথ্যপ্রযুক্তি, শিক্ষা, ভূমি ব্যবস্থাপনা থেকে শুরু করে তার গৃহীত কর্মসূচিগুলো ছিল আজকের ডিজিটাল বাংলাদেশের মূল ভিত্তি। বাঙালি ভাগ্যবান তার মতো একজন মহান নেতা পাওয়ার জন্য। যুদ্ধের ধ্বংসস্তূপের মধ্যেও জাতীয় প্রবৃদ্ধি শতকরা সাত ভাগে তিনি উন্নীত করে সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার যাত্রা শুরু করেছিলেন।
বঙ্গবন্ধু রাজনীতির সঙ্গে অর্থনীতিকে সম্পৃক্ত করেছেন উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুকে মূল্যায়ন করলে তাকে মূল্যায়ন করতে হবে—শোষিত বঞ্চিত মানুষের পাশে তার দৃঢ় অবস্থান দিয়ে। বঙ্গবন্ধু প্রচলিত ধারণা বদলে দিয়ে বাংলা ভাষাভিত্তিক বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করায় পাকিস্তান ও তাদের এ দেশীয় দোসর এবং সাম্রাজ্যবাদী আন্তর্জাতিক পরাশক্তি এই পরিবর্তন মেনে নিতে পারেনি বলেই বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারের হত্যা করেছে। বঙ্গবন্ধু ছিলেন বাঙালি জাতির বড় সম্পদ। বিশ্বে অনেক রাজনীতিক দেখেছি আমরা, কিন্তু একজন বঙ্গবন্ধুর মতো নেতা খুঁজে পাওয়া দুষ্কর বলেও মন্তব্য করেন মোস্তাফা জব্বার।
স্বাধীনতা সংগ্রাম, দেশপ্রেম কিংবা রাষ্ট্র পরিচালনায় বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তুলনা করার মতো একজন নেতাও নেই বলে মন্ত্রী উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ১৯৪৮ সাল থেকে সত্তরের নির্বাচন পর্যন্ত আন্দোলন সংগ্রামের পথ বেয়ে একাত্তরের জনযুদ্ধ ছিলে পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।
বঙ্গবন্ধুর মতো দূরদর্শী রাজনীতিবিদ ও রাষ্ট্রনায়ক যুগে যুগে আসেন না উল্লেখ করেন মন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের ভিত্তি হিসেবে টিঅ্যান্ডটি বোর্ড গঠন, বেতবুনিয়ায় ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা, আইটিইউ, ইউপিইউয়ের সদস্যপদ অর্জন, এমনকি খুলনার ক্যাবল শিল্প প্রতিষ্ঠা বঙ্গবন্ধুর হাত ধরেই হয়েছে। সুদীর্ঘকাল আগে কী করে বঙ্গবন্ধু আজ ও আগামী দিনের প্রয়োজনীয়তার কথা ভাবছেন এবং এসব প্রতিষ্ঠান ভিত্তির ওপর দাঁড় করিয়েছেন, তা অভাবনীয়।
মোস্তাফা জব্বার বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দূরদর্শিতা তুলে ধরে বলেন, ইয়াহিয়া খানের লিগ্যাল ফ্রেম ওয়ার্কের অধীনে অভ্যন্তরীণ বিরোধিতা সত্ত্বেও সত্তরের নির্বাচনে অংশগ্রহণ ছিল বঙ্গবন্ধুর দৃরদৃষ্টিসম্পন্ন সিদ্ধান্তের ফসল। এরই ধারাবাহিকতায় আমাদের স্বাধীনতার যুদ্ধকে বিচ্ছিন্ন আন্দোলন বলার সুযোগ ছিল না। সত্তরের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নিরঙ্কুশ বিজয়ে পুরো দেশের সব জনতা এক হওয়ার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাঙালির এই যুদ্ধে ব্যাপক সমর্থন প্রদান করে বলে মন্ত্রী উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, যুদ্ধের ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়েও মাত্র সাড়ে তিন বছরে যেসব বড় কাজ তিনি করেছেন, তার একটি সংক্ষিপ্ত তালিকায় আমি এ পর্যন্ত প্রাপ্ত হিসেবে ১৫৫টি বিশেষ উদ্যোগ পেয়েছি। আর আজকের বাংলাদেশ এই ভিত্তির ওপর ভর করেই অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে তারই সুযোগ্য উত্তরসূরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে।
মন্ত্রী স্বাধীনতা সংগ্রামের আটটি স্মারক ডাকটিকেট প্রকাশসহ ডাক বিভাগের গৌরবোজ্জ্বল বিভিন্ন ঘটনা তুলে ধরে বলেন, মুক্তিযুদ্ধে দুই শতাধিক ডাক কর্মচারী শহীদ হয়েছেন। তাদের উত্তরসূরি হিসেবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ প্রতিষ্ঠায় মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় চলমান সংগ্রামের সৈনিক হিসেবে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে যাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, সরকার ডাক বিভাগকে গুরুত্ব দিয়ে দেখে এবং সেজন্য একে সম্পূর্ণ ডিজিটাল করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এজন্য ডাক কর্মচারীদের ডিজিটাল দক্ষতা অর্জনের আহ্বান জানান তিনি।
বাংলাদেশ পোস্ট অফিস কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মোসলেম উদ্দিন হাওলাদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ এমপি, ডাক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. সিরাজ উদ্দিন এবং বাংলাদেশ পোস্ট অফিস কর্মচারী ইউনিয়নের মহাসচিব খলিলুর রহমান ভুইয়া বক্তব্য দেন।
ড. আবদুস সোবহান গোলাপ বঙ্গবন্ধুর জীবনের ঘটনাবহুল তথ্য তুলে ধরেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর লালিত স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যাওয়ার আহ্বান জানান।