বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা শুনতে সাত বিচারপতি বিব্রতবোধ করেছিলেন : আইনমন্ত্রী
আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আইন ও আইনের শাসনের প্রতি আজীবন শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। অথচ তাঁকে এদেশের কিছু মানুষ সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যা করে। এ হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স শুনানির জন্য আমরা হাইকোর্টে গেলে হাইকোর্টের সাত বিচারপতি বিব্রতবোধ করে এ মামলার শুনানি করতে অপারগতা প্রকাশ করেছিলেন।’
আইনমন্ত্রী আজ মঙ্গলবার বিচার প্রশাসন ইনস্টিটিউটে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৬তম শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে এক আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইনমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে হত্যার নেপথ্যে থাকা লোকদের চিহ্নিত করতে কমিশন গঠনের কথা বললে অনেকেই এখন অসন্তুষ্ট হচ্ছে।’ তিনি আহ্বান জানান, ষড়যন্ত্রকারীদের ষড়যন্ত্রের বিষয়ে আমাদের সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক আরও বলেন, ‘জিয়াউর রহমান যদি প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হতেন, তাহলে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশকে আইনে পরিণত না করে বাতিল করতেন এবং বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করতেন। কিন্তু জিয়াউর রহমান তা না করে খুনিদের বিদেশি মিশনে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেছেন। আর এরশাদ খুনিদের রাজনৈতিক দল গঠনের সুযোগ দিয়েছেন, ফারুককে রাষ্ট্রপতি প্রার্থী করেছেন। খালেদা জিয়া খুনি রশিদকে বিরোধী দলের নেতার আসনে বসিয়েছেন।’
বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানার সভাপতিত্বে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ আইন কমিশনের চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক। অনুষ্ঠানে এ ছাড়াও আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ার, সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল আলী আকবর, নিবন্ধন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক শহীদুল আলম ঝিনুক, আইন ও বিচার বিভাগের যুগ্ম সচিব বিকাশ কুমার সাহা ও যুগ্ম সচিব উম্মে কুলসুম, ইনস্টিটিউটের পরিচালক মো. গোলাম কিবরিয়া বঙ্গবন্ধুর জীবন আলেখ্য নিয়ে আলোচনা করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক আরো বলেন, জনগণের পক্ষে কথা বলার জন্য তিনি প্রায় ১৩ বছর জেল খেটেছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। অথচ এদেশের মাটিতে, এদেশেরই কিছু কুলাঙ্গার তাঁকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যা করে। আরো আশ্চর্যজনক বিষয়, এ হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্সের জন্য হাইকোর্ট গেলে হাইকোর্টের সাতজন বিচারতি বিব্রতবোধ করে এ মামলার শুনানি করতে অপারগতা প্রকাশ করেছিলেন।
বঙ্গবন্ধু বন্দুকের নল দেখিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার পক্ষপাতী ছিলেন না উল্লেখ করে আইনমন্ত্রী বলেন, তিনি নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে রাজনীতি করে জনগণকে নিজের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করেছেন এবং অধিকার আদায়ের পদ্ধতি শিখিয়েছেন। এরপর জনগণ যখন তাঁকে যখন মেন্ডেট দিয়েছেন তখনই তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন এবং বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছেন।
আইনমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের প্রয়োজনে যা কিছু প্রয়োজন বঙ্গবন্ধু তা করে দিয়েছেন। আজকে বাংলাদেশ যে আইনি কাঠামোর ওপর দাঁড়িয়ে আছে তা বঙ্গবন্ধুর তৈরি করে দেওয়া। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর ২১ বছর এই আইনি কাঠামো পাল্টে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। ষড়যন্ত্রকারীরা এখনো রাস্তায় ঘোরাফেরা করছে। এদের ষড়যন্ত্রের বিষয়ে আমাদের সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।