বন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কুয়াকাটার ২২ জেলে পরিবারের সংবাদ সম্মেলন
বিনা নোটিশে পুনর্বাসন ছাড়াই উচ্ছেদ প্রক্রিয়া বন্ধ ও পুর্নবাসনের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ২২টি জেলে পরিবার। আজ শনিবার বেলা ১১টায় পটুয়াখালী প্রেসক্লাবে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের গঙ্গামতি খালগোড়া এলাকার ভুক্তভোগী জেলে পরিবারের সদস্য মো. সালাম মুসুল্লীর পক্ষে মো. শহিদুল ইসলাম শাহীন।
সংবাদ সম্মেলনে বন বিভাগের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ঘর ভাঙচুর, লুটপাটসহ নানা অভিযোগ আনা হয়। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন ভুক্তভোগীরা।
লিখিত বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করে জানানো হয়, বিগত প্রায় ৪০ বছর বসবাসকারী জেলে পরিবারগুলোকে স্থায়ী বসবাসের কাগজপত্র তৈরি করে দেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন সময়ে উৎকোচ গ্রহণ করেন কুয়াকাটা গঙ্গামতি বন বিভাগের অসাধু কর্মকর্তারা। এসব কর্মকর্তারা বাৎসরিক ৫০০ টাকা, কখনও এক হাজার আবার দুই হাজার টাকা করে নিতেন। বিগত ১০ বছর ধরে বছরে দুই হাজার টাকা করে দেওয়া হতো। এ বছর ১০ হাজার টাকা দাবি করা নিয়ে বিট কর্মকর্তা মো. মোশারেফ হোসেনের চলে নাটকিয় ভূমিকা। টাকার হিসেব না মেলায় উচ্ছেদ অভিযান ও হামলাল দুশ্চিন্তায় ভুগছেন ২২ জেলে পরিবার। বিট কর্মকর্তা মো. মোশারেফ হোসেনের আতঙ্কে আতঙ্গিত জেলে এসব পরিবারগুলো।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মহাজনের থেকে নেওয়া ঋণ পরিশোধ নিয়ে বিব্রত পরিস্থিতিতে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন। মাছ ধরে কোনো রকম পেট চালাচ্ছে এসব পরিবার। ওই ২২ জেলে পরিবারের পুনর্বাসন এখন একমাত্র ভরসা।
এ ব্যাপারে বিট কর্মকর্তা মো. মোশারেফ হোসেন জেলেদের আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘বনের অভ্যন্তরে ঘরবাড়ি উচ্ছেদে কোনো আগাম নোটিশের প্রয়োজন নেই।’ টাকা নেওয়ার বিষয়ে কোনো সদুত্তর না দিলেও তাঁর বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের যা কিছু লেখার আহ্বান জানান।
গঙ্গামতি গোড়াখালে বসবাসরত জেলে পরিবারের পুনর্বাসন, উচ্ছেদ প্রক্রিয়া বন্ধ ও আবাসন নিশ্চিতের দাবিতে ইতোমধ্যেই একাধিকবার মানববন্ধন করাসহ জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে।
জেলে পরিবারের দাবি, বন বিভাগের পাহারাদার হিসেবে আমাদের স্থাপন করা হয়েছে। সে হিসেবে আমরা পুনর্বাসনের দাবি রাখি। এ ছাড়া পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করে কোনো নোটিশ ছাড়াই উচ্ছেদ প্রক্রিয়া অন্যায়। এটি বন বিভাগ কর্মকর্তাদের দায়িত্বহীনতার পরিচয়। এ ছাড়াও চলতি বছর ২১ সেপ্টেম্বর সকালে ৬০ থেকে ৭০ জন কর্মচারী ও শ্রমিক নিয়ে বন বিভাগের আকস্মিক হামলা, ঘর ভাঙচুর ও মারধরের ঘটনায় কোনঠাসা হয়ে পড়ে জেলে পরিবারগুলো।
জেলে পরিবারের দাবি, যেখানে তাঁরা বসবাস করছেন সেখানে বিভিন্ন প্রজাতির বড় বড় ফলদ ও বনজ গাছ রয়েছে। ওই গাছের নিচে কোনো চারা রোপণ করলেও বেড়ে ওঠার সুযোগ নেই।
জেলেরা তাদের রোহিঙ্গাদের সঙ্গে তুলনা করে পুনর্বাসনের দাবি করে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে ২২ পরিবারের জীবন যাপন নিশ্চিত করার আশা ব্যক্ত করেন।
এ বিষয়ে মহিপুর বন কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘বনায়ন করার আদেশ রয়েছে এবং বিভিন্ন জায়গায় বৃক্ষ কর্মসূচি চলছে। জেলে পরিবারদের লিখিত নোটিশ দেওয়া হয়নি, তবে মৌখিকভাবে অনেকবার জায়গা ছেড়ে দিতে বলা হয়েছে।’