বরগুনায় অতিজোয়ারে ভেঙেছে বাঁধ, তলিয়ে গেছে ঘরবাড়ি
ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে বরগুনায় জোয়ারের উচ্চতা ছিল অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। এতে জেলার তিনটি উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের বেড়িবাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেছে অর্ধশতাধিক গ্রাম। এতে তলিয়েছে শত শত ঘরবাড়ি, মাছের ঘের ও ফসলের ক্ষেত।
অন্যদিকে, অতি জোয়ারের স্রোতে এনামুল নামের তিন বছরের একটি শিশু মায়ের কোল থেকে পড়ে পানিতে তলিয়ে গেলে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনার কিছুক্ষণ পরই তার মৃতদেহ উদ্ধার করে স্থানীয়রা। আজ বুধবার সকাল ১১টার দিকে বরগুনার বেতাগী উপজেলার সরিষামুড়ি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
দুর্যোগ মৌসুমের শুরুতেই জোয়ারের এই উচ্চতা নিয়ে এখন আতঙ্কে রয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ গ্রামাঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ। এরই মধ্যেই গত দুদিনের জোয়ারের পানিতে কয়েক হাজার পরিবারের রান্নাঘর ও প্রয়োজনীয় আসবাবপত্রসহ গেরস্থালির অতি জরুরি আসবাবপত্র পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। এতে অনেক পরিবারেই এখন রান্না চলছে না। চরম ভোগান্তিতে এখন নারী, শিশুসহ বয়স্ক মানুষ।
২০০৭ সালের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সিডরের সময়ও যেসব এলাকায় জোয়ারের পানি ওঠেনি, আজকের ইয়াসের প্রভাবে অতিজোয়ারের কারণে সেসব এলাকায়ও পানি ঢুকে পড়েছে। জরুরি ভিত্তিতে এ অঞ্চলের বেড়িবাঁধের উচ্চতা বৃদ্ধি করা না হলে যেকোনো সময় সিডরের চেয়েও বড় কোনো ক্ষতির সন্মুখীন হতে পারে মানুষ।
বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ভরা পূর্ণিমার পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে বরগুনার প্রধান তিনটি নদী বিষখালী, পায়রা ও বলেশ্বরে বিপৎসীমার ১২৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে জোয়ারের পানি প্রবাহিত হয়েছে।
এলাকাবাসী ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, জেলার ছয়টি উপজেলায় ২২টি পোল্ডারে মোট ৮০৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। যার মধ্যে ৫০০ কিলোমিটার বাঁধই প্রয়োজনের তুলনায় নিচু। এ ছাড়া নদী ও সাগরতীরবর্তী বিভিন্ন এলাকার ৩০ থেকে ৪০টি স্থানের বেড়িবাঁধ আগে থেকেই চরম নাজুক অবস্থায় ছিল। এবারের জোয়ারের তীব্রতায় সেসব বেড়িবাঁধ ভেঙে তলিয়ে যায় গ্রামের পর গ্রাম।
বরগুনার পানি উনয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী কায়সার আলম জানান, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের কারণে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ মেরামতের জন্য একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। এ ছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ দ্রুত মেরামতের বিষয়ে এরই মধ্যেই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। দ্রুতই এ বিষয়ে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
বরগুনার জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান জানান, অতিজোয়ারের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত অতি দরিদ্র পরিবারে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিতে এরই মধ্যেই জেলার ৪২টি ইউনিয়ন ও চারটি পৌরসভার প্রতিটিতে তাৎক্ষণিকভাবে ২৫ হাজার করে টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আরও ৫৫ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। চলছে ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ ও ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রণয়নের কাজও।