বরিশালের মহাশ্মশানে দিপালী উৎসব বুধবার
উপমহাদেশের বৃহত্তম বরিশাল মহাশ্মশানে চলছে দিপালী উৎসবের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। মৃত স্বজনদের সমাধি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে বহু মানুষকে। এদিকে, সুষ্ঠুভাবে বৃহৎ এই শ্মশান দিপালী উৎসব পালনে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছে শ্মশান কমিটি।
আগামীকাল বুধবার দিপালী উৎসব অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বরিশাল মহাশ্মশানে। প্রায় দুইশ বছরের অধিক সময় ধরে চলা এই শ্মশান দিপালী উৎসব এবারেও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্যে দিয়ে উদযাপিত হবে। মোমবাতি ও প্রদীপের আলোয় আলোকিত হয়ে উঠবে পুরো মহাশ্মশান এলাকা।
গতকাল সোমবার দুপুরে বরিশাল মহাশ্মশান ঘুরে দেখা যায়, মৃত স্বজনের সমাধিতে কেউ রঙ করছেন, কেউ বা মাটির সমাধি সংস্কার করছেন আবার অনেকে ধোয়ামোছার কাজ করতে দেখা গেছে।
বরিশাল মহাশ্মশান রক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক তমাল মালাকার বলেন, ‘২০০ বছরের অধিক সময় ধরে চলা এই মহাশ্মশানে দিপালী উৎসব এবারও অনাড়ম্বর পরিবেশে পালিত হবে। এখানে কাঁচা পাকা সমাধি মিলিয়ে প্রায় ৬৫ হাজার সমাধি রয়েছে। এছাড়াও প্রায় ৯০০ সমাধি রয়েছে, যাদের স্বজনরা এদেশে থাকে না। সেইসব সমাধিগুলোকে হলুদ রঙ দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে। পাশাপাশি এসব সমাধিগুলোতে কমিটির উদ্যোগে দিপালী উৎসবের দিন সন্ধ্যায় মোমবাতি, ধূপকাঠি ও প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করা হবে।’
তমাল বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি মানাতে আমার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। শ্মশানের মূল ফটকেই হ্যান্ড স্যানিটাইজের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া সবাইকে বাধ্যতামূলকভাবে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে শ্মশানে অবস্থান ও মাস্ক পরিধান করে শ্মশানে প্রবেশের জন্য কড়াকড়ি থাকবে।
বরিশাল মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সহসভাপতি গোপাল সাহা বলেন, ‘এশিয়ার মধ্যে সর্ববৃহৎ দিপালী উৎসব এখানেই হয়ে থাকে। ভারত ও নেপালসহ বহু দেশ থেকে মানুষ এখানে আসে মৃত স্বজনদের স্মরণে। দিপালী উৎসবের দিন আলোয় আলোকিত হয়ে ওঠে মহাশ্মশান। এরই মধ্যে সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে সিটি মেয়র, পুলিশ কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের বৈঠক হয়েছে। তারা সর্বাত্মক সহযোগিতার কথা আমাদের জানিয়েছেন।
প্রসঙ্গত ৫ একর ৯৬ শতাংশের এই বরিশাল মহাশ্মশানে প্রতি বছর শ্মশান দিপালী উৎসবে লাখ লাখ মানুষের সমাগম হয়। কেউ উৎসব দেখতে আসেন আবার কেউ স্বজনের সমাধিতে মোমবাতি, প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করেন ও মৃত স্বজনের প্রিয় খাদ্য দিয়ে স্মরণ এবং আত্মার শান্তি কামনা করেন। প্রকৃতির কবি জীবনানন্দ দাশের পিতা সত্যানন্দ দাশগুপ্ত, পিতামহ সর্বানন্দ দাশগুপ্ত, ব্রিটিশবিরোধী নেতা বিপ্লবী দেবেন ঘোষ, মনোরমা বসু মাসিমাসহ বহু খ্যাতিমান মানুষের সমাধি রয়েছে এই মহাশ্মশানে।