বর্ষার আগমনে ভৈরবে নৌকা তৈরির ধুম
বর্ষার আগমনে কিশোরগঞ্জের ভৈরবের বিভিন্ন এলাকায় নৌকা তৈরির ধুম পড়েছে। কারিগর, ব্যবসায়ী আর ক্রেতাদের ভীড়ে মুখরিত হয়ে উঠেছে নৌকা তৈরির এলাকাগুলো। অপেক্ষাকৃত কম দামে ভালোমানের এসব নৌকা স্থানীয় ক্রেতাদের পাশাপাশি কুলিয়ারচর, বাজিতপুর, কটিয়াদী, রায়পুরা, বেলাবো, আশুগঞ্জ, সরাইল উপজেলায় বিক্রি করা হচ্ছে।
জানা যায়, ভৈরব শহরের কিছু অংশ বাদে সমগ্র এলাকাটিই গ্রামাঞ্চল। হাওর ও ভাটি এলাকার প্রবেশমুখ হিসেবে পরিচিত ভৈরব। মেঘনা-ব্রহ্মপুত্র বিধৌত ভৈরবের বাসিন্দাদের বর্ষাকালে নৌকা ছাড়া আর কোনো বাহন থাকে না। তখন তাদের অতিপ্রয়োজনীয় বাহন বিভিন্ন কোসা ও ডিঙি নৌকা। পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এলাকার পথঘাট যখন তলিয়ে যায়, তখন নৌকা ছাড়া তাদের যাতায়াতের আর কোনো বিকল্প ব্যবস্থা থাকে না। এমনকি এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়িতে যেতে হলেও নৌকা ছাড়া সম্ভব হয়ে ওঠে না।
বর্ষা মৌসুমে গ্রামাঞ্চলের বেশিরভাগ মানুষ নদীনালা থেকে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে। মাছ ধরতে এসব নৌকার প্রয়োজন হয়। ফলে এ সময় নৌকার চাহিদা বেড়ে যায় বহুগুণ। অতিপ্রয়োজনীয় সেই বাহনটির চাহিদা মেটানোর কাজে নিয়োজিতদের এখন যেন ফুসরত নেই। রাতদিন চলছে নৌকা তৈরির কাজ। ব্যবসাটি মৌসুমি হলেও, লাভজনক বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
নৌকা তৈরির মহাজন লিয়াকত আলী, মাসুম মিয়া ও আক্তার হোসেন জানান, তারা তাদের দোকানে কারিগর রেখে প্রতি মৌসুমে গড়ে দেড় হাজার নৌকা তৈরি করেন। ভালো দামে বিক্রিও হয় এসব নৌকা। যে বছর বৃষ্টিপাত বেশি এবং এলাকায় পানি বেশি উঠে, সে বছর নৌকার চাহিদা থাকে বেশি।
এখানকার প্রতিটি নৌকা আকার ও কাঠের প্রকারভেদে তিন হাজার থেকে আট হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। এ নৌকাগুলো অন্যসব এলাকায় তৈরি নৌকার থেকে দামে সস্তা এবং মজবুত হওয়ায় আশপাশের একাধিক জেলা-উপজেলার ক্রেতারা আসেন এখানে। অনেকে পাইকারি নৌকা কেনেন এখান থেকে।
নৌকা তৈরির কাজের সঙ্গে জড়িত আছেন শিমূলকান্দি বাজারের কুদ্দুছ মিয়া। তিনি জানান, তারা একেকজন কারিগর আকারভেদে প্রতিদিন এক থেকে দেড়টা নৌকা তৈরি করতে পারেন। প্রতিটি নৌকা তৈরিতে মজুরি পান ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা। প্রতি মৌসুমে কেউ কেউ ৫০ থেকে ৬০টিরও বেশি নৌকা তৈরি করতে পারেন। কাজের চাহিদা থাকায় প্রাপ্য মজুরিতে বেশ চলে তাদের সংসার। একই অভিমত অন্যান্যদেরও।
নৌকার ক্রেতা পাঁচঘর হাঁটি গ্রামের মো. নাছির উদ্দিন, লুন্দিয়া গ্রামের একবর মিয়া ও শ্যামপুরের নিতাই চন্দ্র জানান, বর্ষায় তাদের গ্রামগুলো মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেন একেকটা দ্বীপে পরিণত হয়। তখন এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রাম এমনকি এক বাড়ি থেকে আরেক বাড়ি যেতে হলেও নৌকার দরকার হয়। এ ছাড়া মাছধরা, হাট-বাজারে যাতায়াত বা গবাদিপশুর জন্য ঘাস কাটতে নৌকার বিকল্প নেই।
ক্রেতারা জানালেন, শহুরে ধনীরা যেমন ব্যক্তিগত প্রাইভেটকার ব্যবহার করেন, তেমনি বর্ষায় গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে নিজস্ব বাহণ হিসেবে এসব নৌকাগুলো প্রাইভেটকারের মতোই ব্যবহার হয়। গুণগতমান ভালো এবং দামেও সাশ্রয়ী হওয়ায় ভৈরবের নৌকার কদর ছড়িয়ে পড়ছে দিনকে দিন।