বশেমুরবিপ্রবির শিক্ষার্থী ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেপ্তার ১০
গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) শিক্ষার্থীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় র্যাব ও পুলিশ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাছাড়া ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর মেডিকেল পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে।
অপরদিকে ধর্ষকদের গ্রেপ্তার, সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিসহ চার দাবিতে দ্বিতীয় দিনের অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে শিক্ষার্থীরা। আজ শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে সংবাদ-সম্মেলনে আন্দোলনকারীরা তাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের সড়কে শিক্ষক সমিতির ব্যানারে অনুষ্ঠিত হয় মানববন্ধন। শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ-মিছিল শেষে মানববন্ধনে যোগ দেয়। সেখানে অনুষ্ঠিত সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ কয়েকজন শিক্ষক।
অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. কামরুজ্জামান বলেন, ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধের সুষ্ঠু বিচার না হলে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে।
ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. রাজিউর রহমান বলেন, যেসব শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসের বাইরে থাকছে, তাদের দ্রæত আবাসন ব্যবস্থা করার পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
জাতির পিতার পূণ্যভূমিতে যে ঘটনা ঘটেছে, তা সবার জন্যই দুঃখজনক উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এ কিউ এম মাহবুব বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সঙ্গে এ ধরনের ঘটনা এটিই প্রথম। আশা করি এটাই শেষ হবে। আমরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করেছি। আশা করি দ্রæত সুষ্ঠু বিচার পাব। শিগগিরই আমরা স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসব, যাতে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়।
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা চোখে কালো কাপড় বেঁধে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে মৌন প্রতিবাদ ও ধর্ষকদের প্রতীকী ফাঁসির আয়োজন করে। বিকেল ৫টায় ধর্ষকদের ফাঁসি চাই স্লোগান নিয়ে হলের আবাসিক ছাত্রীদের একটি বিক্ষোভ-মিছিল ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় মোমবাতি জ্বালিয়ে অনুষ্ঠিত হয় আলোর মিছিল।
উল্লেখ্য, ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের তিন দিনের আন্দোলন ও প্রশাসনের দেওয়া আশ্বাসের ২৪ ঘণ্টা সময়সীমা পার হওয়ার পর গতকাল শুক্রবার বিকেল ৪টা থেকে ৪ দফা দাবি নিয়ে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করে। আজ সকাল ৭টায় জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে অবস্থান কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনের কার্যক্রম শুরু করে।
এদিকে, ধর্ষণের শিকার বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই শিক্ষার্থীর ডাক্তারি পরীক্ষা শেষ হয়েছে। শনিবার দুপুরে গঠিত তিন সদস্যের ফরেনসিক মেডিক্যাল বোর্ড ডাক্তারি প্রতিবেদন পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে। ওই শিক্ষার্থীকে নির্যাতনে চিহ্ন পাওয়া গেছে মন্তব্য করে মেডিক্যাল বোর্ডের প্রধান গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. অসিত কুমার মল্লিক জানিয়েছেন, গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. ফারিয়া জামান ও ডা. রেহানা সুলতানা কনাকে নিয়ে তিনি ওই শিক্ষার্থীর পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন করেছেন।
ধর্ষণের ঘটনায় এ পর্যন্ত গোপালগঞ্জ সদর থানার পুলিশ পিয়াস সিকদার (২৪), অন্তর (২২), জীবন (২২) ও ফরিদ (২৬) নামে চার যুবককে গ্রেপ্তার করেছে। এ ছাড়া র্যাব গোপালগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে। আজ দুপুরে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ছয়জনের নাম প্রকাশ করা হয়। এরা হলেন রাকিব ওরফে ইমন (২২), পিয়াস ফকির (২৬), মো. হেলাল (২৪), প্রদীপ বিশ্বাস (২৪), মো. নাহিদ রায়হান (২৪) ও তুর্য মোহন্ত (২৬)।