বাকশাল সামরিক শাসনের চেয়েও খারাপ : ড. মঈন খান
বাকশাল সামরিক শাসনের চেয়েও খারাপ মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেছেন, আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে ‘পাওয়ার লাইজ ইন দ্য ব্যাটল অব দ্য গান’ অর্থাৎ তারা বন্দুকের শাসনে বিশ্বাসী। সেজন্যই তারা আমাদের ৫ জন মানুষকে গুলি করে হত্যা করেছে। দেশের এখন ক্রান্তিকাল চলছে।
রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আজ সোমবার দুপুরে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
ড. আবদুল মঈন খান বলেন, স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পরেও এমন পরিস্থিতি হবে এটা কল্পনাতীত। প্রত্যাশা ছিল জাতি স্থিতিশীল অবস্থায় থাকবে। কিন্তু তা হয়নি। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার। তার সম্পর্কে নতুন প্রজন্মকে আরও বেশি জানতে হবে। তিনি ভোর থেকে রাত পর্যন্ত কাজ করতেন। হাটে মাঠে ঘাটে সারা দিন তিনি ঘুরে বেরিয়েছেন। কখনো কখনো সারা রাত জেগে কাজ করতেন। দেশ ঘুরে ঘুরে কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নের জন্য খাল কেটেছেন। এজন্য তাকে দেশের মানুষ উপাধি দিয়েছিল বাংলার রাখাল রাজা।
জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের (জেডআরএফ) ২৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়। ১৯৯৯ সালের ১৮ অক্টোবর জেডআরএফ প্রতিষ্ঠিত হয়। এতে ভার্চুয়ালি বক্তব্য দেন সংগঠনের প্রেসিডেন্ট তারেক রহমান। জেডআরএফ প্রতিষ্ঠার পর থেকে যেসব মানবসেবামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছে, তার একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি অনুষ্ঠানে প্রদর্শন করা হয়।
ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, জিয়াউর রহমান একজন অসীম ক্ষমতাধর প্রেসিডেন্ট, যার কথায় দেশ চলতো। সেই ব্যক্তি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সাথে পরামর্শ করেছিলেন দেশের এনার্জি পলিসি নিয়ে। এরপর তিনি দেশে সর্বপ্রথম মুক্তবাজার অর্থনীতি চালু করছিলেন। যার ফলশ্রুতি আজকে বাংলাদেশের সমৃদ্ধ অর্থনীতি। আর আওয়ামী লীগ এটা নিয়ে গলা ফাটিয়ে দিচ্ছে। তারা ৪২ বিলিয়ন রিজার্ভ নিয়ে গর্ব করে। এসব কোত্থেকে এসেছে। এগুলো এসেছে গার্মেন্টস থেকে। এর গোড়াপত্তন করেছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। যিনি গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠার জন্য বাংলাদেশ থেকে একটি টিম জার্মানিতে পাঠিয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছিলেন। ফলে ‘দেশ গার্মেন্ট’স নামে প্রথম গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশে। যার হাত ধরে আজকে দেশে অসংখ্য গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এইসব হলো শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের অবদান।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বিশ্বে বাংলাদেশের পরিচিতি তুলে ধরার জন্য বৈদেশিক নীতিতে আমূল পরিবর্তন করেন জিয়াউর রহমান। তার সাহসী নেতৃত্বে বাংলাদেশ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে প্রথম সদস্য হয়েছিল। মধ্যপ্রাচ্যে সংকট সমাধানে আল কুদস কমিটির সদস্য ছিল বাংলাদেশ। তিনি দেশের মানুষকে স্বাক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন।
সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, বিশ্বের বহু দেশে সামরিক শাসন জারি করে সেনাবাহিনী। বাংলাদেশে সামরিক শাসন জারি করে গণতন্ত্রকে বিএনপি ধ্বংস করেনি বরং আওয়ামী লীগ করেছিল। তারা সংসদে বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিল। এটা সামরিক শাসনের চেয়েও খারাপ। আর জিয়াউর রহমান সামরিক শাসন জারি করে দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন- ‘জনগণই ক্ষমতার উৎস’। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া নিজেও সেই ধারা অব্যাহত রেখেছিলেন। এরপর বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ওপর নানা ঘটনা ঘটেছে। এখন তো দেশে গণতন্ত্রকে কবর দেওয়া হয়েছে। আমরা আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে আন্দোলনে আছি। বিএনপি ক্ষমতা ও অর্থনীতির জন্য রাজনীতি করে না। আমরা দেশের মানুষের জন্য রাজনীতি করি। যা আমাদের শিখিয়েছেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। কারণ ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়।
ড. মঈন খান বলেন, আজকে দেশ নাকি বিদ্যুতের উৎপাদনে ভেসে যাচ্ছে। তাহলে কেনো এতো লোডশেডিং? তো এতো বিদ্যুৎ গেলো কোথায়? সরকারের জ্বালানি উপদেষ্টা কেনো বললেন, দিনের বেলা বাতি বন্ধ করতে হবে? বাংলাদেশ নাকি বিদ্যুতে স্বয়ংসম্পন্ন? হাতিরঝিলে বিদ্যুৎ উৎপাদন নিয়ে উৎসব পালন করা হয়েছিল! তো এতো বিদ্যুৎ গেলো কোথায়?
জেডআরএফের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনারের সভাপতিত্বে ও প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. আবুল হাসনাত মোহাম্মদ শামীম ও ব্যারিস্টার মীর হেলালের পরিচালনায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, অধ্যাপক ডা. সিরাজ উদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভুঁইয়া, মোস্তফা কামাল মজুমদার ও রিয়াজুল ইসলাম রিজু, ডা. পারভেজ রেজা কাকন, যুবদলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু ও আব্দুল মোনায়েম মুন্না প্রমুখ।