বাঘের আক্রমণে ২১ দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে মারা গেলেন অনুকূল
বাঘের আক্রমণের শিকার হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে টানা ২১দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে অবশেষে মারা গেছেন জেলে অনুকূল গায়েন।
গতকাল শুক্রবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) রাত ৯টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে মৃত্যু হয় তার। আজ শনিবার সকালে তার মরদেহ আমুরবুনিয়ার বাড়িতে এসে পৌঁছায়। তারপর বেলা সোয়া ১১টার দিকে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।
সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগের জিউধারা ষ্টেশন (মোংলা) কর্মকর্তা মো. শাহজাহান জানান, গত ২৭ জানুয়ারি সুন্দরবনে সুদীরেরচিলা খালে মাছ ধরতে গিয়ে বাঘের আক্রমণের শিকার হন বন সংলগ্ন আমুরবুনিয়া গ্রামের জেলে অনুকূল গায়েন (৩০)। এরপর তাকে উদ্ধার করে প্রথমে মোড়েলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তারপর খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। খুলনা থেকে ঘটনার দিনই পাঠানো হয়েছিলো ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে টানা ২১দিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার রাতে তার মৃত্যু হয়।
অনুকুল গায়েন আমুরবুনিয়া গ্রামের মৃত মুকুন্দ গায়েনের ছেলে। ১৫ বছর আগে মুকুন্দ গায়েন ছেলে অনুকূল ও তার স্ত্রীকে রেখে মারা যান। পিতার মৃত্যুর পর অনুকূল বিছানাশায়ী বৃদ্ধা মাকে নিয়ে জীবনযাপন করে আসছিলেন। মা-ছেলের সংসারে সুন্দরবনে মাছ ধরে জীবিকা চলতো অনুকূলের পরিবারের। বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন ছেলেকে হারিয়ে পাগলপ্রায় মা।
বন কর্মকর্তা শাহজাহান বলেন, ‘মাছ ধরতে গেলে বাঘের আক্রমণে অনুকুলের পিঠের বাম পাঁজরের হাড় ভেঙ্গে পেটের নাড়ী বের হয়ে যায়। পরে গামছা দিয়ে বেঁধে নেয়া হয়েছিল হাসপাতালে। চিকিৎসার অনেক চেষ্টার পরও তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। শুক্রবার রাতে মারা যান অনুকূল।’
এদিকে বাঘের আক্রমণে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকাকালে অসহায় অনুকূলের পরিবারকে মানবিক কারণে নতুন একটি ঘর করে দেন যমুনা টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি মহসিন উল হাকিম। ১৪ ফেব্রুয়ারি নতুন সেই ঘর অনুকুলের মাকে বুঝিয়ে দেয়া হয়, অনুকূলের জীবিকার জন্য দেয়া হয়েছিলো একটি ইজিবাইকও। কিন্তু ফিরে এসে নতুন ঘরে বসবাস ও ইজিবাইক চালিয়ে রোজগারের সুযোগও পায়নি অনুকূল। ছেলে ছাড়া আপন বলতে কেউ আর নেই মার। তাই, কে অনুকুলের শয্যাশায়ী মাকে দেখবেন, আর কে চালাবেন ইজিবাইক, কিভাবে চলবে মায়ের জীবন? এসব বলে প্রলাপ করছেন অনুকূলের নিকটতম প্রতিবেশীরা।
অপরদিকে বাঘের আক্রমণে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে নিহত অনুকূলের পরিবারকে বনবিভাগের পক্ষ থেকে সরকারি অনুদান প্রদানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বন কর্মকর্তা মো. শাহজাহান।