বান্দরবানে পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি, নির্মাণাধীন টানেল এখন মৃত্যুফাঁদ
বান্দরবানে সাড়ে পাঁচশ ফুট দীর্ঘ টানেল নির্মাণের জন্য কাটা হচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ বিশাল পাহাড়। এস্কেভেটর দিয়ে অপরিকল্পিত পাহাড় কেটে বিক্রি করা হচ্ছে মাটি। যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ এবং সৌন্দর্য বর্ধণের জন্য নির্মাণাধীন টানেলটি স্থানীয়দের মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, একটি এস্কেভেটর দিয়ে কাটা হচ্ছে বিশাল পাহাড়। সেই মাটিগুলো বিক্রি করা হচ্ছে নিচু জমি এবং জলাশয় ভরাটের জন্য। ডাম্পার ট্রাকে করে মাটিগুলো নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। অপরিকল্পিতভাবে পাহাড় কাটার কারণে টানেলের পার্শ্ববর্তী সাঙ্গু হাইস্কুলের শিক্ষার্থী, অভিভাবকদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে বিদ্যালয় ভবনসহ আশপাশের ঘরবাড়ি।
পথচারী জর্ডান ম্রো ও জানে আলম অভিযোগ করে বলেন, পাহাড়টি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। নির্মাণ কাজের ধীরগতি এবং অপরিকল্পিত পাহাড় কাটার কারণে নির্মাণাধীন টানেলটি মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। বৃষ্টিতে পাহাড় ধসে টানেলের পেছনের অংশ মাটিতে ঢেকে গেছে। দুর্ঘটনা এড়াতে বাসস্ট্যান্ডের প্রবেশমুখে টিন দিয়ে পথটি আটকে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পার্শ্ববর্তী সাঙ্গু উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও লোকজন ঘেরাও টপকে ঠিকই চলাচল করছে।
পাহাড়ের মাটিকাটার ঠিকাদার মোহাম্মদ ভুট্টো বলেন, ‘টানেলের বাকি অংশ নির্মাণের কাজ করা হবে। এ জন্য পাঁচ লাখ টাকায় পাহাড়ের মাটি কাটার কন্ট্রাক্ট নিয়েছি। পাহাড় কাটা মাটিগুলো বিক্রি করে কিছুটা মুনাফার আশা করছি। নয়তো বৃষ্টিতে পাহাড় ভেঙে যে পরিমাণ মাটি পড়েছে, সেগুলো সরাতে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হবে।’
নির্মাণ কাজের ঠিকাদার জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য রাজু বড়ুয়া বলেন, ‘টানেল নির্মাণ কাজের জন্য পাঁচ লাখ টাকায় পাহাড়ের মাটি কাটার কন্ট্রাক্ট দিয়েছি। বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড থেকে আমাদের পাহাড় কাটার অনুমোদন দিয়েছেন। ইতোমধ্যে টানেলের প্রথমধাপের কাজ সম্পন্ন হয়েছে।’
পরিবেশ অধিদপ্তরের বান্দরবান জেলা পরিদর্শক আব্দুর সালাম বলেন, ‘পাহাড় কাটার অনুমোদনের জন্য একটি আবেদন করা হয়েছে। আবেদনটি আমরা সংশ্লিষ্ট দপ্তরের উর্ধ্বতনের কাছে পাঠিয়েছি।’
প্রকৌশল বিভাগ সূত্র জানায়, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে ১০ কোটি ২৫ লাখ টাকায় সাড়ে পাঁচশ ফুটের দীর্ঘ টানেল, প্রতিরক্ষা দেওয়াল, ড্রেইনসহ সৌন্দর্য বর্ধণের নির্মাণ কাজটি করা হচ্ছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স এম এম ট্রেডার্সের নামে রাজু বড়ুয়াসহ স্থানীয় একটি ঠিকাদার গ্রুপ কাজটি বাস্তবায়নের আদেশ পায়। ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে টানেল নির্মাণ কাজটি শুরু হয়। মূলত পুরনো বাসস্ট্যান্ড থেকে নতুন পৌর বাস টার্মিনালে যাওয়ার জন্য বিকল্প রাস্তা হিসেবে টানেলটি নির্মিত হচ্ছে। যদিও টানেল হয়ে রুমা ও থানচি দুটি উপজেলা এবং জেলা সদরের হাফেজঘোণা এলাকার মানুষের চলাচলের সুবিধাও হবে। এ টানেলটি চালু হলে সাধারণ জনগণের দুর্ভোগ কমবে। বান্দরবান বাসস্ট্যান্ডটি অনেকটা যানজটমুক্ত হবে।’
এ বিষয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড বান্দরবান ইউনিটের নির্বাহী প্রকৌশলী এ বি মোহাম্মদ ইয়াসির আরাফাত জানান, দুই দফায় মোট ১০ কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রায় সাড়ে ৫০০ ফুট টানেলটি নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রথম দফায় ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে পাঁচ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়, তখন টানেলটি ৩০০ ফুট দীর্ঘ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পরে তা সংশোধন করে টানেলটি আরও বাড়িয়ে প্রায় সাড়ে ৫০০ ফুট লম্বা করে আরও পাঁচ কোটি ২৫ লাখ টাকা বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। টানেলটি যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ছাড়াও পর্যটন শহর বান্দরবানের সৌন্দর্য বৃদ্ধি এবং ভ্রমণকারীদের জন্য একটি বিনোদনের মাধ্যমও হবে।