বান্দরবানে ৮ জনের মরদেহ উদ্ধার
পাহাড়ে আধিপাত্য বিস্তারের দ্বন্দ্বে বান্দরবানের রোয়াংছড়িতে সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের মধ্যে গোলাগুলি হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে আট জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ভয়ে আতঙ্কে গ্রাম ছেড়ে রোয়াংছড়ি সদরে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছে ১৭৮ গ্রামবাসী। আজ শুক্রবার (৭ এপ্রিল) দুপুরে খানতাম পাড়া এলাকা থেকে পুলিশ এসব মরদেহ উদ্ধার করেছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয়রা জানায়, রোয়াংছড়ি উপজেলার সদর ইউনিয়নের দুর্গম খানতাম পাড়া এলাকায় পাহাড়ে বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন কুকি চিন ন্যাশনাল আর্মির (কেএনএ) সঙ্গে সশস্ত্র সংগঠন ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক অস্ত্রধারীদের মধ্যে গোলাগুলি হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে এবং আজ সকালে কয়েকদফায় গোলাগুলির এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয় বাসিন্দাররা পাহাড়ের ঢালে আট জনের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেয়।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আট জনের মরদে উদ্ধার করেছে। নিহতদের মধ্যে সাত জন বম জনগোষ্ঠীর সদস্য বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্বীকার করেছে বম জনগোষ্ঠীর সশস্ত্র সংগঠন কেএনএ। এঁরা হলেন ভানদু বম (৩৫), সাংখুম বম (৪৫), সানফির থাং বম (২২), বয়ে রেম বম (১৭), জাহিম বম (৪০), লাল লিয়ান নাং বম (৪৪) এবং লালঠা জার বম (২৭)।
নিহত ব্যক্তিরা রোয়াংছড়ি উপজেলার জুরভারাং পাড়া এবং পানখিয়াং পাড়ার বাসিন্দা। অপরজনের নাম পরিচয় জানা যায়নি। কেএনএর দাবি, সরকারের মদদে অস্ত্রধারী সংগঠনের সশস্ত্র বাহিনী সাধারণ বম জনগোষ্ঠীদের মানুষকে হত্যা করেছে। তবে ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক সংগঠনের জেলা সাধারণ সম্পাদক উবামং মারমা বলেন, ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নয়। তাদের হাতে ভারি কোনো অস্ত্রশস্ত্রও নেই।
এদিকে সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনায় রোয়াংছড়ি ও রুমা উপজেলার অভ্যন্তরীণ সড়কের খানতামপাড়ার খেয়াং জনগোষ্ঠীর ৯০টি পরিবারের ১৭৮ জন নারী-পুরুষ, শিশু ভয়ে আতঙ্কে পালিয়ে রোয়াংছড়ি সদরে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছে। আশ্রয় গ্রহণকারীদের নিরাপত্তায় সেনাবাহিনী এবং পুলিশ ঘটনাস্থলের আশপাশের এলাকাগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে। আশ্রয় নেওয়া পরিবারগুলোকে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে খাবার এবং পানি সরবরাহ করা হচ্ছে।
আতঙ্কিত পাড়াবাসী সাথোয়াই খেয়াং, অংলে খেয়াং বলেন, ‘খানতাম পাড়াটি রোয়াংছড়ি ও রুমা দুটি উপজেলার মধ্যবর্তী এলাকা। পাড়ার পাশবর্তী পাহাড়ে বৃহস্পতিবার রাতে ও আজ সকালে বিকট শব্দে গোলাগুলি হয়েছে। গোলাগুলি কাদের মধ্যে হয়েছে জানি না। কিন্তু আমরা দুই পারের পাড়াবাসী ভয়ে আতঙ্কে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে রোয়াংছড়ি সদরে স্কুলে আশ্রয় নিয়েছি। ঘটনাস্থলে আট জনের মরদেহ পাওয়া গেছে। তাদের গায়ে জলপাই রঙের পোশাক ছিল।
রোয়াংছড়ির থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল মান্নান বলেন, সন্ত্রাসী দুটি গ্রুপের মধ্যে গোলাগুলি হয়েছে। ঘটনাস্থলে আট জনের মরদেহ পড়ে থাকার খবর পেয়ে তাদের মরদেহগুলো উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বান্দরবানের পুলিশ সুপার মো. তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘পাহাড়ের সশস্ত্র সন্ত্রাসী দুটি সংগঠনের মধ্যে গোলাগুলিতে আট জনের মৃত্যুর খবর পেয়েছি। আধিপাত্য বিস্তারের দ্বন্দ্বে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ঘটনাস্থলসহ আশপাশের এলাকাগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের মাধ্যমে গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও জনগণের নিরাপত্তায় কাজ করছে পুলিশ। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পরিস্থিতি মোকাবিলায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।