বাবুল আক্তার অনেক অভিযোগ স্বীকার করেছেন : তদন্ত কর্মকর্তা
সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তার তাঁর স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতু হত্যা মামলায় বাদী থেকে প্রধান আসামি হয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের ‘অনেক কিছুই’ তিনি স্বীকার করে নিয়েছেন বলে দাবি করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।
আজ শনিবার রাতে মিতু হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা এনটিভি অনলাইনের কাছে এই দাবি করেন।
এর আগে আজ শনিবার দুপুর ১টা ১০ মিনিটে চট্টগ্রাম থেকে ফেনীর কারাগারে স্থানান্তর করা হয় বাবুল আক্তারকে।
ফেনীর জেল সুপার মো. আনোয়ারুল করিম রাতে এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘অবস্থানগত কারণে ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে বাবুল আক্তারকে এখানে পাঠানো হয়েছে বলে আমরা শুনেছি।’
এর আগে গত ১২ মে বাবুল আক্তারকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে পাঠান চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত।
রিমান্ডের সময়ের কথা উল্লেখ করে তদন্ত কর্মকর্তা সন্তোষ চাকমা বলেন, ‘মিতু হত্যার বিষয়ে বাবুল আক্তারের বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো রয়েছে, সেসব অভিযোগের অনেক কিছুই তিনি আমার কাছে স্বীকার করে নিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে উঠা সব অভিযোগ নিয়ে তাঁর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে।’
তবে বাবুল আক্তার কী কী অভিযোগ স্বীকার করে নিয়েছেন তা তদন্ত কর্মকর্তা জানাতে অপরগতা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে বাবুল আক্তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে চেয়েছিলেন। পরে তাকে আমরা কোর্টে পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু পরে তিনি তাঁর সিদ্ধান্ত বদল করেছিলেন।’
এরপর সময় নিয়ে বাবুল আক্তারের ছেলেকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে জানিয়ে সন্তোষ কুমার চাকমা বলেন, ‘ধীরে ধীরে এ সংশ্লিষ্ট সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। প্রয়োজনে আসামিদের মুখোমুখি করা হবে।’
২০১৬ সালের ৫ জুন চট্টগ্রামের জিইসি মোড় এলাকার বাসার কাছে দুর্বত্তদের গুলি ও ছুরিকাঘাতে নিহত হয়েছিলেন বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু। চাঞ্চল্যকর এই হত্যার ঘটনায় বাবুল আক্তার বাদী হয়ে মামলা করলে পুলিশ নয়জনকে গ্রেপ্তার করে। এর মধ্যে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছেন রাশেদ ও নবী নামের দুই আসামি। পরে মামলাটি পিবিআই তদন্ত করে গত ১২ মে চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয়।
সেদিনই নিহত মিতুর বাবা মামলার বাদী বাবুল আক্তারকে প্রধান আসামি করে আটজনের বিরুদ্ধে নতুন করে মামলা করেন। যেখানে ঘটনার পরিকল্পানাকারী হিসেবে প্রধান আসামি করা হয়েছে বাবুল আক্তারকে। কক্সবাজারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের দায়িত্ব পালনকালে ভারতীয় এক এনজিওকর্মীর সঙ্গে পরকীয়ার জের ধরে পারিবারিক কলহ থেকে মিতুকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয় বলে অভিযোগ মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেনের।
মামলা করার পর সংবাদ সম্মেলনে বাদী মোশাররফ অভিযোগ করেন, বাবুল আক্তারের সঙ্গে এক এনজিওকর্মীর পরকীয়ার সম্পর্ক ছিল। বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় তাঁর মেয়ের সঙ্গে বাবুলের ঝগড়া হয়। মৃত্যুর আগে মিতু বিষয়টি তাঁদের জানিয়েছিলেন। পারিবারিকভাবে তাঁরা বিষয়টি সমাধানেরও চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সফল হননি। একপর্যায়ে বাবুল ও ওই নারী মিতুকে মেরে ফেলার হুমকি দেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
মামলায় বাবুলসহ আটজনকে আসামি করা হয়েছে। বাকি সাতজনের নাম আগের মামলায় পুলিশের তদন্তে এসেছিল। আসামিরা হলেন বাবুল আক্তার, কামরুল সিকদার মুসা, এহতেশামুল হক ভোলা, মোহাম্মদ ওয়াসিম, মোহাম্মদ আনোয়ার, মোহাম্মদ শাহজাহান, মোহাম্মদ সাজু ও মোহাম্মদ কালু।
মিতু হত্যার পর বাবুল মোশাররফের বাসায় ছিলেন। মামলা করতে দেরি কেন করলেন—এসব ব্যাপারে জানতে চাইলে মিতুর বাবা এনটিভি অনলাইনকে বলেছিলেন, বাবুলের বিষয়ে তিনি পরে নিশ্চিত হয়েছেন। একই ঘটনায় দুটি মামলা হয় না। পিপিআই চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়ার পরে তিনি মামলা করেছেন।