বাল্কহেডের ধাক্কায় ট্রলার যাত্রী নিহত, লঞ্চের ধাক্কায় নিখোঁজ ২
বরিশালের আড়িয়াল খাঁ নদে বাল্কহেডের ধাক্কায় খেয়া পারাপারের ট্রলার ডুবে এক যাত্রী নিহত হয়েছেন। অপরদিকে, কালাবদর নদে কুয়াশায় নিয়ন্ত্রণ হারানো লঞ্চের ধাক্কায় চারটি জেলে নৌকা ডুবে গেছে। এতে দুই জেলে নিখোঁজের খবর পাওয়া গেছে।
গতকাল রোববার (২৯ জানুয়ারি) রাতে এ দুটি ঘটনা ঘটে। নৌপুলিশ বাল্কহেডটি জব্দ করে পাঁচ কর্মচারীকে আটক করেছে। লঞ্চটিও পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। খেয়া পারাপারের ট্রলারের ওই যাত্রী ঘটনার সময় নিখোঁজ হন।
খেয়া পারাপারের ট্রলারের ওই নিখোঁজ বৃদ্ধ যাত্রীর সন্ধানে আজ সোমবার সকাল থেকে উদ্ধার অভিযান চালানো হয়। বেলা ১১টার দিকে গৌরনদী উপজেলার হোসনাবাদ লঞ্চঘাট এলাকা থেকে নিখোঁজ ওই বৃদ্ধর মরদেহ উদ্ধার করেন ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিরা।
নিহত ওই বৃদ্ধ যাত্রী মুলাদী উপজেলার সাহেবের চর এলাকার নান্নু বেপারী (৬০)। গৌরনদী ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার বিপুল হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
স্টেশন অফিসার জানান, আজ সোমবার সকাল থেকে নিখোঁজ যাত্রীর সন্ধানে উদ্ধার অভিযান চালানো হয়। বেলা ১১টার দিকে গৌরনদী উপজেলার হোসনাবাদ লঞ্চঘাট এলাকা থেকে নিখোঁজ নান্নু বেপারির মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
অপর দিকে, কালাবদর নদে কুয়াশায় নিয়ন্ত্রণ হারানো লঞ্চের ধাক্কায় চারটি জেলে নৌকা ডুবে গেছে। এতে দুই জেলে নিখোঁজের পর বিক্ষুব্ধ জেলে ও স্থানীয়রা লঞ্চ ভাঙচুর, কর্মচারীদের মারধর এবং মালামাল ও টাকা লুট করেছে বলে অভিযোগ করেছেন এমভি প্রিন্স অব রাসেল-৫ লঞ্চের সুপারভাইজার। বিক্ষুব্ধ জনতা নৌপুলিশের উপর চড়াও হওয়ারও চেষ্টা করে। আজ সোমবার ভোররাত থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত মেহেন্দিগঞ্জের চর শেফালী লঞ্চঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিখোঁজ দুই জেলে হলেন—উপজেলার বরজালিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. বাকীউল্লাহ সিকদার (৪০) ও একই ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামের বাকের মৃধা (৩৫)।
উলানিয়া নৌপুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মো. ফারুক হোসেন জানান, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা এমভি প্রিন্স অব রাসেল-৫ লঞ্চ চর শেফালী ঘাটে নোঙর করতে গিয়ে মাছ ধরার ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ধাক্কা দেয়। এতে চারটি নৌকা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে ডুবে যায়। এসব নৌকার বেশির ভাগ জেলে লাফিয়ে নদীতে পড়ে রক্ষা পেলেও দুজন নিখোঁজ হন। তাদের উদ্ধারে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিরা চেষ্টা করছেন।
ফারুক আরও জানান, ঘটনার পর উত্তেজিত জনতা লঞ্চের কর্মচারীদের মারধর, ভাঙচুর ও লুট করে। পরে স্থানীয় চেয়ারম্যান এসে জনতাকে শান্ত করেন। বর্তমানে লঞ্চ তাদের হেফাজতে রয়েছে। যাত্রীদের বিকল্প নৌযানে গন্তব্যে পাঠানো হয়েছে।
মেহেন্দিগঞ্জের জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কাদের ফরাজী বলেন, ‘লঞ্চের ধাক্কায় কয়েকটি জেলে নৌকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ সময় দুই জেলে নিখোঁজ হন। তাদের উদ্ধারে ডুবুরিরা তল্লাশি চালাচ্ছেন।’
এমভি প্রিন্স অব রাসেল লঞ্চের সুপারভাইজার সাইদুর রহমান জানান, গতকাল রোববার সন্ধ্যায় লঞ্চটি ঢাকা থেকে ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার উদ্দেশে রওনা হয়। আজ ভোর রাত ৩টার দিকে কালাবদর নদীতে পৌঁছালে ঘন কুয়াশার কারণে কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। তখন চরশেফালী লঞ্চঘাটে লঞ্চটি ভেড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন মাস্টার। এ সময় লঞ্চঘাটের চারপাশে জাল ফেলে জেলেরা পন্টুনের পাশে ছিল। লঞ্চঘাটে যাওয়ার সময় নদীতে ফেলা জালে লঞ্চের ডান পাশের পাখাটি আটকে যায়। বাম পাশের পাখা চালু থাকায় লঞ্চ ঘুরে পন্টুনের পাশে জেলে নৌকার ওপর উঠে যায়। এতে কয়েকটি নৌকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শুনেছি দুই জেলে নিখোঁজ রয়েছেন।
সুপারভাইজার সাইদুর অভিযোগ করেন, এরপর ৩০ থেকে ৪০ জন লাঠিসোটা নিয়ে লঞ্চে উঠে মাস্টার মজিবর রহমানকে বেধরকভাবে পেটায়। এ ছাড়া লঞ্চে ব্যাপক ভাঙচুর করে। তাঁকে রক্ষায় এগিয়ে গেলে স্টাফ মাসুদ ও ইলিয়াসকে বেধরকভাবে মারধর করে। একপর্যায়ে তাঁকে (সুপারভাইজার) ধরে নামিয়ে একটি ক্ষেতের মধ্যে নিয়ে বেধরকভাবে পিটিয়েছে। এ ছাড়া পাঁচ লাখ টাকা না দিলে তাঁকে জবাই করারও হুমকি দিয়েছে। লঞ্চের যাত্রীরা ৯৯৯-এ কল করলে পুলিশ এসে তাঁকে উদ্ধার করে। তিনি বর্তমানে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
এ ঘটনায় মামলার বিষয়টি মালিক, স্থানীয় চেয়ারম্যান ও পুলিশ বসে সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানান সাইদুর।