বাস-লঞ্চের ‘একচেটিয়া’ বর্ধিত ভাড়া প্রত্যাখ্যান যাত্রী কল্যাণ সমিতির
জ্বালানি তেলের বর্ধিত মূল্যের অধিক হারে মুনাফা লুটপাটের সুযোগ দিতে সরকার মালিকদের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী একচেটিয়াভাবে বাস ও লঞ্চের ভাড়া বৃদ্ধি করেছে বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। একই সঙ্গে গণপরিবহণের বর্ধিত ভাড়া প্রত্যাখ্যান করে একটি ন্যায্য ও গ্রহণযোগ্য বাস ও লঞ্চের ভাড়া নির্ধারণের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
আজ সোমবার সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় শিশু কল্যাণ পরিষদ মিলনায়তনে ‘যাত্রী স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে মালিক-শ্রমিক সরকার মিলেমিশে একচেটিয়াভাবে গণপরিবহণ ভাড়া বৃদ্ধি’র প্রতিবাদে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী এ দাবি জানান। সংগঠনের প্রচার সম্পাদক আনোয়ার হোসেনের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়।
মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর সব পক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে সহনীয় মাত্রায় ভাড়া বৃদ্ধি করা হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হলেও, এ ভাড়া বৃদ্ধির ক্ষেত্রে তার প্রতিফলন হয়নি। বাস ও লঞ্চ মালিকদের পাতানো ফাঁদে পা দিয়ে সরকার তাদের চাহিদা অনুযায়ী একচেটিয়া ভাড়া বাড়িয়ে দিতে যাত্রী প্রতিনিধি বাদ দিয়ে বাস ও লঞ্চের ভাড়া বৃদ্ধি করেছে। বিআরটিএ ও বিআইডব্লিউটিএ’র অনেকেই মালিকদের পকেটে ঢুকে পড়েছে।’
মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী আরও বলেন, ‘যাত্রীর স্বার্থ বিকিয়ে দিয়ে গলাকাটা ভাড়া নির্ধারণের ফলে দেশের নিম্ন ও মধ্য আয়ের জনসাধারণকে আরেক দফা গভীর সংকটে ঠেলে দিয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহানগরীতে যেভাবে বাস ভাড়া বাড়ানো হয়েছে, তা জুলুম বলা চলে। এখানে সিএনজি গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির পর একদফা ভাড়া বাড়ানো হয়েছিল, আবার তেলের মূল্য বৃদ্ধির পর আবার ভাড়া বাড়ানো হলো। এতে যাত্রী সাধারণ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলো। তাই, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহানগরীর বর্ধিত বাস ভাড়া কার্যকরের আগে এখানে কী পরিমাণ বাস গ্যাসে আর তেলে চলে, তার সুরাহা হওয়া দরকার। ভাড়া নির্ধারণের ব্যয় বিশ্লেষণে পুরোনো বাসকে নতুন বাস হিসেবে দেখানো হয়েছে। চালক-হেলপারদের বেতন, বোনাস প্রদানের মিথ্যা তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। ২০ বছরের পুরোনো বাসেও ব্যাংক লোন দেখানো হয়েছে। এভাবে নানা খাতে অযৌক্তিক ও অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি দেখিয়ে এক লাফে এক টাকা ৪২ পয়সার ভাড়া এক টাকা ৮০ পয়সা করা হয়েছে। সঠিক ব্যয় বিশ্লেষণ করলে বড়জোর এক টাকা ৬০ পয়সা নির্ধারণ করা যেত।’
যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘গত এক দশকে প্রভাবশালী মালিকদের নিয়ন্ত্রণে আমাদের নৌপথে বেশ কয়েকটি তিন-চার কোটি টাকা দামের লঞ্চ যাত্রীসেবার বহরে যুক্ত হয়েছে। এসব লঞ্চের দেড় থেকে দুই হাজার যাত্রী বহনের সক্ষমতা রয়েছে। এ ধরনের কোটি টাকার লঞ্চ চালাতে লাখ টাকা খরচ হয়। এ লঞ্চের সংখ্যা ২০ থেকে ৩০টির বেশি না হলেও ভাড়া নির্ধারণের ক্ষেত্রে এসব বড় লঞ্চের খরচকে ব্যয় বিশ্লেষণে এনে ভাড়া নির্ধারণ করে দেশের লাখ লাখ নৌকা, ডিঙি নৌকা, ও ছোট লঞ্চ, ট্রলারের ভাড়া বৃদ্ধি করার কারণে যাত্রীর স্বার্থ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে সাশ্রয়ী নৌপথের ভাড়া ক্রমে সড়ক পথের দ্বিগুণ হয়েছে। এই অন্যায্য ও অগ্রহণযোগ্য ভাড়া বাতিল করে দেড় থেকে দুই হাজার যাত্রী ধারণক্ষমতার বড় লঞ্চের ভাড়া কিলোমিটারপ্রতি এক টাকা ৮০ পয়সা এবং ছোট ছোট নৌকা, ডিঙি নৌকা, লঞ্চ, ট্রলার যাদের যাত্রীধারণ সক্ষমতা দেড়শ থেকে ৫০০ জন এবং পরিচালন ব্যয় কম। এসব নৌযানের ভাড়া এক টাকা ২০ পয়সা করার দাবি জানাচ্ছি।’
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়—নিবন্ধিত যাত্রী অধিকার প্রতিষ্ঠায় নিয়োজিত সংগঠন হিসেবে যাত্রী কল্যাণ সমিতিকে যাত্রীসাধারণের প্রতিনিধি হিসেবে বাস ও লঞ্চের ভাড়া নির্ধারণের ক্ষেত্রে বার্গেনিংয়ের সুযোগ দেওয়া হলে, এ ধরনের অবাস্তব একচেটিয়াভাবে ভাড়া বাড়ানো যায় না বলেই বাস-লঞ্চের জনস্বার্থের ভাড়া বৃদ্ধির ক্ষেত্রে মালিক-সরকার মিলেমিশে রূদ্ধদ্বার বৈঠকের আয়োজন করে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন সংগঠনের উপদেষ্ঠামণ্ডলীর সদস্য শরিফুজ্জামান শরিফ, সহ-সভাপতি তাওহীদুল হক লিটন, যুগ্ম মহাসচিব এম. মনিরুল হক, প্রচার সম্পাদক আনোয়ার হোসেন।