বিচার বিভাগের এ অবস্থা দেখলে বঙ্গবন্ধু কাঁদতেন : খায়রুল হক
বিচার বিভাগের সার্বিক অবস্থা তুলে ধরে আইন কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক বলেছেন, আমাদের উচ্চ আদালতের ট্র্যাক রেকর্ড খুব ভালো নয়। অথচ বঙ্গবন্ধু আজীবন আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করেছেন। বিচারকদের সুযোগ-সুবিধা ও সক্ষমতা বেড়েছে। অথচ বছরের পর বছর ধরে আদালতে মামলা ঝুলছে, নিষ্পত্তি হচ্ছে না। বিচার ব্যবস্থার এ অবস্থা দেখলে বঙ্গবন্ধু কাঁদতেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৬তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট আয়োজিত এক শোকসভায় সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক এসব কথা বলেন।
বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক। অন্যদের মধ্যে আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ার, সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল আলী আকবর, নিবন্ধন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক শহীদুল আলম ঝিনুক, আইন ও বিচার বিভাগের যুগ্ম সচিব বিকাশ কুমার সাহা ও যুগ্ম সচিব উম্মে কুলসুম, ইনস্টিটিউটের পরিচালক মো. গোলাম কিবরিয়া বঙ্গবন্ধুর জীবন আলেখ্য নিয়ে আলোচনা করেন।
সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক আরো বলেন, ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধের পর নবাব সিরাজউদ্দৌলা আর আসেননি। কিন্তু মীর জাফররা এসেছেন অসংখ্যবার। ১৯৭০ ও ৭১ সালে বাংলাদেশে নৌকা ও বঙ্গবন্ধু ছাড়া আর কিছুই ছিল না। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের আগেও বঙ্গবন্ধুর অসংখ্য ভক্ত ছিল। কিন্তু ১৫ আগস্টের পর কেউই প্রতিবাদও করেননি।
খায়রুল হক বলেন, ১৯৭৬ সালে লন্ডন থেকে দেশে ফিরে আমি কোথাও বঙ্গবন্ধু ও নৌকার নামও শুনতে পাইনি। পরিচিত একজনের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর বিষয়ে কথা বলতে গেলে তিনি এমন একটি ভান করলেন, মনে হলো ভীন গ্রহের কোনো এলিয়েনের কথা বলছি। অথচ বঙ্গবন্ধু আজীবন আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করেছেন। তিনি নিজেও বছরের পর বছর জেল খেটেছেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর এ বিচারটি পর্যন্ত একটি অধ্যাদেশ দিয়ে বন্ধ করে রাখা হয়েছিল। উচ্চ আদালত এ অধ্যাদেশের বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত দিয়েছিল, সেখানেও একজন বিচারপতি ভিন্নমত পোষণ করেছেন। মূলত আমাদের উচ্চ আদালতের ট্র্যাক রেকর্ড ভালো নয়।
বিচারাধীন কয়েকটি মামলার তথ্য তুলে ধরে সাবেক এ প্রধান বিচারপতি আরো বলেন, ১৯৫৭ সালে একটি মামলা দায়ের হয়েছে, এ মামলাটির এখনো চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়নি। এমন কতশত মামলা রয়েছে। একটি মামলায় একজন আসামি দীর্ঘ ১৮ বছর কনডেম সেলে থাকার পর খালাস পেলেন। এ লোকটির জীবনের ১৮ বছর এখন কে ফেরত দিবে? একজন সাংবাদিক আমার কাছে এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়েছেন। আমি তাকে কোনো জবাব দিতে পারিনি। অথচ আমাদের বিচার ব্যবস্থা ও বিচারকদের সব ধরনের সক্ষমতা ও সুযোগ-সুবিধা বেড়েছে।
আইন কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, আমরা যে যেখানেই রয়েছি নিজ নিজ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করাই হলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। বঙ্গবন্ধুর আত্মা শান্তি পাবে তখনই যখন আমরা দেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে পারব।