বিদ্যাদেবীর পূজায় করোনামুক্ত শিক্ষাঙ্গন প্রার্থনা
ঢাক-ঢোল-কাঁসর, শঙ্খ ও উলুধ্বনিতে শনিবার সকালে মুখরিত ছিল পুরান ঢাকাসহ রাজধানী ও সারা দেশের বিভিন্ন শিক্ষাঙ্গন। বিদ্যার দেবী সরস্বতীর আরাধনায় মশগুল ছিলেন ভক্তরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ শাঁখারি বাজার, লক্ষ্মীবাজারের বিভিন্ন গলিতে স্থাপন করা হয় মণ্ডপ। বাসাবাড়িতেও চলে দেবী সরস্বতীর পূজা-অর্চনা।
সনাতন শাস্ত্রমতে, প্রতি বছর মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের পঞ্চমী তিথিতে শ্বেতশুভ্র কল্যাণময়ী বিদ্যাদেবী সরস্বতীর বন্দনা করা হয়। ঐশ্বর্যদায়িনী, বুদ্ধিদায়িনী, জ্ঞানদায়িনী, সিদ্ধিদায়িনী, মোক্ষদায়িনী এবং শক্তির আধার হিসেবে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা সরস্বতী দেবীর আরাধনা করে থাকেন।
পুরাণ ঢাকায় পূজা-অর্চনা
হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব সরস্বতী পূজা উপলক্ষে পুরান ঢাকার বিভিন্ন স্থানে নেওয়া হয় নানা কর্মসূচি। পুরান ঢাকার শাঁখারিবাজারে অস্থায়ী মণ্ডপগুলো সাজানো হয়। মণ্ডপে দেবীকে অঞ্জলি দেন ভক্তরা। সন্ধ্যায় আলোকসজ্জিত মণ্ডপপ্রাঙ্গণে আয়োজন করা হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি পুরান ঢাকায় নানা সংগঠনের উদ্যোগে পূজা উদযাপন করা হয়। যদিও করোনার কারণে এবার সীমিত পরিসরে পূজার আয়োজন করা হয়েছে বলে জানান আয়োজক কমিটির সদস্যরা।
মণ্ডপগুলোতে সকালে শুরু হয় বাণী-অর্চনা। এ সময় ভক্তরা দেবীকে পুষ্পাঞ্জলি দেন। তারপর ভক্তদের মধ্যে অঞ্জলি ও প্রসাদ বিতরণ করা হয়।
ঢাবির জগন্নাথ হলে ভক্তদের ঢল
প্রতিবারই দর্শনার্থী ও ভক্তদের প্রধান আকর্ষণ থাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের পূজাকে কেন্দ্র করে। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে গত বছরের মতো এবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) জগন্নাথ হলে সীমিত পরিসরে সরস্বতী পূজার আয়োজন করা হয়। আজ শনিবার সকাল ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে অঞ্জলি দেওয়ার মধ্য দিয়ে পূজার কার্যক্রম শুরু হয়। সরস্বতী পূজায় ছিল ভক্তদের ঢল। যদিও তা অন্যবারের তুলনায় কম বলে জানান তাঁরা।
বিনয় কুমার রায় নামের এক দর্শনার্থী বলেন, ‘পরিবারের সবাই মিলে এসেছি। জগন্নাথ হলের পূজা অন্যান্য জায়গা থেকে একদম অন্যরকম লাগে। ভালো লাগছে।’
ইতি রাণী রায় নামে আরেক বিদার্থী বলেন, ‘এক সময় খুব জাঁকজমকভাবে পূজা উদযাপিত হতো। করোনার কারণে এবার তেমন আমেজ নেই। তারপরও ভালো লাগছে।’
জগন্নাথ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী প্রীতম সাহা বলেন, ‘জগন্নাথ হলের পুরোনো আমেজে সেই পূজা আবারও ফিরে আসবে বলে বিশ্বাস করি। দেবীর আশীর্বাদে এক সময় শিক্ষাঙ্গন আবার আগের মতো হতে ও করোনা থেকে মুক্তি পেতে প্রার্থনা করেছি।’
ঢাবি পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মিহির লাল সাহা বলেন, ‘সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে পূজা অর্চনা করছে। করোনার কারণে আমরা শুধু একটাই কেন্দ্র করেছি।’
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
সরস্বতী পূজা উপলক্ষে পুরান ঢাকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে এবার করোনার কারণে কেন্দ্রীয়ভাবে একটি মণ্ডপে পূজার আয়োজন করা হয়। আলোকসজ্জিত মণ্ডপে সকালে শুরু হয় বাণী-অর্চনা। এরপর ভক্তরা দেবীকে পুষ্পাঞ্জলি দেন। এ সময় ভক্তদের মধ্যে অঞ্জলি ও প্রসাদ বিতরণ করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক, প্রক্টর, শিক্ষক মণ্ডপ পরিদর্শন করেন। এ সময় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক বলেন, ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সাম্প্রদায়িকতার কোনো জায়গা নেই। করোনার কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পূজা উদযাপিত হচ্ছে।’