বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে নগরবাসীর হাঁসফাঁস
বর্তমান সময়ের জীবনযাত্রার সঙ্গে বিদ্যুতের সংযোগ নিরবিচ্ছিন্ন। বিদ্যুতহীন সময় কল্পনা মুশকিল। ঠিক তেমন একটি সময়ে জাতীয় গ্রিডে ত্রুটির কারণে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ বিপর্যয় দেখা দেয়। বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে ঢাকার সব এলাকা। এমন অবস্থায় কেটে যায় প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা। এতেই হাঁসফাঁস অবস্থা তৈরি হয় মানুষের মধ্যে।
এই যেমন, শাহিন ইসলামের অবস্থা বিবেচনায় নেওয়া যাক। তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। বিকেলে তাঁর অফিস শেষ হলেও বাসায় ফিরছিলেন না তিনি। তাঁর অফিসে জেনারেটর সিস্টেম চালু আছে। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত তিনি অফিসেই ছিলেন।
বাসায় না যাওয়ার কারণ হিসেবে শাহিন বললেন, ‘বাসায় প্রচণ্ড গরম। অন্যদিকে, বাইরেও গরম। সেজন্য যতক্ষণ বিদ্যুৎ না আসে, ততক্ষণ অফিসে কাটাব। কারণ, অফিসে জেনারেটরে আলো-বাতাস আছে।’ সর্বশেষ রাত ৮টার দিকে দু-এক স্থানে বিদ্যুৎ আসার খবর শুনে তিনি অফিস ত্যাগ করে বাসার উদ্দেশে রওনা দেন।
আজ মঙ্গলবার দুপুর ২টা ৫ মিনিটে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ বিপর্যয় ঘটে বলে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) সূত্রে জানা গেছে। প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা বিদ্যুতহীন ছিল রাজধানী।
রাজধানীর কাঁঠালবাগান এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, বিদ্যুৎ না থাকায় মানুষজন ঘর ছেড়ে বাইরের রাস্তায় এসে অবস্থান নেন। কেউ কেউ বাসার ছাদে অবস্থান নেন। সব মিলিয়ে এক হাঁসফাঁস অবস্থা চারিদিকে।
কাঁঠালবাগানের বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘কল্পনা করা যায় না এমন পরিবেশ। এই সময়ে এসে টানা কয়েক ঘণ্টা বিদ্যুৎ না পেয়ে দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম তৈরি হয়েছে।’
অন্যদিকে দুপুর দুটোর দিকে যখন বিদ্যুৎ যায় তখন অফিস কার্যক্রম চলছিল। যেসব অফিসে জেনারেটর নেই এমন অফিসে এক ঘণ্টার মধ্যেই অনেকটাই গরমে হাঁপিয়ে ওঠেন। অফিস শেষে বাসায় এসেও বিদ্যুৎ না পেয়ে অনেকের মধ্যে বিরক্তি দেখা যায়। রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে থাকা রোগীদের পড়তে হয় ভোগান্তিতে।
নাসিমুল হোসেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। তাঁর অফিসে জেনারেটর নেই। তিনি বলেন, ‘বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পর অফিসে বসা যাচ্ছিল না। এক ঘণ্টা কোনো রকমে সহ্য করা যায়, কিন্তু কয়েক ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকলে অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। আজ তাই হয়েছে।’
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিউরো সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি হয় মাহমুদুল। তিনি যাওয়া সড়ক দুর্ঘটনায় আহত। মাহমুদুল বলেন, ‘চিকিৎসক আমাকে সিটি স্ক্যান করতে বলেছেন। কিন্তু, বিদ্যুৎ না থাকায় সিটি স্ক্যান করতে পারছি না। কখন বিদ্যুৎ আসবে কেউ কিছুই বলতে পারছেন না।’
রাজধানীর বাড্ডা, নতুন বাজার, নূরের চালা, হোসেন মার্কেট, ভাটারা এলাকার অনেক মানুষ যারা বাসা থেকে নিচে নেমে গলির সড়কে হাঁটতে দেখা যায়। অনেকেই বাচ্চাদের সঙ্গে নিয়ে নেমেছেন। ভাটারার বাসিন্দা আব্দুল খালেক একজন বেসরকারি চাকরিজীবী। নিজের ছোট্ট মেয়ের হাত ধরে রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে বলেন, ‘বাচ্চা বাসায় ঘেমে কান্না করছিল। নিজেরও খারাপ লাগছিল। জানি না কখন বিদ্যুৎ আসবে। রাস্তায় নেমে দেখি আমার মতো প্রায় সবাই নিচে।’
এদিকে, বিদ্যুৎ না থাকায় হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ-এ এজলাস কক্ষে মোমবাতি জ্বালিয়ে ও মোবাইলের আলোতে বিচারকাজ পরিচালনা করেছেন বিচারপতিরা। সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সহসম্পাদক অ্যাডভোকেট সৈয়দ মামুন মাহবুব গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বিদ্যুৎহীন অবস্থায় অনেক কষ্ট স্বীকার করে মাননীয় দুজন বিচারপতি দীর্ঘ সময় বিচারকাজ পরিচালনা করেছেন। এজন্য তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।’