বিধবার ‘জমি দখলে ফন্দিফিকির’, অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে
নড়াইল সদর উপজেলার বিছালী ইউনিয়নের বিছালী পুলিশ ফাঁড়ির পাশেই বিধবা আনজিলা বেগমের বাড়ি। স্বামী মৃত আলেক শেখের রেখে যাওয়া ১০ শতাংশ জমিতে ছেলে-মেয়ে নিয়ে বসবাস করছেন প্রায় ৭০ বছর। অভিযোগ উঠেছে, সেই জমি দখলের পায়তারা করছেন প্রতিবেশী ইন্দার মোল্লা। করা হচ্ছে নানা ফন্দিফিকির। তাঁর সঙ্গে যোগ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিছালী ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (নায়েব) আনন্দ মোহন দাশের বিরুদ্ধে।
জানা গেছে, আনজিলা বেগম ওই দাগের ১৫ শতাংশ জমি বন্দোবস্ত পাওয়ার জন্য ২০২০ সালের ১ মার্চ জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেন। জেলা প্রশাসক সদর উপজেলা ভূমি কর্মকর্তার কাছে পাঠান। সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন।
আনজিলা বেগমের অভিযোগ, ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা নির্দেশ পেয়েও প্রতিবেদন দিতে কালক্ষেপণ করতে থাকেন।
আনজিলা বেগমের লিখিত আবেদনে জানা যায়, বিছালী মৌজার ১৪৫৭ দাগে মোট ৩০ শতক জমি। জমির সাবেক মালিক প্রফুল্ল কুমার বন্দোপাধ্যায়। ৬২ সালের এসএ খতিয়ানেও তাঁর নাম রয়েছে। তাঁরা ভারতে চলে গেলে ওই জমি ভিপি ল্যান্ড হয়ে যায়। আনজিলা বেগম ওই জমির ১০ শতকের ওপর বাড়িঘর তৈরি করে ৭০ বছর ধরে বসবাস করে আসছেন। ভূমি জরিপের সময় দখলি স্বত্ব হিসেবে জরিপের বুজারত খাতায় স্বামী আলেক শেখের নাম লেখা হয়। কিন্তু, কোনো কাগজপত্র না থাকায় ওই দাগের সব জমি সরকারি খতিয়ানভুক্ত হয়। পরে সরকারের এক ঘোষণা মতে কিছু জমি (ক) এবং (খ) তফসিলভুক্ত হয়। ১৪৫৭ দাগের সব জমি (খ) তফসিলভুক্ত হয়।
অভিযোগ উঠেছে, আনন্দ মোহন দাশ গোপনে আবেদনকারীর দাগের জমি খাস নয়, ওই জমি (খ) তফসিলভুক্ত হওয়ায় সম্পত্তি বন্দোবস্তযোগ্য নয়—মর্মে সদর উপজেলা সহকারি কমিশনারের (ভূমি)কাছে ২০২১ সালের ২৪ জানুয়ারি প্রতিবেদন দাখিল করেন।
অভিযোগে পাওয়া যায়, ২০২১ সালের প্রতিবেদনের সুযোগ কাজে লাগিয়ে এলাকার বিত্তশালী ইন্দার মোল্লা ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আনন্দ মোহন দাশের সহযোগিতায় একটি জাল দলিল করে নিজের নামে জমি রেকর্ড করে নেন। এ কারণে ইন্দার মোল্লা জমি থেকে আনজিলা বেগমের পরিবারকে উচ্ছেদ করতে প্রতিনিয়ত বাড়ি-ঘর ভাঙচুরসহ নানা ভয়ভীতি ও অত্যাচার চালিয়ে আসছেন।
আনজিলা বেগমের দাবি—তিনি ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আনন্দ মোহন দাশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এ সময় তিনি বলেন, আনন্দ মোহন আমাকে বলেছেন—যেহেতু বাড়ি এবং জায়গা আপনাদের দখলে আছে, আপনাদের পক্ষে প্রতিবেদন দিতে কোনো অসুবিধা নেই। আনজিলা বেগম অভিযোগ করে বলেন—সরকারের (খ) তফসিলের জমি তাঁর নামে করে দেওয়ার কথা বলে নায়েব আনন্দ মোহন ৭০ হাজার টাকা দাবি করেন। তিনি তাঁকে ৫০ হাজার টাকা দেন। এরপরও নায়েব তাঁর পক্ষে কোনো প্রতিবেদন দেননি। টাকা ফেরত চাইলে তিনি ঘোরাতে থাকেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নড়াইল-নওয়াপাড়া সড়ক সংলগ্ন বিছালী গ্রামে আনজিলা বেগমের বাড়ি। ১০০ গজ দূরেই বিছালী পুলিশ ফাঁড়ি। আনজিলা বেগমের বাড়ির পেছনে বিশাল পুকুর। পুকুর পাড়ের উত্তর পাশেই ইন্দার মোল্লার বাড়ি।
বিছালী গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি কাতেবর মোড়ল (৭০), আসুরা বেগমসহ (৭২) কয়েকজন দাবি করেন, আনজিলার স্বামী এখানে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ বছর ধরে বসবাস করছেন। এ পরিবারটিকে ভিটে থেকে উচ্ছেদ করতে গ্রামের ইন্দার মোল্লা মাঝে-মধ্যে এঁদের ওপর নির্যাতন চালান। বাড়িঘর ভাঙচুর করেন। তাঁরা বলেন, ‘শুনেছি ইন্দার মোল্লা পুরো জমি জাল দলিল করে নিজের নামে রেকর্ড করে নিয়েছেন।’
জানতে চাইলে ইন্দার মোল্লা এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ক্রয়সূত্রে আমি এই সম্পত্তির মালিক।’
বিছালী ইউনিয়নের ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আনন্দ মোহন দাশ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আনজিলা বেগমের কাছ থেকে আমি কোনো অর্থ গ্রহণ করিনি। তিনি আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা কথা বলে বিপদে ফেলতে চাচ্ছেন।’