বিনা টিকেটে ট্রেনে ভ্রমণ করা তিন যাত্রীর পরিচয় মিলেছে
বিনা টিকেটে ট্রেনে ভ্রমণ করা তিন যাত্রীর পরিচয় মিলেছে। এঁদের একজন ছিলেন ইমরুল কায়েস প্রান্ত। তাঁর মা ইয়াসমিন আক্তার নিপার দাবি, তিনি রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনের স্ত্রীর মামাতো বোন। রেলে প্রান্তের সঙ্গে বাকি দুজন ছিলেন তাঁর চাচাতো ভাই। এক প্রশ্নের জবাবে নিপা আজ রোববার এনটিভি অনলাইনকে মুঠোফোনে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গত বুধবার রাতে খুলনা থেকে ঢাকাগামী আন্তঃনগর সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনে বিনা টিকেটে ভ্রমণের অপরাধে তিন যাত্রীকে জরিমানা করেন ওই ট্রেনের টিটিই মো. শফিকুল ইসলাম। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার বিকেলে ঈশ্বরদীর পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (ডিসিও) নাসির উদ্দিনের নির্দেশে ওই টিটিইকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। পরে দেশব্যাপী শুরু হয় সমালোচনা। বলা হয়—ওই তিন যাত্রী রেলমন্ত্রীর আত্মীয় হওয়ায় টিটিইকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এরপর রেলমন্ত্রী সুজন তিন যাত্রী তাঁর আত্মীয় না বলে জানান।
গতকাল শনিবার রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বিনা টিকেটে ট্রেনে ভ্রমণ করা যাত্রীরা আমার আত্মীয় নন। ওদের সঙ্গে আমার কোনো ধরনের আত্মীয়তার সম্পর্ক নেই। আমার নাম ভাঙিয়ে কেউ হয়তো সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করেছে। ঘটনার সঙ্গেও আমার কোনো সম্পর্ক নেই।’
এরপর আজ রোববার জানা যায়, ওই তিন যাত্রীর একজন রেলমন্ত্রীর স্ত্রীর মামাতো বোন ইয়াসমিন আক্তার নিপার ছেলে ইমরুল কায়েস প্রান্ত। বাকি দুজন নিপার চাচাতো ভাই। তাঁদের নাম—ওমর ও হাসান।
ইমরুল কায়েস প্রান্তের মা ইয়াসমিন আক্তার নিপা জানান, ছেলেদের সঙ্গে অসদাচরণ করার কারণে টিটিইকে বদলি করতে মন্ত্রীর স্ত্রী শাম্মী আক্তারকে বলেছিলেন। তখন শাম্মী তাঁকে (নিপা) জানান, বদলি না বরখাস্তই করে দিচ্ছেন। এরপর শাম্মী রেলের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে ফোন করে বরখাস্ত করতে বলেন।
রেলপথমন্ত্রীর স্ত্রীর ‘বান্ধবি না, মামাতো বোন’ দাবি করে নিপা এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমার ছেলে একটা গ্রাজুয়েট ছেলে। এই ছেলেটা এতো নিরীহ ও কোনো ঝামেলায় থাকে না। আমরা রেলমন্ত্রীর রিলেটিভ হয়ে এখন আমাদের খরচ আরও বেড়ে গেছে। আমরা টিকিট কেটে উঠি, আমাদের কেবিন নিতে হয়, বকশিস দিতে হয়।’
নিপা আরও বলেন, ‘আমার ছেলেটা টিকিট কেটে উঠত। টিকিট নেই, কিন্তু, টিকিট বানিয়ে নিয়েছে। গার্ড আলমকে দিয়ে টিকিট বানিয়ে নেওয়া হয়েছে, তিনটি টিকিট এক হাজার ৫০ টাকা দিয়ে।’
রেলমন্ত্রীর স্ত্রীর ‘মামাতো শ্যালিকা’ নিপা বলেন, ‘ওইদিন তো অনেক সিট খালি গেছে। কেবিনও খালি গেছে। তখন গার্ড মন্ত্রীর রিলেটিভ বলে সম্মান দেখিয়ে সহযোগিতা করে কেবিনে বসার সিট করে দিয়েছে। এরপর ওই টিটিই শফিকুল বলেছে যে, আপনারা কেবিনে কেন? তখন গার্ডের নাম ধরে বলছে যে, উনি আমাদের বসিয়ে দিয়েছেন। এরপর টিটিই শফিকুল বলেন যে, রেল কি ওর বাপের? যাকে তাকে বাসাবে? তখন বলছে যে, আমরা রেলমন্ত্রীর রিলেটিভ। তখন টিটিই বলেছে, রেলমন্ত্রীর রিলেটিভ হোক, আর যেই হোক...। এ কথা বলে সে খারাপ করছে।’
নিপা বলেন, ‘টিটির ওই ঘটনার পর আমার ছেলে রাত তিনটার দিকে আমাকে ফোন দেয়। তখন আমার কাছে শুয়ে ছিল শাম্মী আক্তার (রেলমন্ত্রীর স্ত্রী)। তখন আমি ওকে বললাম, ধর তো ফোনটা, কী বলছে ছেলে।’
এরপর টিটিইকে বদলি করার কথা বললে শাম্মী বরখাস্তের কথা বলেন, জানান নিপা।
এ বিষয়ে জানতে রেলমন্ত্রীর স্ত্রীর মুঠোফোনে চেষ্টা করা হলে তা বন্ধ থাকায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে আজ রোববার রেল ভবনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে রেলমন্ত্রী সুজন জানান, মাত্র ৯ মাস হলো আমার বিয়ে হয়েছে। নতুন যে স্ত্রীকে আমি গ্রহণ করেছি, সে ঢাকাতেই থাকে। তাঁর মামাবাড়ি ও নানাবাড়ি হলো পাবনা। আমি শুনেছি তাঁরা আমার আত্মীয়। এটা এখন ঠিক, যেটা আমিও এখন শুনেছি। এর আগে পর্যন্ত আমিও জানতাম না, এঁরা কারা এবং আমার জানার কথাও না।