বিনা টিকেটে রেল ভ্রমণের দায় মুক্তি পেতে ৯৯৯০ টাকা জমা
ছাত্রজীবনে রেলভ্রমণের সময় টিকেট না কেটেই যাতায়াত করতেন। তখন টিকেট কাটার মতো টাকাও থাকত না পকেটে। কৃষক পরিবারের ছেলে হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। অভিভাবকরা তেমন খরচপাতিও দিতেন না। আর তখন রেলপথ ছাড়া যাতায়াতের আর কোনো বিকল্প না থাকায় বিনা টিকেটেই ভৈরব-ঢাকা চলাচল করতেন রেলে চড়ে।
এখন তিনি সুপ্রতিষ্ঠিত। কিশোরগঞ্জের ভৈরবের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার। আর্থিকভাবেও বেশ স্বচ্ছল। সামাজিক মর্যাদায় সুপ্রতিষ্ঠিত। সমাজসেবায় খরচ করেন বিপুল অর্থ। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তাঁর আর্থিক অনুদান উল্লেখ করার মতো। গরিব-দুঃখী, অসহায় মানুষের তিনি ভরসাস্থল। কিন্তু সবই করেন তিনি অতিগোপনে। দ্বিতীয়-তৃতীয় ব্যক্তির মাধ্যমে।
সেই ব্যক্তির ছাত্রজীবনের সেই বিনা টিকেটের ভ্রমণ বিষয়ে অনুশোচনা জাগে। রেলওয়ের এই ঋণ থেকে তিনি কীভাবে মুক্তি পেতেন পারেন? এ বিষয়ে তিনি তাঁর এক ঘনিষ্ঠজনের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধানের পথ খুঁজতে বলেন।
ওই ব্যক্তি ভৈরব বাজার রেলওয়ে জংশনে কর্মরত একজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেন। তিনি জানান ‘ব্ল্যাংক টিকেটের’ মাধ্যমে রেলওয়ের কোষাগারে এই টাকা জমা দিতে পারেন। বিষয়টিকে তিনি যুক্তিযুক্ত মনে করে ‘অপরাধবোধ’ থেকে মুক্তির পথ পেয়ে খুশি হন।
গতকাল শনিবার রাত ৯টার দিকে ভৈরব রেলওয়ে স্টেশনের প্রধান বুকিং সহকারী সোহাগ মিয়ার কাছে ওই ব্যক্তির একজন প্রতিনিধি নয় হাজার ৯৯০ টাকা জমা দিয়ে ‘একটি ব্ল্যাংক টিকেট’ কাটেন।
এ বিষয়ে ভৈরব রেলওয়ে স্টেশনের প্রধান বুকিং সহকারী সোহাগ মিয়া বলেন, হঠাৎ করেই এক ব্যক্তি রুমে ঢুকে বলেন, জনৈক ব্যক্তি ছাত্রজীবনে বিনা টিকেটে রেল ভ্রমণ করেছেন বহুবার। বর্তমানে তিনি এ কাজের জন্য অনুতপ্ত হয়ে এর মাশুল হিসেবে রেলওয়ের কোষাগারে টাকা জমা দিতে চান। পরে তিনি নয় হাজার ৯৯০ টাকা জমা দিয়ে একটি ‘ব্ল্যাংক টিকেট’ কাটেন। মূলত অনুশোচনাবোধ থেকেই ওই ব্যক্তির এই সিদ্ধান্ত। বিনা টিকেটে ভ্রমণ করে তিনি রেলওয়ের যে ক্ষতি করেছেন, এ থেকে দায়মুক্তি পেতে এই টাকা জমা দিয়েছেন। তাঁর এই বোধোদয় অন্য যাত্রীদেরও বিনা টিকেটে রেল ভ্রমণ প্রবণতা বন্ধে নিয়ামক হিসেবে কাজ করবে।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে কঠোর গোপনীয়তার শর্তে বোধোদয় হওয়া ওই ব্যক্তি বলেন, ‘ছাত্রজীবনে অনেকবার বিনা টিকেটে ট্রেনে যাতায়াত করেছি। বিষয়টি আমার মাথায় ছিল। আর এটা যে সরকারের রেল খাতের কাছে আমার ঋণ, সেটাও ঘুরপাক খেত মনে। মৃত্যুর আগে এই ঋণ থেকে আমার দায়মুক্তি নিয়ে যেতে হবে। নইলে শেষ বিচারের দিন আমাকে জবাবদিহি করতে হবে মহান রবের দরবারে।’
বোধোদয় হওয়া ওই ব্যক্তি আরও বলেন, ‘কত টাকার রেলভ্রমণ আমি করেছিলাম, এটা তো আমার হিসাব নেই। তাই এই নিয়ে আমি অনেক হিসাব-নিকাশ করেছি। পরে সিদ্ধান্ত নিলাম ৫০ হাজার টাকা জমা দিয়ে দেব। এই অঙ্কের প্রথমটা জমা করেছি। বাকিটা পর্যায়ক্রমে জমা করব।’