বিভাগীয় শহরে মানববন্ধন করবে গণতন্ত্র মঞ্চ
রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের সকল বিভাগীয় শহরে আগামী ১১ মার্চ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করবে গণতন্ত্র মঞ্চ। ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু নতুন এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
আজ শনিবার (৪ মার্চ) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গণতন্ত্র মঞ্চের উদ্যোগে সরকার ও শাসন ব্যবস্থা পরিবর্তনের লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হোন ব্যানারে বিরোধী মতের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে দমন-পীড়ন ও দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশে থেকে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন রফিকুল ইসলাম বাবলু।
সভাপতির বক্তব্যে ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু বলেন, ‘আমি আজকের গণতন্ত্র মঞ্চের এই কর্মসূচিতে আসা সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। সরকার বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের উপর জুলুম নির্যাতন করছে ও রমজানের আগেই সব কিছুর দাম বাড়িয়েছে। সিন্ডিকেট ব্যবসার জন্য সব কিছুর দাম বেড়েছে।’
বাবলু বলেন, ‘সরকার বিদেশি প্রভুকে খুশি করতে আদানি গ্রুপের সাথে চুক্তি করেছে। ইতোমধ্যে সরকার সংলাপের বিষয়ে কথাবার্তা শুরু করেছে। আগে আপনাদের ঘোষণা দিয়ে পদত্যাগ করতে হবে, তাহলে আমরা বিবেচনা করব আপনাদের সাথে আলোচনায় যাব কি না। বিএনপির সাথে যুগপত আন্দোলন নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। অবিলম্বে আদানি গ্রুপের সাথে চুক্তি বাতিল করুন, না হলে আমরা বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করব।’
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘১৯১৮ সালে দিনের ভোট রাতে করার পরে এই সরকার দেশের ভেতরে ও বাইরে আন্তর্জাতিকভাবেও সমালোচিত হয়েছে। জাপানি রাষ্ট্রদূত দিনের ভোট রাতে হয়েছে বলেছেন। আমেরিকার বিভিন্ন প্রতিনিধিরা এদেশে বার বার আসছে এতেই বোঝা যায় এই সরকার কতোবড় জোচ্চুরি করছে।’
মান্না বলেন, ‘এই সরকার আবারও বিদেশিদের বলছে যে, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করবে। বিদেশিদের যতোই বোঝান আপনার অধীনে আমরা আর নির্বাচনে যাব না। আমরা যেমন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করতে পারি, তেমনি দুর্বার আন্দোলনও সৃষ্টি করতে পারি। আমাদের আন্দোলন দমিয়ে রাখতে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের উপর হামলা-মামলা করছে সরকার।’
মাহমুদুর রহমান মান্না আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী গতবারের নির্বাচনের আগে বলেছিলেন আমি বঙ্গবন্ধু কন্যা আমি মিথ্যে কথা বলি না, আমরা দেখেছি তারা কি করেছে গত নির্বাচনে। কিন্তু এবার আর মিথ্যুকদের কথা বিশ্বাস করবো না, তাই এই সরকারের পতন ঘটানোর জন্য আন্দোলন করতে হবে তার কোনো বিকল্প নাই। আমরা এই সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে যাব না। তাদের সংলাপের টোপে আমরা পড়ব না। আমরা ইতোমধ্যেই বিএনপির সাথে যুগপথ আন্দোলনের রূপরেখা নিয়ে আলোচনা করেছি এবং অচিরেই বিএনপির সাথে গণতন্ত্র মঞ্চ সরকার পতনের একদফা কর্মসূচি দিয়ে রাজপথে থাকবে।’
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড সাইফুল হক বলেন, ‘আওয়ামী লীগ আজকেও বিরোধী দলের কর্মসূচির দিনে শান্তি সমাবেশের নামে পাল্টা কর্মসূচি দিয়েছে। এই ধরনের কর্মসূচিকে জনগণ নার্ভাস দলের কর্মসূচি নাম দিয়েছে। সন্ত্রাস না করে আওয়ামী লীগ কোনোভাবেই ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবেন না। তাই তাদের বিদায় করা ছাড়া আর কোনো উপায় নাই। রোজার আগেই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাজার অস্থির অবস্থায় নিয়ে গেছে। এর পরেও তারা বলে মানুষ নাকি বেহেস্তে আছে, তারাই শুধু বেহেস্তে আছে। তারা একটি পলিসি নিয়েছে লুটপাটের টাকা বিদেশে পাচার করে দেওয়া।’
সাইফুল হক বলেন, ‘জালিয়াতির কোম্পানি আদানি যাদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যেই ভারতে আন্দোলন শুরু হয়েছে, তাদের সাথে সরকারের চুক্তি বাতিল করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। এভাবে চলতে থাকলে বাংলাদেশ একটি ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে যাবে। রোজার আগে ও পরে গণতন্ত্র মঞ্চ বিএনপির সাথে যুগপথ আন্দোলনে থাকবে। দুই ঈদের মাঝখানে গণআন্দোলন করে এই সরকারকে বিদায় করবো। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই বিএনপির সাথে গণতন্ত্র মঞ্চ যুগপত আন্দোলনের রূপরেখা ঘোষণা করবো। বিজয় অর্জন ছাড়া মানুষ ঘরে ফিরবে না।’
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘আমরা যুগপত আন্দোলনের অংশ হিসেবে পদযাত্রা করছি। আমরা আজকে এমন একটি সরকার ব্যবস্থায় আছি যারা সমস্ত জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে জনগণকে একটি ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। তারা কীভাবে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করা যায় ও নিজেদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করা যায় তা নিয়ে ব্যস্ত। তারা ভাবে তাদের হাতে দুটো অস্ত্র আছে, মানুষকে ভয়ভীতি দেখায় ও হামলা-মামলা করে। তাদের নিজস্ব বাহিনী লাঠিয়াল ছাত্রলীগকে লেলিয়ে দিয়েছে। কুষ্টিয়ায়, চট্টগ্রামে, রাজশাহীতে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্যাতন করছে সাধারণ ছাত্রদের ভয় দেখানোর জন্য। গণঅধিকার পরিষদের সদস্যদের ওপর হামলা করেছে আবার উল্টো মামলা দিয়েছে। ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য বিদেশিদের খুশি করছে।’
জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই, এইবার আক্রমণ ও বিদেশিদের খুশি করে আর ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। এবার সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাস্তায় নেমে এসেছে, তাই আর ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না।’
ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলুর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব হাবিবুর রহমান রিজুর সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডির) সাধারণ সম্পাদক শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, গণঅধিকার পরিষদের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খানসহ গণতন্ত্র মঞ্চের কেন্দ্রীয় নেতারা। গণতন্ত্র মঞ্চের বিক্ষোভ সমাবেশ প্রেসক্লাবে শেষ করে ফের পদযাত্রা প্রেসক্লাব থেকে শুরু হয়ে সেগুনবাগিচা হয়ে কাকরাইল মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।