বিভিন্ন জেলায় পৌঁছেছে করোনার টিকা
বিভিন্ন জেলায় নভেল করোনাভাইরাসের টিকা পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে সরকার। আপাতত ৩৪টি জেলায় করোনার টিকা পাঠানো হচ্ছে। এরই মধ্যে ময়মনসিংহ বিভাগ, কুষ্টিয়া ও নাটোরসহ বেশ কিছু জেলায় টিকা পৌঁছে গেছে। গাজীপুরের বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের ওষুধ কারখানা থেকে কড়া নিরাপত্তা মধ্য দিয়ে বিশেষ ফ্রিজার ভ্যানে করে টিকা পাঠানো শুরু হয়েছে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
এদিকে, যেসব জেলায় টিকা পাঠানো হচ্ছে, সেখানকার প্রশাসনকে আগে থেকেই এ বিষয়ে জানিয়ে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। শুক্রবার টিকা পৌঁছানোর পরপরই এই ৩৪টি জেলার সিভিল সার্জনরা প্রশাসনের সহায়তায় টিকা গ্রহণ করবেন। বর্তমানে সরকারের হাতে থাকা ৭০ লাখ টিকা জেলাগুলোতে পৌঁছানোর পর আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে একযোগে আনুষ্ঠানিকভাবে করোনার টিকাদান কর্মসূচি শুরু হবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
ময়মনসিংহ থেকে প্রতিনিধি আইয়ুব আলী জানিয়েছেন, ময়মনসিংহ বিভাগের চার জেলায় প্রথম পর্যায়ে পাঁচ লাখ চার হাজার ডোজ কোভিড-১৯-এর টিকা এসে পৌঁছেছে। এর মধ্যে ময়মনসিংহ জেলায় ২৭ কার্টন, অর্থাৎ তিন লাখ ২৪ হাজার ডোজ টিকা বুঝে নিয়েছেন জেলার সিভিল সার্জন ডা. এ বি এম মসিউল আলম। পরে টিকাগুলো তাপ নিয়ন্ত্রক সংরক্ষণাগারে রাখা হয়।
জানা গেছে, তাপ নিয়ন্ত্রক যানে কড়া নিরাপত্তা ও সতর্কতার মধ্য দিয়ে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে ময়মনসিংহ ইপিআই কেন্দ্রে গত বৃহস্পতিবার রাতে এসে পৌঁছায় কোভিড-১৯-এর টিকা। এ সময় সরকারি সিভিল সার্জন পরীক্ষিত কুমার পাড়, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাফিজুর রহমান, জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাঈদুল ইসলাম, ইপিআই সুপার মো. এমদাদুল হক ও বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের আঞ্চলিক বিক্রয় প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
ময়মনসিংহ স্বাস্থ্য বিভাগ ও বেক্সিমকো প্রতিনিধিরা জানান, প্রথম পর্যায়ে ময়মনসিংহ ইপিআই কেন্দ্রের ২৭টি কার্টন, যার মধ্যে এক হাজার ২০০ ভায়াল করে রয়েছে। প্রতিটি ভায়ালে ১০টি ডোজ, অর্থাৎ সর্বমোট তিন লাখ ২৪ হাজার ডোজ থাকছে। এ ছাড়া শেরপুর জেলায় তিনটি, নেত্রকোনা ও জামালপুরে ছয়টি কার্টন করে মোট ১৫ কার্টন কোভিড-১৯-এর টিকা সরবরাহ করা হয়েছে।
জানা গেছে, স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ শেষে গুরুত্ব অনুযায়ী বিভিন্ন উপজেলায় সরবরাহ করা হবে করোনার টিকা।
নাটোর থেকে প্রতিনিধি হালিম খান জানিয়েছেন, নাটোরে আজ শুক্রবার ভোরে পৌঁছেছে করোনার টিকা। বিশেষ ব্যবস্থায় ৪৮ হাজার টিকাবাহী যান নাটোরের সিভিল সার্জন কার্যালয়ে এসে পৌঁছায়। এ সময় সিভিল সার্জন ডা. কাজী মিজানুর রহমান এবং জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পরে টিকাগুলো বিশেষ ব্যবস্থায় জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের সংরক্ষণাগারে সংরক্ষণ করে রাখা হয়।
সিভিল সার্জন জানান, আগামী সপ্তাহে আনুষ্ঠানিকভাবে নাটোর জেলায় তালিকাভুক্ত ব্যক্তিদের টিকা দেওয়া হবে।
এর আগে গত বুধবার বিকেল সাড়ে ৩টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে করোনার টিকাদান কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের সঙ্গে সঙ্গে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে পাঁচজনকে টিকা দেওয়া হয়। দেশে প্রথম করোনার টিকা নেন কুর্মিটোলা হাসপাতালের সেবিকা রুনু ভেরোনিকা কস্তা।
এ ছাড়া গত বুধবার টিকা নেন চিকিৎসক আহমেদ লুৎফুল মোবেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা, ট্রাফিক পুলিশের মতিঝিল বিভাগের কর্মকর্তা দিদারুল ইসলাম ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম ইমরান হামিদ। কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ওই দিন বিভিন্ন পেশার মোট ২৬ জনকে টিকা দেওয়া হয়।
এ ছাড়া করোনার ভ্যাকসিনেশন কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনে গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর পাঁচ হাসপাতালে টিকা দেওয়া হয়। এগুলো হলো—ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা জেনারেল হাসপাতাল, বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী জেনারেল হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল।
বিএসএমএমইউতে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে করোনাভাইরাসের টিকা প্রদান শুরু হয়। এরপর সেখানে প্রথম টিকাটি নেন বিএসএমএমইউর উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া।
এ ছাড়া গতকাল বৃহস্পতিবার বিএসএমএমইউতে করোনাভাইরাসের টিকা নিয়েছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। বিএসএমএমইউয়ে স্থাপিত বুথে নিজে এসে গতকাল সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে টিকা নেন পলক। মন্ত্রিপরিষদ সদস্যদের মধ্যে তিনিই প্রথম করোনাভাইরাসের টিকা নেন।
এ ছাড়া গতকাল দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে করোনাভাইরাসের টিকা নেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ।