বিরোধী দলকে ঘায়েল করতে মামলা দেওয়া হচ্ছে : রিজভী
সরকার সারা দেশে কিছু মামলাবাজ পুষছে, যাদের কাজ বিরোধী দলকে ঘায়েল করতে মামলা দেওয়া, এমন অভিযোগ করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। মানহানির মামলায় নড়াইলের আদালত থেকে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পরিপ্রেক্ষিতে এই অভিযোগ করেন তিনি। নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রিজভী এসব কথা বলেন।
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে করা মামলার আইনগত ভিত্তি নেই দাবি করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ছাড়া কেউ কারো বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ ও মানহানি মামলা করতে পারে না। আওয়ামী লীগের আমলে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় ঢোকানো হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন রিজভী আহমেদ।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ বলেন, “বর্তমান মিডনাইট সরকারের মাফিয়াতন্ত্র দেশে-বিদেশে উন্মোচিত হওয়ার পর ঘরে-বাইরে মুখ দেখাতে না পেরে চক্রান্তে মেতে উঠেছে। আল জাজিরার পর ডয়েচে ভেলে, এরপর আবার ‘দ্য ইকোনমিস্ট’। রাষ্ট্রের সব গোপন অপকর্ম ফাঁস হয়ে যাচ্ছে।”
রিজভি বলেন, “বিদেশি গণমাধ্যমে বাংলাদেশ আজ আর কোনো রাষ্ট্র নয়, প্রজাতন্ত্র নয়, বৈদেশিক শক্তিনির্ভর এক মাফিয়াতন্ত্র মাত্র। অধঃপতিত এই পদ্ধতিতে নীতি, আদর্শ, প্রজ্ঞা বা দূরদর্শিতা নয়, বরং প্রতিহিংসাপরায়ণতা, হঠকারিতা ও অবিমৃষ্যকারিতাই এখন এই সরকারের চলার পথ প্রদর্শক। এখন সরকারের অবস্থা ‘দুলিতেছে তরী, ফুলিতেছে জল, ভুলিতেছে মাঝি পথ।’ চারিদিকে নানা কথাবার্তা, ফিসফাস শুনতে পাচ্ছে জনগণ। সরকারের অবস্থা ভালো নয়। তাই পরিস্থিতি সামাল দিতে নানা নাটক, রঙ্গ করছে। আবার নতুন করে গ্রেপ্তার, মামলা, হামলা, নিপীড়ন, নিষ্ঠুর দমননীতি শুরু করেছে। জনগণের দৃষ্টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে নতুন নতুন ইস্যু তৈরি করছে।’
রিজভী আরো বলেন, “বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমানকে কারাদণ্ড দেওয়া এবং শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের অর্জিত বীরত্বসূচক ‘বীর উত্তম’ পদক ছিনতাই করার সিদ্ধান্ত কোনোটাতেই হালে পানি না পেয়ে হতাশ শেখ হাসিনা। আর তাই গতকাল বুধবার সরকারের বন্য আক্রোশের কারসাজিতে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মানহানির মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে নড়াইলের বহুল আলোচিত আদালত। দেশনেত্রীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির ঘটনার মধ্য দিয়ে বর্তমান বিনা ভোটের প্রধানমন্ত্রী তাঁর জিঘাংসা পূরণের মুখোশ আরো একবার উন্মোচিত করলেন। এই ঘটনায় পরিষ্কারভাবে বোঝা যায় যে, আইন আদালত শেখ হাসিনার হাতের মুঠোয় এবং আওয়ামী লীগেরই একটি বর্ধিত প্রতিষ্ঠান।’
রিজভী আরো বলেন, ‘আওয়ামী কক্ষপথেই ঘুরপাক খাচ্ছে আইন আদালত। দেশনেত্রীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির ঘটনাটি কদর্য অমানবিকতা, নির্মমতা ও হিংস্রতার বহিঃপ্রকাশ। খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় তিন বছরের বেশি সময় বন্দি রেখে তাঁর নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা ইতিহাসের সব বর্বর নির্যাতনকেও হার মানিয়েছে। আজ্ঞাবহ বিচার ব্যবস্থায় হাস্যকর ঘটনাও বটে। কী নির্লজ্জতা, ফ্যাসিবাদের নগ্ন উল্লাস!’
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব আরো বলেন, ‘আদালত ঘিরে আওয়ামী লীগ তাদের একটি মামলাবাজ সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। সারা দেশে কিছু মামলাবাজ পুষে রেখেছে সরকার। যাদের কাজই হলো সরকারের নির্দেশে বিরোধী দলকে ঘায়েল করতে মিথ্যা মামলা ঠুকে দেওয়া। যাদের পেশা মামলা করা। এই নিশিরাতের সরকারের আমলেই এই সমাজে এদের মতো অসংখ্য মামলাবাজ দালাল-ফড়িয়াদের জন্ম হয়েছে। গণবিচ্ছিন্ন গণশত্রুদের দুঃশাসনের বাইপ্রোডাক্ট হচ্ছে এই মামলাবাজরা।’
রিজভী আরো বলেন, ‘মূলত, প্রধানমন্ত্রীর নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব নিশ্চিত করার জন্যই তিনি পথের কাঁটা ভেবে চারবারের প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার ওপর জুলুমের মাত্রা বিপজ্জনকভাবে বৃদ্ধি করেছেন। একদিকে শারীরিকভাবে ভীষণ অসুস্থ দেশনেত্রীকে হত্যার চক্রান্ত, অন্যদিকে তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতে মিথ্যা ও সাজানো মামলায় তিন বছরের বেশি সময় ধরে বন্দি করে রাখা হয়েছে। এটা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার গণ্ডিও ছাড়িয়ে গেছে। আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে মিথ্যা মামলায় দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে তাঁর বিরুদ্ধে করা সব মিথ্যা মামলা ও জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা প্রত্যাহার এবং নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবি করছি। পাশাপাশি বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের বিরুদ্ধে করা মিথ্যা মামলাসহ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
সংবাদ সম্মেলনে রিজভী ছাত্রদল-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক রাকিবুল ইসলাম রাকিবকে গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়ে তাঁর মুক্তি দাবি করেন।