বিয়ে নিয়ে অভিনব প্রতারণা, গ্রেপ্তার ১
মামুন ইসলাম পেশায় গ্রিল ওয়ার্কশপের কর্মচারী হলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরিচয় দিতেন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের। কখনও কখনও হয়ে যেতেন মন্ত্রণালয়ের সহকারী উপসচিব, প্রশাসনিক কর্মকর্তা। সেজে বসতেন ব্যাংক কর্মকর্তা ও ইঞ্জিনিয়ার। এমনই ভাবে ভাব জমাতেন নারীদের সঙ্গে। করতেন বিয়ে। তবে, বিয়েতে তিনি নিজে উপস্থিত হতেন না। ব্যস্ততার কথা বলে নানা কৌশল অবলম্বন করতেন। এরপর সেই নারীদের সঙ্গে আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও ধারণ করে করতেন ব্লাকমেইল। হাতিয়ে নিতেন মোটা অংকের টাকা। অবশেষে সিআইডির হাতে বন্দি হলেন তিনি।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির বিশেষ পুলিশ সুপার এস এম আশরাফুল আলম এ তথ্য জানান।
এস এম আশরাফুল আলম জানান, নিজের আসল পরিচয় গোপন করে ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করতেন মামুন। নারীরা ছিল তার টার্গেট। উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের বিভিন্ন সময়ের ছবি নিজের ছবি হিসেবে ব্যবহার করে বিভিন্ন মেয়েদের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক স্থাপন করতেন। সম্পর্কের একপর্যায়ে তিনি ভুক্তভোগী মেয়েদের বিয়ের প্রস্তাব দিতেন।’
আশরাফুল আলম আরও জানান, মামুন কখনও ভুক্তভোগীর সঙ্গে সরাসরি দেখা করতেন না। বিভিন্ন সরকারি কাজে খুবই ব্যস্ত আছেন, অথবা তার ছুটি হচ্ছে না, এমন বিভিন্ন অজুহাত তৈরি করে সরাসরি বিয়েতে আসতে পারছে না বলে মামুন ভুক্তভোগী নারীর নামে কাজী অফিসের সিলমোহরযুক্ত ভুয়া নিকাহনামা প্রস্তুত করে কুরিয়ার করে পাঠিয়ে দিতেন। মেয়েটিকে ওই কাবিননামায় স্বাক্ষর করে মামুন ইসলামের ঠিকানায় পাঠিয়ে দিতে বলতেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ভুক্তভোগী নারী সরল বিশ্বাসে মামুনের কথামতো কাজ করলে কিছুদিন পর তিনি ওই নারীর বাসায় যেতেন ও কিছুদিন একসঙ্গে বসবাস করতেন। ভুয়া বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার পর মামুন মেয়েটিকে আপত্তিকর ও অশালীন অবস্থায় ভিডিও কলে আসতে বলতেন। আপত্তিকর অবস্থায় মেয়েটির সঙ্গে ভিডিও কলে কথোপকথনের সময় স্ক্রিন রেকর্ড করে সেই ভিডিওগুলো নিজের মোবাইলে সংরক্ষণ করে রাখতেন। পরে ওই ভিডিওগুলো অনলাইনে ও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল করে দেওয়ার হুমকি দিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করতেন।
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার বলেন, ‘মামুনের প্রতারণার স্বীকার এক নারী ডিএমপির পল্টন থানায় তার বিরুদ্ধে পর্নোগ্রাফি ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করেন। এরপর সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারের সাইবার ইনভেস্টিগেশন ও অপারেশনস টিম মামলাটির তদন্ত ভার পাওয়ার পর মামুনকে শনাক্ত করে গ্রেপ্তার কার্যক্রম শুরু করে। পরে সিআইডির সাইবার পুলিশের দল মামুনকে দিনাজপুর জেলার খানসামা থানার আমতলী বাজার থেকে গতকাল বুধবার গ্রেপ্তার করে।’
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গ্রেপ্তারের সময় তার কাছ থেকে পাঁচটি নকল নিকাহনামা, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বদলির ভুয়া অফিস আদেশের কপি ও প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ২টি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।
গ্রেপ্তার আসামির বরাত দিয়ে এস এম আশরাফুল আলম বলেন, ‘প্রতারক মামুনের আসল নাম মো. মমিনুল ইসলাম। তিনি একেক সময় নিজেকে বিভিন্ন উচ্চপদস্থ পদের সরকারি কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে প্রতারণামূলক প্রেমের সম্পর্ক স্থাপন করে প্রায় ১০ জন নারীকে বিয়ে করেন ও তাদের কাছ থেকে ব্ল্যাকমেল করে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেন। মামুনের মোবাইল ডিভাইসে পঞ্চাশের বেশি নারীর সঙ্গে ভিডিও কলে কথোপকথন ও অসংখ্য আপত্তিকর ভিডিও পাওয়া গেছে।’