বৃষ্টিপাতে জলাবদ্ধতা সরকারের মেগাউন্নয়নের ফল : মির্জা ফখরুল
বৃষ্টিপাতে রাজধানীসহ ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা সরকারের মেগাউন্নয়নের ফল বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ মঙ্গলবার দুপুরে দৈনিক নয়া দিগন্তের প্রতিষ্ঠবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে তিনি এই মন্তব্য করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, অনেক কষ্ট করে এখানে এসেছি। আপনারা জানেন, আজকে উত্তরার রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে। ডিএমপি কমিশনার একটা সার্কুলার দিয়েছেন যে, এই সড়কটা ব্যবহার না করার জন্য। গতকাল ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর ফলে যে বৃষ্টিপাত হয়েছে, এয়ারপোর্ট থেকে গাজীপুর পর্যন্ত এই রাস্তাটি আর চলাচলের উপযোগী নয়। এই যে মেগাপ্রজেক্ট, মেগাউন্নয়ন তার একটা ফলশ্রুতি, সেজন্য আজকে এই অবস্থা। কথাটা এজন্য বললাম যে, আজকে এই (জলাবদ্ধতা) বর্তমান অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে, তাদের মেগাউন্নয়নের কারণেই।’
উত্তরার বাসায় কীভাবে যাবেন তা নিয়ে নিজের দুচিন্তার কথা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, আমি জানি না আমি এখন ফিরবো কী করে। ধরে নিচ্ছি, অন্য রাস্তা দিয়ে ফিরতে হবে।
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর প্রভাবে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুর অংশে বিভিন্নস্থানে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় রাজধানীর খিলক্ষেত, উত্তরা-বিমানবন্দর এলাকায় দেখা দিয়েছে যানজট। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ জরুরি প্রয়োজন ছাড়া উত্তরা যাওয়ার পথ ব্যবহার না করার অনুরোধ জানিয়েছে। মতিঝিলে পত্রিকাটির কার্যালয়ে ১৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এই অনুষ্ঠান হয়।
দেশের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা একটা নষ্ট সময়, একটা ভয়ঙ্কর সময় অতিক্রম করছি। আমার কাছে আজকে বিস্ময় মনে হয়। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে আমরা সরাসরি জড়িত ছিলাম। তখন কি যুদ্ধ করেছিলাম এই কারণে যে, আমরা মানুষের অধিকার কেড়ে নেবো, তাদের ভোটের অধিকার কেড়ে নেবো, তার কথা বলার অধিকার কেড়ে নেবো, এই যে সাংবাদিক ভাইয়েরা সবাই বসে আছেন, তাদের লেখার অধিকার কেড়ে নেবো।
দুর্ভাগ্য আমাদের, ১৯৭৫ সালের সেই অবস্থা আমাদেরকে পার হতে হয়েছে, একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে ওই একাত্তরের চেতনাকে তারা বাস্তবায়িত করেছে, একদলীয় শাসন ব্যবস্থায় পত্রিকা বন্ধ করে দিয়ে তারা স্বাধীনতার চেতনা বাস্তবায়িত করেছে। আজকে আবার একইভাবে তারা এই স্বাধীনতার কথা বলে, মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে, তারা মানুষের অধিকারগুলোকে পুরোপুরিভাবে কেড়ে নিচ্ছে। এই সময়টা আমাদের অত্যন্ত ধৈর্য্যের সঙ্গে, অত্যন্ত সাহসের সঙ্গে অতিক্রম করতে হবে এবং আমাদের জয়লাভ করতে হবে।
‘বিএনপি সাংবিধানিক কমিশন করবে’
মির্জা ফখরুল বলেন, ১৯৭১ সালে যে আশা, যে স্বপ্ন, যে আকাঙ্খা আমরা দেখেছিলাম, সেটাকে বাস্তবায়িত করার জন্য আজকে প্রয়োজন সেটা হচ্ছে যে, যারা আমাদের স্বপ্নগুলোকে ভেঙে দিচ্ছে, যারা আমাদের সমস্ত অধিকারগুলোকে কেড়ে নিচ্ছে…এখানে একজন সাবেক বিচারপতি সাহেব বলেছেন, সংবিধান মেনে চলতে হবে। কোন সংবিধান? আমি জানতে চাই পরিষ্কার করে।
যে সংবিধানে আমার অধিকার হরণ করা হয়েছে, যে সংবিধানের মধ্যে কেটে ছেঁটে তিনটি অনুচ্ছেদ বলা হয়েছে যে, এটা কোনোদিন পরিবর্তন করা যাবে না। যে সংবিধানে আমরা সবাই মিলে ঠিক করেছিলাম যে, আমরা একটা স্বাভাবিক শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য, আমরা একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাব, সেই সংবিধান অবশ্যই পরিবর্তন করতে হবে। সেই সংবিধান অবশ্যই আমাদের মানুষের জন্য। আমরা যেটা চেয়েছিলাম যেটাকে করার জন্য এই সংবিধানে অবশ্যই আমাদের কিছুটা পরিবর্তন আনতে হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা বলেছি খুব পরিষ্কারভাবে যে, আমরা সাংবিধানিক কমিশন তৈরি করব। যদি আমরা জনগণের ম্যান্ডেটে বিজয় অর্জন করতে পারি, সাংবিধানিক কমিশন তৈরি করে আমরা সেই অগণতান্ত্রিক, জনগণবিরোধী যে সমস্ত বিষয় সংযোজন করা হয়েছে, সেগুলোকে আমরা বাতিল করে আমরা জনগণের জন্য যেটা প্রয়োজন, ৭২ সালে যেটা করা হয়েছিল, তার আশেপাশে নিয়ে সত্যিকার অর্থেই একটা যুগোপযোগী সংবিধান আমরা নিয়ে আসার চেষ্টা করব। ব্যাখ্যাটা খুব পরিষ্কার এদেশের মানুষ যা চাইবে, সেটাই হচ্ছে সংবিধান। সেই সংবিধান আমি মনে করি, বর্তমান যে সংবিধান আছে, তা মানুষের আশা-আকাঙ্খা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে।
ফখরুল সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান রেখে বলেন, আপনাদের কাছে অনুরোধ জানাবো, বাংলাদেশকে যেন আমরা সত্যিকার অর্থেই একটা অত্যন্ত প্রগতিশীল জনপদ হিসেবে তৈরি করতে পারি, আমরা যেন বাংলাদেশে মুক্ত চিন্তার যে অবস্থা, সেই অবস্থা সৃষ্টি করতে পারি, আমরা যেন বাংলাদেশে সত্যিকার অর্থেই একটা সাম্য, ন্যায় বিচার এবং মানবিক মূল্যবোধের কল্যাণমূলক রাষ্ট্র হিসেবে পরিণত করতে পারি; সেজন্য আপনারা অতীতে যে ভূমিকা রেখেছেন তা অব্যাহত রাখবেন। আপনারা জনগণের পাশে দাঁড়াবেন এই বিশ্বাস আমার আছে।
অনুষ্ঠানে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি ইকতেদার আহমেদ, ব্যারিস্টার মইনুল ইসলাম, ব্যারিস্টার শিব্বির মাহমুদ, আলমগীর মহিউদ্দিন, সালাউদ্দিন বাবর, মাসুম খলিলী, বিএনপির খায়রুল কবির খোকন, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, জহির উদ্দিন স্বপন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, আতিকুর রহমান রুমন, শায়রুল কবির খান, বিএফইউজের সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, বর্তমান সভাপতি এম আবদুল্লাহ, মহাসচিব নুরুল আমিন রোকন, ডিই্উজের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম প্রমুখ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।