বৃষ্টিশূন্যতা ও তীব্র দাবদাহে দিশেহারা কৃষক
সারা দেশের মতো বৃষ্টিশূন্যতা দেখা দিয়েছে সীমান্তবর্তী জেলা নওগাঁয়। গত দেড় মাসের ব্যবধানে জেলায় বৃষ্টির দেখা নেই। এর ফলে চরম ব্যাহত হচ্ছে রোপা আমন ধানের চাষ। তীব্র তাপদাহে শুধু ধান নয়, পুড়ছে সবজিখেতও। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছে কৃষক।
ধানের মাঠ ঘুরে দেখা যায়—কদিন আগেই রোপণ করা হয়েছিল এসব ধানের চারা। কিন্তু, বৃষ্টির অভাবে তা মরতে বসেছে। ফেটে চৌচির হয়েছে জমির মাটি। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বীজতলা। নওগাঁর প্রতিটি মাঠের চিত্রই একই রকম। ধানের পাশাপাশি নষ্ট হতে বসেছে অন্যান্য সবজিখেত।
নওগাঁ সাপাহার সদর উপজেলার কৃষক কুদ্দুস আলী জানান, মাঠজুড়ে যখন ব্যস্ততা থাকার কথা ধান রোপণের। ঠিক এমন সময়ে বসে বসে কাটছে কৃষকদের দিন। সারা দিন অতিরিক্ত রোদে ঘরের বাইরে যাওয়া কষ্টকর হয়ে পড়েছে। তার ওপর আবার বৃষ্টি নেই প্রায় মাস পার হতে চলল। এভাবে চলতে থাকলে এ মৌসুমের আবাদ অনেকটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
কৃষক কুদ্দুস আলী আরও বলেন, এ মুহূর্তে কৃষক যদি গভীর নলকূপ থেকে পানি সেচে চাষাবাদ করতে চায়, তাহলে খরচ বেড়ে যাবে অনেক। এত ঘন ঘন সেচ আর অতিরিক্ত খরচ করে চাষাবাদ করলে এ ফসল থেকে কৃষকের কিছুই থাকবে না।
নওগাঁ সদর উপজেলার বাইপাস মাঠ এলাকার কৃষক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘অনেক কষ্টে মাঠের পাশে একটি ডোবা থেকে পানি সেচে আড়াই বিঘা জমিতে ধানের চারা রোপণ করেছি। কিন্তু, ১৫ দিনের মাথায় রোপণ করা ধানগাছগুলো পুড়ে গেছে, ফেটেছে জমির মাটি। অল্পদিনের মধ্য যদি বৃষ্টি না হয়, তাহলে এসব ধান আর হবে না। শুধু দু-এক জনের নয়, মাঠজুড়ে একই অবস্থা। এ বছর পানির অভাবে অনেক কৃষক বীজতলা তৈরি করতে পারেননি। ফলে অনেকটাই অনিশ্চিত ধান রোপণ করা।’
নওগাঁ সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ফারহানা নাজনিন জানান, এ সময়ে রোপা আমন চাষ মূলত বৃষ্টির পানির ওপর নির্ভর করে হয়। এক মাসের বেশি সময় ধরে জেলায় বৃষ্টিপাত না থাকার ফলে এমন দুর্যোগ মোকাবিলায় এরই মধ্যেই বরেন্দ্র উন্নয়ন কতৃপক্ষকে গভীর নলকূপগুলো চালুর বিষয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে নওগাঁ বরেন্দ্র বহুমখি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ)-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে খরাপীড়িত জমিতে পানি সেচ দেওয়ার চিঠি আমরা হাতে পেয়েছি। অতি দ্রুত এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।’
অন্যদিকে, কিছুটা আশাবাদী আবহাওয়া অধিদপ্তর। নওগাঁর বদলগাছী আবহাওয়া অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষক নজরুল ইসলাম জানান, আগামী দু-এক দিনের মধ্যে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে, এ জেলায় কেমন বৃষ্টিপাত হবে, তা সঠিকভাবে বলা যাচ্ছে না৷ তবে, সার্বিকভাবে বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে।
কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী—এ মৌসুমে নওগাঁর ১১ উপজেলায় এক লাখ ৯২ হাজার হেক্টর জমিতে রোপা আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।