বেকার সমস্যা লাঘবে চাকরিজীবী নারী-পুরুষ বিয়ে নয় : সংসদে রেজাউল
চাকরিজীবী নারী ও পুরুষ যদি একে অপরকে বিয়ে না করেন তাহলে দেশের বেকার সমস্যা ‘লাঘব’ হবে বলে মনে করেন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রেজাউল করিম বাবলু। এ ধরনের বিধান রেখে সংসদে একটি আইন করার জন্যও তিনি প্রস্তাব দিয়েছেন। এ ধরনের আইন হলে দেশে গৃহকর্মীদের হাতে শিশু নির্যাতন বন্ধ হবে বলেও মনে করেন তিনি।
তবে সংসদ সদস্যের এই প্রস্তাবের পর তা অনেকটা খারিজই করে দিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেছেন, ‘এ রকম প্রস্তাব নিয়ে আমি এখান থেকে দুই কদমও হাঁটতে পারব না। তিনি (রেজাউল) স্বাধীনভাবে যা ইচ্ছা তাই বলতে পারেন। আমি যা ইচ্ছা তাই করতে পারি না।’
আজ বুধবার জাতীয় সংসদে ‘জাতীয় সংসদের নির্বাচনি এলাকার সীমানা নির্ধারণ বিল-২০২১’-এর সংশোধনীর ওপর আলোচনার সময় বগুড়া-৭ আসনের সংসদ সদস্য রেজাউল করিম বাবলু এই প্রস্তাব উত্থাপন করেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হয়।
বগুড়া-৭ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য রেজাউল করিম বাবলু বলেন, ‘করোনার কারণে চার কোটি জনগোষ্ঠী বেকার হয়েছে। দেশে প্রচলিত সামাজিক রেওয়াজ আছে- চাকরিজীবী কোনো পুরুষ চাকরিজীবী নারীকে বিয়ে করতে চান। আবার চাকরিজীবী নারীও একজন চাকরিজীবী পুরুষকে বিয়ে করতে চান। এতে কিন্তু বেকার সমস্যার সমাধান হয় না।’
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য বলেন, ‘এখানে আইনমন্ত্রী আছেন, উনাকে নিবেদন করব, এমন একটি আইন উনি সুবিধাজনকভাবে করবেন যেন কোনো চাকরিজীবী নারী কোনো চাকরিজীবী পুরুষকে বিয়ে করতে না পারেন। কোনো চাকরিজীবী পুরুষ কোনো চাকরিজীবী নারীকে বিয়ে করতে পারবেন না। তাহলে আমাদের বেকার সমস্যাটা অনেক পরিমাণে লাঘব হবে। এই প্রস্তাবটি আমলে নিলে চার কোটি বেকারের (সমস্যা) কিছুটা হলেও লাঘব হবে।’
এমন প্রস্তাবের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে রেজাউল করিম বাবলু আরও বলেন, ‘এই প্রস্তাবের পেছনে আরও একটি কারণ আছে। যখন চাকরিজীবী দম্পতি অফিসে যান তাদের শিশুসন্তানরা গৃহকর্মীদের দ্বারা দারুণভাবে নির্যাতিত হয়।’
রেজাউল করিম বাবলু যখন সংসদে এই প্রস্তাব দিচ্ছিলেন তখন গোটা সংসদেই হাসির রোল পরে যায়।
সংসদে ওই প্রস্তাবের জবাব দিতে দাঁড়িয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘স্বামী চাকরি করলে চাকরিজীবী মেয়ের সঙ্গে তাঁকে বিয়ে দেওয়া যাবে না- এরকম প্রস্তাব নিয়ে আমি এখান থেকে দুই কদমও হাঁটতে পারব না। এটা অসাংবিধানিক প্রস্তাব। কীভাবে এই প্রস্তাব এখানে এল বুঝতে পারলাম না। আমাদের বাকস্বাধীনতা রয়েছে। ওনি (রেজাউল) যা খুশি তাই বলতে পারেন। নিশ্চয় ওনি যা খুশি তাই এর মধ্যে আছেন! কিন্তু আমি যা খুশি তাই গ্রহণ করতে পারব না। কারণ, আমি জনগণের প্রতিনিধি।’
অবশ্য সংসদে বক্তব্য দিয়ে গণমাধ্যমের শিরোনামে আসা রেজাউল করিম বাবুলের জন্য এটাই প্রথম নয়। এর আগেও তিনি ‘বেফাঁস’ মন্তব্য করে সমালোচনার জন্ম দেন।
গত বছরের ১৭ নভেম্বর সংসদে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) বিল-২০০০’ সংসদে পাস হওয়ার সময় রেজাউল করিম বলেছিলেন, ‘নারীবাদীরা নারী স্বাধীনতার কথা বলে নারীদের উন্মুক্ত করে চলছে। এ কারণেই ধর্ষকেরা ধর্ষণের অনুভূতিকে এতটা একসেপ্ট করেছে, ধর্ষণে উত্সাহিত হচ্ছে।’