‘বেতন বাড়ে না এক টাকাও, জিনিসের দাম বাড়ছেই’
বাজারে এমন কোনো নিত্যপণ্য নেই, যার দাম বাড়েনি। দাম বাড়তে বাড়তে এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, যাতে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ই অস্বস্তিতে পড়ছে। ক্রেতা কম কম কিনছে, বিক্রেতাও সেই অর্থে লাভ করতে পারছে না। কারণ, দাম বেশি বললে ক্রেতা তা কয়েক দোকানে যাচাই করে কিনছে।
শাক-সবজি, চাল-ডাল, আটা-ময়দা-সুজি, ফল-মূলসহ যাবতীয় জিনিসপত্রের দাম বেড়েই যাচ্ছে। এই যেমন খুচরা বাজারে বেড়েছে খোলা আটা-ময়দার দাম। ক্রেতার অভিযোগ, বাজারে গিয়ে যাই কিনতে যান, তারই দাম বেশি। তাদের দাবি, সবকিছু নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে।
এই যেমন, প্রতি কেজি আটা বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়। যা গত সপ্তাহেও ৫ টাকা কম ছিল। একইভাবে ভালো মানের ময়দার দাম ৬৫-৭০ টাকা হয়েছে। ডালের দামও কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। দেশি প্রতি কেজি মশুর ডাল ১২৫ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
গত তিনদিনে মিল পর্যায়ে মোটা চাল প্রতি বস্তায় (৫০ কেজি) ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেড়েছে। সে কারণে খুচরা বাজারে খোলা চালের দামও বেড়েছে ১-২ টাকা। প্রতি কেজি পায়জাম ও গুটি স্বর্ণা জাতের চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৩ থেকে ৫৬ টাকায়। বিআর-২৮ জাতের চাল ৫৮ থেকে ৬০ টাকায়।
দাম বাড়ার কোনো কারণ না থাকলেও ফের বাড়তে শুরু করেছে মোটা চাল, আটা, ময়দা, তেল, চিনি, পেঁয়াজ, মসুর ডালসহ প্রায় সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। এসব পণ্যের বাড়তি দামের চোটে যেমন একদিকে ক্রেতারা চাহিদার তুলনায় পণ্য কম কিনছেন, তেমনি বিক্রেতাদেরও কেনাবেচা কমেছে।
সপ্তাহের ব্যবধানে আরও ৫ টাকা বেড়ে দেশি পেঁয়াজের কেজি ঠেকেছে ৬০ টাকায়। ভালো মানের পেঁয়াজ কোথাও ৭০ টাকাতেও বিক্রি হচ্ছে। আমদানি করা পেঁয়াজের কেজি ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া বাজারে অধিকাংশ সবজির দাম ৮০ টাকা কেজি। ৮০ টাকা বা তার কিছু কমবেশি দামের সবজির তালিকায় রয়েছে কাকরোল, কচুর লতি, উস্তা, করলা, ঝিঙা ও শিম। বেগুন, পটল, চিচিঙ্গা, মুলা ও একপিস ফুলকপি পাওয়া যাচ্ছে ৬০ টাকার মধ্যে। কম দামে শুধু পেঁপে, যা ৪০ টাকা কেজি। আর টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১০০-১২০ টাকা কেজি দরে।
কাঁঠাল বাগানের বিক্রেতা নাজমুল হুদা বলেন, ‘সবকিছুর দাম বেশি। আগে যে লোক প্যাকেট ভরে তরকারি কিনতেন, তিনি এখন যতটুকু কম পারা যায় কিনছেন। এতে করে আমাদের বিক্রিও কম হচ্ছে। আর বেশি দাম বললে অবশ্যই বিক্রি হচ্ছে না। কারণ, একটু কমানোর জন্য ক্রেতা এখন আগের তুলনায় অনেক যাচাই করেন। আমাদেরও লাভ ভালো হচ্ছে না। আমরা বেশি দামে কিনছি।’
কারওয়ান বাজারে এসে শরিফুল হক নামের এক ক্রেতা বলেন, ‘বেতন বাড়ে না এক টাকাও, জিনিসের দাম বাড়ছেই। যাই কিনতে যাই, দাম বেশি। অথচ, সবকিছুর দাম বাড়ছে নিয়মিত। ঠিকঠাকভাবে না চলছে সংসার, না চলছে বাচ্চাদের লেখাপড়ার খরচ। মাঝেমধ্যে মনে হয়, দেশ ছেড়ে বিদেশে চলে যাই।’
এদিকে শুক্রবারের বাজারে নতুন অস্বস্তি নিয়ে এসেছে ভোজ্যতেল। দেশের বাজারে ভোজ্যতেলের দাম কমেছিল এক মাস আগে। এর মধ্যেই আবার দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এবার তারা লিটারে ১৫ টাকা বাড়াতে চান। গত মঙ্গলবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব দেওয়ার পর এরই মধ্যে বাজারে তেল সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে কোম্পানিগুলো। সেজন্য এখন বেশির ভাগ দোকানে আগের নির্ধারিত দাম অনুযায়ী তেল পাওয়া যাচ্ছে না। প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৭৮ টাকা এবং খোলা সয়াবিন তেল ১৫৮ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা থাকলেও কিনতে হচ্ছে আরও বেশি দরে।