‘বেতাই নদী’ কার স্বার্থে ‘খাল’ হলো, পুনঃস্থাপনের উদ্যোগ
ভূমি কার্যালয়ের কাগজপত্র অনুযায়ী নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার বেতাই ‘নদী’ হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত। যদিও সেটি এখন দখল ও ভরাট হতে হতে সরু খালে পরিণত হয়েছে। আর এই সুযোগে একটি স্বার্থান্বেষি মহল বেতাইকে ‘নদী’র পরিবের্ত ‘খাল’ হিসেবে চিহ্নিত করার অপচেষ্টা করছে।
উপজেলার সান্দিকোনা ও রোয়াইলবাড়ি আমতলা ইউনিয়নের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া বেতাইকে ‘খাল’ হিসেবে দেখিয়ে ১১ কিলোমিটার জুড়ে খনন প্রকল্প চলছে। কিন্তু স্থানীয় পরিবেশবাদী সংগঠন ও সচেতন এলাকাবাসী এর প্রতিবাদ জানিয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় নদী কমিশন নেত্রকোনা জেলা প্রশাসনকে এ ব্যাপারে প্রতিবেদন দিতে বলেছে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিষয়টির তদন্তকাজ চলছে।
নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক কাজী মো. আবদুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী ‘বেতাই খাল’কে প্রকৃত ভূমি রেকর্ড অনুযায়ী ‘বেতাই নদী’ হিসেবে পুনঃস্থাপনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক আরও জানান, বেতাই নদী কীভাবে খালে পরিণত হলো রেকর্ড যাচাই করা হচ্ছে এবং জেলা প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া কীভাবে নদীকে খাল বানানো হয়েছে, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। নতুনভাবে এই প্রজেক্টের নামও সংজ্ঞায়িত করা করা হবে।
জানা গেছে, ঐতিহ্যবাহী বেতাই নদীকে খাল দেখিয়ে এলজিইডির মাধ্যমে ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ উন্নয়ন (দ্বিতীয় পর্যায়) প্রকল্পের অধীনে ২০২০-২১ অর্থবছরে খালখনন, নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে কাজ চলছে। ১১ কিলোমিটার খননে ১৬টি প্যাকেজের আওতায় মোট বরাদ্দ দুই কোটি আট লাখ টাকা। জাইকার অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে এলজিইডি।
ইতিহাস বিকৃত করে বেতাই নদীকে খাল দেখানো এবং খননকাজে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে এলাকাবাসী স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন, ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার ও নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক বরাবর পৃথক অভিযোগপত্র দিয়েছে। স্থানীয় বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে।
পরিবেশবাদীদের অভিযোগ, স্থানীয় একটি স্বার্থান্বেষী মহল বেতাই নদীর নাম পরিবর্তন করে খাল খননের প্রকল্প এনে নামকাওয়াস্তে মাটি কেটে প্রকল্পের সিংহভাগ টাকা আত্মসাতের পাঁয়তারা চালাচ্ছে।
কেন্দুয়া উপজেলা প্রকৌশলী জাকির হাসান বলেন, ‘এটি যে নদী তা আমাদের জানা ছিল না। আর তখন কেউ বলেনি। খননকাজ এখনও শেষ হয়নি। আরও কিছু স্থানে খননকাজ বাকি রয়েছে। নদী আর খালের নামের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সান্দিকোনা ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১ নম্বর বিআরএস খাস খতিয়ানে মোট ১২ একর ১৭ শতাংশ জমিতে শ্রেণি নদী উল্লেখ রয়েছে। এর মধ্যে বালুচর মৌজার জেএল নম্বর ১১৯, দাগ নম্বর ৫৭৭-এ ৮ একর ৩০ শতাংশ এবং পেরী সাহিতপুর মৌজায় ৩ একর ৮৭ শতাংশ। পেরী সাহিতপুর মৌজার জেএল নং ১১৪, দাগ নং ৩৪৬-এ ১ একর ২ শতাংশ এবং ১৪৭ দাগে ২ একর ৮৫ শতাংশ। উভয় জেএল নং এর দাগ অনুযায়ী, শ্রেণি নদী উল্লেখ রয়েছে এবং মালিক হিসেবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার পক্ষে জেলা প্রশাসক নেত্রকোনা উল্লেখ রয়েছে।
এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) নেত্রকোনার নির্বাহী প্রকৌশলী বিশ্বজিৎ কুমার কুণ্ড জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চিটি প্রাপ্তির কথা জানিয়ে বলেন, শিগগিরই এ বিষয়ে প্রতিবেদন পাঠানো হবে।