বেনাপোলের সেই রাজস্ব কর্মকর্তার নামে দুদকের মামলা
শাহজালাল (র.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ২৩ লাখ টাকাসহ আটক বেনাপোল কাস্টমস হাউজের সেই সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা খন্দকার মুকুল হোসেনের নামে অবশেষে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ঘটনার ছয় মাস পর গতকাল রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি) দুদক সমন্বিত যশোর জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক আল আমিন মামলাটি করেন।
গত বছরের ২৬ আগস্ট ঢাকায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা খন্দকার মুকুল হোসেনকে ২৩ লাখ টাকাসহ আটক করেন। জিজ্ঞাসাবাদের পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তাঁকে বেনাপোল কাস্টম হাউসের কর্মকর্তাদের কাছে হস্তান্তর করেন তাঁরা। এরপর তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তাঁর বাড়ি টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার কাকড়াজান গ্রামে।
মামলা সূত্রে জানা যায়, খন্দকার মুকুল হোসেন ২০১০ সালে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ঢাকায় ক্যাশিয়ার পদে চাকরিতে যোগদান করেন। পরবর্তী সময়ে ২০১৭ সালের তিনি সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা পদে পদোন্নতি পান। তিনি ২০২০ সালের নভেম্বরে বেনাপোল কাস্টম হাউজে যোগদান করেন। যোগদানের পর বেনাপোল বন্দরের ৩১ নম্বর ওয়েব্রিজসহ অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে সাধারণ পূর্ত শাখায় দায়িত্বপালন করতে থাকেন। এখানে দুর্নীতি ও ঘুষের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করতে থাকেন।
এরপর ২০২২ সালের ২৬ আগস্ট সকালে মুকুল হোসেন ঢাকায় যাওয়ার জন্য যশোর বিমানবন্দরে আসেন। বোডিং পাসের সময় বন্দরের স্ক্যানিং মেশিনে তাঁর বহন করা ব্যাগে বিপুল পরিমাণ টাকার উপস্থিতি পায় নিরাপত্তকর্মীরা। পরে যশোর বিমানবন্দর থেকে বিষয়টি শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়।
অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মুকুলের ব্যাগ তল্লাশি করে ২২ লাখ ৯৯ হাজার টাকা পাওয়া যায়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি টাকার উৎস বলতে পারেননি। তাঁর কাছ থেকে টাকা ও অন্যান্য মালামাল জব্দ করে বেনাপোল কাস্টম হাউজে পাঠানো হয়। পরে তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।
এ ঘটনা জানতে পেরে যশোরের দুদক কর্মকর্তারা বেনাপোল কাস্টমসে এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করে মুকুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। কিন্তু টাকার উৎস সম্পর্কে সদুত্তর দিতে ব্যর্থ হন তিনি। এ বিষয়ে দুদক প্রধান কার্যালয়ে মামলা করার অনুমতি প্রার্থনা করা হয়। অনুমতি পাওয়ার পর গতকাল এ মামলা করা হয়েছে।
দুদকের যশোর সমন্বতি জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক আল-আমিন জানান, প্রাথমিকভাবে তাঁরা অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ায় কর্তৃপক্ষের কাছে নিয়মিত মামলার করার আবেদন জানান। কর্তৃপক্ষের অনুমতি পাওয়ায় দুদক কার্যালয়ে এ মামলা করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী এ মামলার নথি সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আদালতে পাঠানো হবে।
উপপরিচালক আরও জানান, তদন্তকালে এ ঘটনার সঙ্গে অন্য কারো সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি প্রমাণ পেলে তাদেরও এ মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। মুকুল বর্তমানে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের হেফাজতে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। যদি আটকের প্রয়োজন মনে হয় তবে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।