বেনাপোল থেকে পেট্রাপোল পর্যন্ত রেলের ডাবল লাইনের কাজ শুরু
করোনায় রেলপথে পণ্য আমদানি বাণিজ্যের চাহিদা বেড়েছে বেনাপোল বন্দর দিয়ে। ফলে রেল কর্তৃপক্ষ অবকাঠামো উন্নয়ন কাজ শুরু করেছে দ্রুত। বেনাপোল রেল স্টেশন থেকে ভারতের পেট্রাপোল বন্দর পর্যন্ত রেলের ডাবল লাইনের কাজ শুরু হয়েছে।
রেলপথে আমদানির চাহিদা বাড়লেও বিট্রিশ আমলের তৈরি জরাজীর্ণ রেলপথে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছিল দুদেশের আমদানি বাণিজ্য।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, রেলের অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি কন্টেইনার টার্মিনাল স্থাপন। আর এ টার্মিনাল নির্মাণ হলে ভারতের সঙ্গে বাড়বে আমদানি বাণিজ্য। তেমনি বর্তমান পরিস্থিতিতে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিও কমবে।
বন্দর সূত্র জানায়, প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ১২টি বন্দর দিয়ে রেল ও স্থলপথে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য সম্পন্ন হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়াতে একমাত্র বেনাপোল বন্দর দিয়েই স্থল এবং রেলপথে আমদানি বাণিজ্য শতকরা ৮০ ভাগ সম্পন্ন হয়ে থাকে। সড়কপথে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কিছুটা অবকাঠামো উন্নয়ন হলেও রেলপথের তেমন একটা উন্নয়ন হয়নি। স্বাধীনতার পর বন্ধ হয়ে যায় রেলের কার্যক্রম।
পরবর্তীতে ২০০০ সালে পুরানো অবকাঠামো রেখেই রেলপথে শুরু হয় আমদানি। বর্তমানে রেলের মাধ্যমে আমদানি হচ্ছে মোটর গাড়ি , মেশিনারি, গম, ভুট্টা, চাল, পেঁয়াজসহ বিভিন্ন পণ্য।
বর্তমানে একটি কার্গো রেল বন্দরে প্রবেশ করলে জায়গার অভাবে আর একটি কার্গো রেল আসতে পারত না বেনাপোল বন্দরে। বিষয়টি নিয়ে ব্যবসায়ীরা সরকারের বিভিন্ন মহলে তদবির করে প্রায় চার কোটি টাকা ব্যয়ে রেলের অবকাঠামো উন্নয়ন ও সংস্কার কাজ শুরু হয়। আগামী তিন মাসে নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলে রেল কর্তৃপক্ষ জানান।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সুজন জানান, চট্টগ্রাম বন্দরের পর বেনাপোল বন্দরের অবস্থান। কদিন পর পদ্মা সেতু চালু হচ্ছে। বেনাপোলে বন্দরে রেলপথে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কন্টেইনার টার্মিনাল চালু হলে ভারতের সঙ্গে আমদানি, রপ্তানি বাণিজ্য দ্বিগুণ হবে। রেলপথে সব ধরনের পণ্য আমদানির সুযোগ থাকায় ব্যবসায়ীদের রেলপথে বেশি বেশি পণ্য আমদানির আহ্বান জানানো হয়েছে।
বেনাপোল বন্দরের উপপরিচালক (ট্রাফিক) আব্দুল জলিল জানান, বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে রেলপথে পণ্য আমদানি অনেকটা নিরাপদ ও সাশ্রয়ী। উন্নয়ন কাজ শেষ হলে রেলপথে রপ্তানিও চালুর পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
যশোর রেল বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী অলিউল হক জানান, প্রায় চার কোটি টাকা ব্যয়ে বেনাপোল রেল স্টেশন থেকে পেট্রাপোল বন্দর পর্যন্ত দুই কিলোমিটার পুরানো ব্রডগেজ রেললাইন সংস্কার ও বেনাপোল বন্দরের দুই পাশে পণ্যবাহী কার্গো রেল দাঁড়ানোর জন্য দুটি অতিরিক্ত রেল লাইন স্থাপনের কাজ চলছে। আগামী তিন মাসের মধ্যে এসব উন্নয়ন কাজ শেষ হবে।
বেনাপোল রেল স্টেশন মাস্টার সাইদুর রহমান বলেন, ‘জরাজীর্ণ রেলপথে বাণিজ্য ব্যাহত হওয়ায় সরকার সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। পর্যাপ্ত ইয়ার্ড না থাকায় একটি কার্গো রেল বন্দরে প্রবেশ করলে আর একটি ভারত থেকে ঢুকতে পারত না। এতে সময়মতো পণ্য পরিবহণ ব্যাহত হতো। উন্নয়ন কাজ শেষ হলে এ পথে বাণিজ্য যেমন বাড়বে তেমনি রাজস্ব আয়ও বৃদ্ধি পাবে।’
চলতি অর্থ বছরের মে মাসে বেনাপোল বন্দরের রেলপথে ভারত থেকে আমদানি হয়েছে ৪৩ হাজার ৭৬৮ মেট্রিক টন বিভিন্ন ধরনের পণ্য। শুধু রেলের ভাড়া বাবদ সরকারের রাজস্ব আয় হয়েছে দুই কোটি ২৬ লাখ ৮৪ হাজার টাকা।