‘বোন হারানোর ২ মাসের মাথায় বাবাকেও হারালাম’
রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবের একটি ভবনের বিস্ফোরণের ঘটনায় তিনজন নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন আব্দুল মান্নান। অনেক বছর ধরে লায়রা প্রডাক্ট (নিউ জেনারেশন) নামের একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। সর্বশেষ মার্কেটিং ম্যানেজার হিসেবে কাজ করতেন।
মাত্র দুই মাসেরও কম সময়ের আগে আদরের ছোট মেয়েকে হারিয়েছিলেন মান্নান। আর আজ নিজেই চলে গেলেন।
নিহত আব্দুল মান্নানের বড় ছেলে মো. আশিক। তিনি বাকরুদ্ধ। আশিক বলেন, ‘আমরা দুই ভাই ও এক বোন ছিলাম। ছোট বোনটি টিবি রোগে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিল। গত ৪ জানুয়ারি বাসায় অসুস্থ হয়ে পড়লে মিটফোর্ড হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যায়। বোনকে হারানোর পরে বাবা-মা খুবই কান্নাকাটি করত। গত ১৬ তারিখ ছিল বোন হারানোর ৪০ দিন। আজ বাবাকে হারালাম।’
সাইন্সল্যাবের পপুলার হাসপাতালের জরুরি বিভাগে গিয়ে দেখা যায় আহত ও নিহদের স্বজনদের আহাজারি। সেখানেই কথা হয় আশিকের সঙ্গে।
আশিক আরও বলেন, ‘বাবা লায়রা প্রডাক্ট নামের প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করেছেন। সর্বশেষ মার্কেটিং ম্যানেজার হিসেবে কাজ করতেন। দুই দিন সাপ্তাহিক ছুটির পরে আজ সকালের অফিসে যান। এর কিছুক্ষণ পর আমার মাকে অফিসের একজন ফোন দিয়ে পপুলার হাসপাতালে আসতে বলেন।’
আশিক বলেন, ‘আমরা হাসপাতালে এসে দেখি আমার বাবা আর বেঁচে নেই। দুই মাস হয়নি আদরের বোনটাকে হারালাম, আজ বাবাও চলে গেল। আমি এখন মাকে কী বলে শান্তনা দেব।'
জানা গেছে, নিহত মান্নান পরিবার নিয়ে লালবাগের ইয়াসমিন হাজী গলিতে বসবাস করতেন। দুই ছেলে আর এক মেয়েকে নিয়ে সংসার ছিল। দুই মাস আগে টিবি আক্রান্ত অবস্থায় বাসায় ছিল। পরে টয়লেটে পড়ে গেলে হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যায়। তাদের গ্রামের বাড়ি টঙ্গীর গাজীপুররা এলাকায়।
এদিকে, ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও প্রিয়াঙ্কা ভবনের ব্যবসায়ী মো. মাহবুব বলেন, ‘১১টার কিছু আগে আমরা দোকান খুলে মাত্র বসেছি। এই সময়ে বিকট শব্দে দোকানের বিদ্যুৎ বন্ধ হয়ে যায়৷ পরে আমরা বের হয়ে দেখি, পাশের ফিনিক্স ইন্সুইরেন্স কোম্পানি নামের একটি প্রতিষ্ঠানের ভবনে বিস্ফোরণ ঘটে। বের হয়ে ভবনের সামনে কয়েকজনকে আহত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেছি। দুজনকে মৃত অবস্থায় পেয়েছি। তাদের সবাইকে ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে।’
মাহবুব আরও বলেন, ‘বিস্ফোরণের ঘটনার পরে ভবনে থাকা অনেকে লাফ দিতে যাচ্ছিল। আমরা তাদের নিষেধ করেছি। পরে ফায়ার সার্ভিস এসে তাদের উদ্ধার করে।’
আরেক ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান জানান, বিস্ফোরণ ঘটা ভবনের নিচতলার একটি হোটেলে বসে সকালের নাস্তা করছিলাম। হঠাৎ, বিস্ফোরণের শব্দে আমরা বের হয়ে দেখি বিস্ফোরণ ঘটেছে। কয়েকজন আহত হয়ে পড়ে আছে। এরপর আমি দ্রুত দৌড়ে চলে আসি।’