বোর্ডের ওয়েবসাইটেও চক্রের হাত, টাকায় মিলে জাল সনদ
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে তথ্য পরিবর্তনের মাধ্যমে জাল সনদ তৈরির অভিযোগে সাত সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর মোহাম্মদপুর, রমনা ও চকবাজার থানা এলাকা থেকে তাদেরকে গ্রেপ্তার করে ডিবির ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম।
আজ শনিবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন নূর রিমতি, মো. জামাল হোসেন, এ কে এম মোস্তফা কামাল, মো. মারুফ, ফারুক আহম্মেদ স্বপন, মাহবুব আলম ও মো. আবেদ আলী।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে এসএসসি বেশকিছু নিবন্ধন কার্ড ও প্রবেশপত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া একটি অ্যাকাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে নাম ও বয়স সংশোধন সংক্রান্ত পাঁচটি আবেদনপত্র। এ ছাড়া শিক্ষা বোর্ডের কয়েকটি খাম উদ্ধার করা হয়।
এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, ভুক্তভোগী নূর তাবাসসুম সুলতানা ২০১৯ সালে ধানমন্ডি কামরুননেছা গভ গার্লস হাইস্কুল থেকে এসএসসি পাশ করেন। জরুরি প্রয়োজনে যোগাযোগ করার জন্য শিক্ষা বোর্ডে দেওয়া মোবাইল নাম্বারে গত ২১ আগস্ট একটি ক্ষুদে বার্তা আসে। ওই বার্তায় তার রোল ও রেজিস্ট্রেশন নাম্বার ঠিক থাকলেও শিক্ষার্থীর নাম ও পিতা-মাতার নামসহ জন্ম তারিখ পরিবর্তিত দেখতে পায়। তখন তারা স্কুল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে যোগাযোগ করে পরিবর্তনের বিষয়ে সত্যতা পায়। এ ঘটনায় ধানমন্ডি মডেল থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করা হয়। এ মামলার তদন্ত শুরু করে ডিবি।
ঘটনার রহস্য উন্মোচন ও জালিয়াতির সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার সম্পর্কে ডিবির এ কর্মকর্তা বলেন, গ্রেপ্তারকৃত নূর রিমতি ২০১৯ সলে অনুষ্ঠিত এসএসসি পরীক্ষায় রাজধানীর সিটি মডেল কলেজ হতে অংশগ্রহণ করে অকৃতকার্য হয়। কিন্তু, তার ইতালি যাওয়ার জন্য এসএসসি পাশের সার্টিফিকেট প্রয়োজন। জাল সনদ তৈরির জন্য সে তার মামা গ্রেপ্তার মো. জামাল হোসেনের মাধ্যমে এ কে এম মোস্তফা কামালের সঙ্গে সাড়ে তিন লাখ টাকায় চুক্তিবদ্ধ হয়। চুক্তি অনুযায়ী, মোস্তফা কামাল শিক্ষা বোর্ডের দালাল মো. মারুফ, মাহবুব আলম, ফারুক আহম্মেদ স্বপন ও মো. আবেদ আলীর সঙ্গে সমন্বয় করে নূর তাবাসসুমের সার্টিফিকেট সংক্রান্ত জেএসসি এবং এসএসসি পাসের সব তথ্য সংগ্রহ করে। এরপর তারা প্রথমে শিক্ষার্থীর নাম, পিতার নাম, মাতার নাম সংশোধনের জন্য শিক্ষা বোর্ডের নির্ধারিত ফরমেটে আবেদন করেন।
এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, শিক্ষা বোর্ডের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী টাকার বিনিময়ে শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটের রেজাল্ট আর্কাইভে নির্ধারিত ফরমেটে সংরক্ষিত কৃতকার্য প্রকৃত শিক্ষার্থী নূর তাবাসসুমের তথ্য পরিবর্তন করে অকৃতকার্য শিক্ষার্থী নুর রিমতির তথ্যসমূহ আপলোডের মাধ্যমে জাল সনদ তৈরি করে। পরবর্তীতে জন্ম তারিখও পরিবর্তন করে নেয়। এমনকি শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে পরিবর্তিত শিক্ষার্থীর সংযোজিত তথ্যও প্রদর্শন করে। প্রতারকচক্র ঢাকা শিক্ষা বোর্ডসহ অন্যান্য শিক্ষা বোর্ডের বিভিন্ন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের নাম, পিতার নাম, মাতার নাম, জন্ম তারিখসহ অন্যান্য তথ্য পরিবর্তন করে অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের তথ্য সংযোজন করে জাল সনদ তৈরির মাধ্যমে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়।
শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের উদ্দেশে ডিবি পুলিশের এই কর্মকর্তা আহ্বান জানিয়ে বলেন, বিভিন্ন সময়ে শিক্ষাবোর্ড থেকে যারা কৃতকার্য হয়েছেন, তাদেরকে শিক্ষা বোর্ডের রেজাল্ট আর্কিইভে প্রবেশ করে ফলাফল যাচাই করে কোনো পরিবর্তন দেখতে পেলে বোর্ড কর্তৃপক্ষ বা পুলিশকে অবহিত করতে হবে।