ব্যবসায়ী খুনের ছয় বছরে মিলল রহস্য, গ্রেপ্তার ৩
গাজীপুরের কাশিমপুরে বাড়িওয়ালার স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়ার জেরে গলা ও অণ্ডকোষ কেটে ঝুট ব্যবসায়ী আরিফুল ইসলামকে (৩৫) হত্যার ঘটনার প্রায় ছয় বছর পর রহস্য উম্মোচন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এ ঘটনায় জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার গাজীপুর পিবিআইর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন গাজীপুরের কাশিমপুর থানাধীন সুরাবাড়ি এলাকার সাইদুর রহমান শাহীন সরকার (৫৮), একই এলাকার মোমিরুল দেওয়ান (৪৮) ও শরীফ দেওয়ান (৩৩)। তারা সবাই ঝুট ব্যবসায়ী।
মাকছুদের রহমান জানান, গাজীপুরের জয়দেবপুর থানার (বর্তমানে কাশিমপুর) সুরাবাড়ি এলাকার উসমান মোক্তারের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন পাবনার চাটমোহর থানাধীন কুয়াবাসী এলাকার আরিফুল ইসলাম। তিনি এখানে থেকে কালিয়াকৈরের উত্তর গজারিয়া এলাকার স্ক্যানডেক্স টেক্সটাইল ফ্যাক্টরিতে চাকরি করতেন। প্রায় চার বছর ওই বাড়িতে থাকার পর তিনি ভাওয়াল মির্জাপুর এলাকায় বাসা ভাড়া নেন। মির্জাপুরে ভাড়া বাসায় থাকলেও তিনি প্রায়ই উসমান মোক্তারের বাসায় আসা যাওয়া করতেন। চাকরির পাশাপাশি তিনি ঝুটের ব্যবসা করতেন। তিনি সুরাবাড়ি এলাকায় কিছু জমি কিনলেও বিরোধের কারণে ওই জমির দখল পাননি। তাঁর স্ত্রী একমাত্র সন্তানকে নিয়ে পাবনা থাকতেন।
পুলিশ সুপার জানান, সুরাবাড়ির উসমান মোক্তারের বাড়িতে ভাড়া থাকার সময় বাড়িওয়ালার স্ত্রীর সঙ্গে আরিফুলের ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ে উঠে। বিষয়টি জানাজানি হলে ২০১৫ সালের ২৪ ডিসেম্বর উসমান মোক্তার ঘটনায় জড়িত আসামিদের কাছে তার স্ত্রী ও ভিকটিম আরিফুলের সম্পর্কের বিষয়ে বিচার দেয়। পাশাপাশি ক্রয়কৃত জমির দখল নিয়ে ঝামেলার কথা জানায়। এর প্রেক্ষিতে উসমান মোক্তার ও তার সহযোগীরা আরিফুলকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা ঝুট বিক্রির কথা বলে ৫০ হাজার টাকাসহ আরিফুলকে ওইদিন রাত ৯টার দিকে সুরাবাড়ী এলাকার জারা ফ্যাক্টরির পার্শ্ববর্তী কালিদত্তের বাঁশ বাগানে ডেকে নেয়। সেখানে উসমান ও তার সহযোগীরা আরিফুলকে গলা কেটে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছুরিকাঘাতে খুন করে। পরে নিহতের অণ্ডকোষ ও পুরুষাঙ্গ কেটে ফেলে। এর একদিন পর (২৬ ডিসেম্বর) ঘটনাস্থল থেকে অজ্ঞাত হিসেবে নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ। লাশ উদ্ধারের খবর পেয়ে নিহতের ভাই মর্গে এসে আরিফুলের লাশ শনাক্ত করে।
পুলিশ সুপার আরও জানান, আরিফুল খুনের ঘটনায় অজ্ঞাতদের আসামিদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন নিহতের ছোট ভাই। গাজীপুর জেলা ও গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ দীর্ঘ তিন বছর এক মাস ১৪ দিন তদন্ত শেষে রহস্য উদঘাটন করতে না পারায় আদালতে মামলাটির চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করে। আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে মামলাটি পুনরায় তদন্তের জন্য গাজীপুর জেলা পিবিআইকে নির্দেশ দেন। চাঞ্চল্যকর ও ক্লুলেস এ খুনের মামলার তদন্তের দায়িত্ব পেয়ে পিবিআইর তদন্ত কর্মকর্তা তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে এ ঘটনায় জড়িত ওই তিনজনকে সোমবার ও মঙ্গলবার ভোররাতে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে সাইদুর রহমান শাহীন সরকার ও শরীফ দেওয়ান আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। অপর গ্রেপ্তারকৃত মোমিরুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আরিফুল খুনের ঘটনায় আটজন জড়িত থাকার কথা জানিয়েছে গ্রেপ্তারকৃতরা। এর প্রেক্ষিতে ক্লুলেস ও চাঞ্চল্যকর এ হত্যার প্রায় ছয় বছর পর রহস্য উন্মোচন হলো।