ব্যাংক ও জয়েন্ট স্টক কোম্পানির কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্টতা খতিয়ে দেখছে দুদক
ইন্টারন্যাশনাল লিজিং এন্ড ফাইন্যান্স লিমিটেড (আইএলএফএসএল) থেকে ঋণের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাতে বাংলাদেশ ব্যাংক, জয়েন্ট স্টক কোম্পানি এবং সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্টতা খতিয়ে দেখছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
আজ বৃহস্পতিবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়তের দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চে এই প্রতিবেদন দাখিল করবে দুদক। দুদকের দৈনিক ও সাম্প্রতিক অভিযোগ এবং বীমা ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া এই তথ্যসমূহ হাইকোর্টে পাঠানো হয়েছে।
পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যাংক কর্মকর্তা এবং অডিট ফার্মসমূহের সংশ্লিষ্টতাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যদি কারও সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায় তাহলে অর্থ আত্মসাত ও জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলার চার্জশিটে অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলে উচ্চ আদালতকে জানিয়েছে দুদক।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এসকে সুর চৌধুরী এর নামে পৃথকভাবে সম্পদ অর্জন সংক্রান্ত অভিযোগের অনুসন্ধান চলছে। অনুসন্ধান শেষে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। তবে সাবেক তথ্য সচিব মকবুল হোসেনের বিরুদ্ধে কোন ধরনের অভিযোগ বা মামলা অনুসন্ধানের কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।
দুদক বলছে, আইএলএফএসএল এর কর্মকর্তা ও বোর্ড সদস্যদের জামানতবিহীন ঋণ মঞ্জুর করে পিকে হালদার ও তার সহযোগীদের বিভিন্ন কোম্পানির নামে স্থানান্তর ও উত্তোলন করে ১৪শ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২২টি মামলা করা হয়েছে। এছাড়া ৬টি মামলা রয়েছে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের। এসব মামলার তদন্ত চলছে। এছাড়া আরও ২৭ জনের বিরুদ্ধে সম্পদ অর্জন বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে। অনুসন্ধান শেষে মামলা করা হবে। এছাড়া পিকে হালদারসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলার বিচার চলছে।
প্রতিবেদনে দুদক বলছে, পিকে হালদার ও তার সহযোগীদের এ পর্যন্ত ১৭৮ ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। ৬ হাজার ৭৯০ শতাংশ জমি, ৪টি ফ্ল্যাট ২০ হাজার বর্গফুটের একটি ভবন অবরুদ্ধ করেছে দুদক। যার বাজার মূল্য ৯৩৩ কোটি টাকা। এছাড়া বিভিন্ন মডেলের ২২টি গাড়ি জব্দ করা হয়েছে। এছাড়া আইএলএফএসএল এর অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে মোট ৩৪টি মামলা রয়েছে। মামলাগুলো বর্তমানে বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান শাখা হতে তদন্ত চলছে। এর মধ্যে এসকে সুরের বিরুদ্ধে বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান শাখায় প্রাপ্ত একটি অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে। এছাড়া বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি লি. এর সাবেক চেয়ারম্যান মেজর (অব.) মান্নানের বিরুদ্ধে দুটি অর্থ আত্মসাতের মামলার চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে।
‘৩৭শ কোটি টাকা লুটপাটে দায়ী পাঁচ ডেপুটি গভর্নর’ শিরোনামে প্রতিবেদন একটি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। সেখানে বলা হয়, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি লিমিটেড (বিআইএফসি) ও ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডে (আইএলএফএসএল) থেকে ‘অবৈধভাবে’ জামানতবিহীন ঋণ নিয়ে মোট ৩ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা ‘আত্মসাৎ’ করা হয়েছে। এর মধ্যে আইএলএফএসএল থেকে শুধু ভারতে কারাবন্দি প্রশান্ত কুমার হালদার এবং তার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামেই নেওয়া হয়েছে ৩ হাজার ১৩০ কোটি টাকা। বিআইএফসি থেকে বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান ও তার প্রতিষ্ঠান নিয়ে গেছে ৬০০ কোটি টাকা। বছরের পর বছর ধরে এই লুটপাটের ঘটনা ঘটলেও নিশ্চুপ ছিলেন প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীল এই কর্মকর্তারা।
এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক পাঁচ ডেপুটি গভর্নরসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে দুদক কি পদক্ষেপ নিয়েছে তা জানতে চায় হাইকোর্ট। এরপরই দুদক এই রিপোর্ট হাইকোর্টে পাঠাল।