ভাষার মাস শুরু হলো আজ
‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’—আজ মঙ্গলবার থেকে শুরু হলো রক্তে রাঙানো সেই ভাষা আন্দোলনের মাস। ফেব্রুয়ারির প্রথমদিন থেকে ধ্বনিত হবে সেই অমর সংগীতের অমিয় বাণী। পুরো মাসজুড়ে বাঙালি জাতি স্মরণ করবে ভাষা শহীদদের, জানাবে ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা।
ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে ফেব্রুয়ারি ছিল ঔপনিবেশিক প্রভুত্ব ও শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে বাঙালির প্রথম প্রতিরোধ এবং জাতীয় চেতনার প্রথম উন্মেষকাল।
১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে দুর্বার আন্দোলনে সালাম, জব্বার, শফিক, বরকত ও রফিকের রক্তের বিনিময়ে বাঙালি জাতি পায় মাতৃভাষার মর্যাদা এবং আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেরণা। সেই পথ ধরে শুরু হয় বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন এবং একাত্তরে নয় মাস পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।
বস্তুত ফেব্রুয়ারি মাস একদিকে শোকাবহ হলেও অন্যদিকে আছে এর গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। আদি বাঙালির সাংস্কৃতিক ও আর্থ-সামাজিক জীবন এবং ক্রমবিকাশের চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে বাঙালির শৌর্য-বীর্য যেন জ্বলে ওঠে এ মাসেই।
বায়ান্নের একুশে ফেব্রুয়ারি—ফাগুণের আগুনে ভাষা আন্দোলনের দাবি আর উন্মাতাল গণমানুষের মুষ্টিবদ্ধ হাত একাকার হয়ে যায় সেদিন। ভাষার জন্য বলিদান অবাক বিস্ময়ে লক্ষ্য করে বিশ্ববাসী। সেই থেকে শুরু হয়ে যায় বাঙালির শেকল ভাঙার লড়াই। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে হিসেব-নিকেশের হালখাতার শুরুতেই রক্তের আঁচড় দিয়ে বাঙালি শুরু করে তার অস্তিত্বের লড়াই।
এদিকে, এ ভাষার মাসেই শহীদদের স্মরণে আয়োজন করা হয় নানা অনুষ্ঠানের। তবে, করোনা মহামারির কারণে একুশের অনুষ্ঠানমালায় আনা হচ্ছে পরিবর্তন। এ মাসের সবচেয়ে বড় কর্মযজ্ঞ মাসব্যাপী অমর একুশে গ্রন্থমেলা এবারও ১ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে না। এরই মধ্যে মেলা দুইসপ্তাহ পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। করোনা সংক্রমণের কারণে গত বছর ফেব্রুয়ারি থেকেও এ গ্রন্থমেলা না হয়ে শুরু হয়েছিল ১৮ মার্চ।
এ ছাড়া করোনা মহামারির বাস্তবতা বিবেচনা করে এবারও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে সামাজিক,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো।