ভূমিষ্ঠ কন্যা সন্তানকে দেখা হলো না ফায়ার সার্ভিসকর্মী মনিরের
কুমিল্লার নাঙ্গলকোট থানার সাতবাড়িয়া এলাকার শামসুল হকের ছেলে মো. মনিরুজ্জামান মনির (৩২)। আট বছর আগে ফায়ার সার্ভিস কর্মজীবন শুরু করেন তিনি। মাত্র দুই মাস আগে তিনি চট্টগ্রামে বদলি হয়ে এসে সীতাকুণ্ডের কুমিরা ফায়ার স্টেশনে যোগদান করেন। কথা ছিল দুয়েক দিনের মধ্যে ছুটিতে এসে সদ্য ভূমিষ্ঠ কন্যা সন্তানকে দেখবেন ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান। কিন্তু, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারিতে কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফারণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আগুন নেভাতে গিয়ে নিহত হয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের এ কর্মকর্তা।
আজ রোববার সকালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিহত মনিরের বড় মামা মীর হোসেন ভাগিনার মরদেহ শনাক্ত করেন। এ সময় তাঁর কান্নায় ভারি হয়ে ওঠে এলাকা।
এ সময় মীর হোসেনের মুঠোফোনে কুমিল্লা থেকে ফোন আসে। ফোন ধরেই মীর হোসেন কান্নায় ভেঙে পড়েন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘মনির নেই, মনির আর নেই। সে আমাদের ছেড়ে চলে গেছে।’
গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে মীর হোসেন বলেন, ‘দুদিন আগে কুমিরায় গিয়ে মনিরের সঙ্গে সারা দিন ঘুরেছি। অনেক আড্ডা দিয়েছি। সকালে ফোন করে তাঁকে পাচ্ছি না। মন সায় দিচ্ছিল না। হাসপাতালে ছুটে আসি। আমি তাঁকে চিনতে পেরেছি, সে আমাদের ছেড়ে চলে গেছে। হয়তো এই মৃত্যুই তাকে চট্টগ্রামে টেনে এনেছে। আল্লাহ রে তার পরিবারের কী হবে? তাঁর দুই মাস বয়সী এক কন্যা সন্তান রয়েছে।’
এসব কথা বলতেই মীর হোসেন আবারও কান্না শুরু করেন। সময় ঘনিয়ে আসতেই দগ্ধ রোগী আর স্বজনদের আহাজারি বাড়ছেই। হাসপাতালে বাড়তি রোগীর চাপ সামলাতে চিকিৎসক, স্বাস্থ্যসেবীর সঙ্গে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবক সংগঠনের কর্মীরা কাজ করে যাচ্ছেন।
মনিরুজ্জামান কুমিল্লা জেলার নাঙ্গলকোট উপজেলার সাতবাড়িয়া ইউনিয়নের নাইয়ারা গ্রামের শামসুল হকের ছেলে। তিনি চট্টগ্রামের কুমিরা ফায়ার সার্ভিস স্টেশনে নার্সিং অ্যাটেনডেন্ট পদে কর্মরত ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ওই ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জয়নাল আবেদীন।
জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘তাঁর স্ত্রী ও কন্যা আছে। নিজের নবজাতক কন্যাকে দেখতে ছুটি নিয়ে দুয়েক দিনের মধ্যে বাড়িতে আসার কথা ছিল। ছুটি নিয়ে বাড়ি আসা হয়নি, চির ছুটিতে চলে গেলেন মনির।’
শনিবার ৪ জুন রাতে সীতাকুণ্ডে বিএম কন্টেইনারে ভয়াবহ বিস্ফোরণে নিহত ৪৯ জনের মধ্যে রয়েছেন মনির। ভয়াবহে আগুন নির্বাপণের সময় স্টেশনের নার্সিং অ্যাটেনডেন্ট কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামানের মৃত্যু হয়।