ভোলার ফেরিঘাটে ঢাকা-চট্টগ্রামমুখী কর্মজীবীদের ঢল
ভোলার ইলিশা ফেরিঘাট এবং মেঘনা নদীর তীরে গভীর রাত থেকেই হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়েছে। উদ্দেশ্য একটাই যেকোনো মূল্যে মেঘনা নদী পাড়ি দিয়ে লক্ষ্মীপুর হয়ে কর্মস্থলে পৌঁছানো। এ যেন বাঁধভাঙা মানুষের স্রোত।
সন্ধ্যার পরেই ঘোষণা আসে গার্মেন্টসসহ শিল্পকারখানা খুলে দেওয়া কথা। তাই ঘোষণায় কর্মমুখী হাজার হাজার মানুষের ঢল ভোলার ইলিশা ফেরিঘাট। যে যেভাবে পেরেছে ঘাটে পৌঁছেছে, এখন নদী পার হওয়ার চেষ্টা। খুব ভোরে একটা ফেরি ঘাটে আসার সঙ্গে সঙ্গেই অন্তত দুই থেকে আড়াই হাজার মানুষ ফেরিতে উঠে। কোনো উপায় না দেখে অবশেষে শুধু যাত্রী নিয়ে ফেরির যাত্রা শুরু করে। এরপরেও থেমে নেই কর্মমুখী মানুষেরা। ছোট ছোট ট্রলার আর স্পিডবোডে বৈরি আবহাওয়ার মধ্যেও উত্তাল মেঘনা পাড়ি দিচ্ছে। স্পিডবোড জনপ্রতি এক হাজার আর ট্রলারে ৫০০ টাকা করে নিচ্ছে। ঘাটে কিংবা মেঘনার তীরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সদস্য তখন ছিল না। তবে কোস্টগার্ডের একটি বড় স্পিডবোর্ড টহল দিলেও তাদের সামনে দিয়ে ট্রলারে যাত্রী পারাপার করলেও তারা এসব বিষয় বাঁধা দেয়নি।
এদিকে, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সকাল সাড়ে ৯টায় অপর একটি ফেরি অন্তত তিন হাজার যাত্রী নিয়ে ছেড়ে যায়। মানুষের এতটাই চাপ যে ফেরি না ভিড়তেই কানায় কানায় ভড়ে যায় মানুষে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তখন পর্যন্ত ঘাটে না আসায় নিয়ন্ত্রণের বাহিরে চলে যায় সব। ফেরিতে থাকা গাড়ি আনলোড না করতে পেরে দাঁড়িয়ে থাকে। পড়ে খবর দেওয়া হলে পুলিশ ও কোস্টগার্ড এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
শুধু ভোলা নয়, দক্ষিণাঞ্চলীয় ২১ জেলার মানুষ এই রুট ব্যবহার করায় এখানে কর্মমুখী মানুষের চাপ অনেক বেশি। এরপর প্রচণ্ড ঝড় আর বাতাস শুরু হলেও বৃষ্টিতে ভিজেই মানুষ ছুটে ফেরির দিকে। এ সময় অনেক শিশু এবং নারী ও বৃদ্ধরা অসুস্থ হয়ে পড়ে। তিল পরিমাণ ঠাঁই ছিল না ফেরিগুলোতে। আর সেখানে স্বাস্থ্যবিধির অবস্থা যে কী তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রশাসনের তেমন একটা ভূমিকা দেখা যায়নি। দায়সারা কাজ করছেন সবাই।
এদিকে, ট্রলারে উঠতে গিয়ে ইলিশা মাছঘাট এলাকায় মো. কাঞ্চন মিয়া, মো. হারুন, মো. খলিল ও সোলেমান নামের যাত্রীরা মেঘনা নদীতে পড়ে যায়। পড়ে তাদের অন্য যাত্রীরা ধরে উপরে টেনে তুলে আনে।
এছাড়া লালমোহন থেকে আসা সালমা বিবি বলেন, ‘জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কর্মস্থলে যাচ্ছি সরকার আমাদের নিয়ে তামাশা করছে। লঞ্চ ও বাস ছেড়ে দিলে আজ এমন কষ্ট করতে হতো না। গার্মেন্টস থেকে ফোন করেছে ১ আগস্ট কাজে যোগদান না করলে চাকরি থাকবে না। তাই যেকোনো ভাবেই হোক আমাদের যেতেই হবে।’
একই ধরনের কথা বলেন চরফ্যাশনের আবুল বাশার, বোরহানউদ্দিনের মো. সোলায়মান এবং ঝালকাঠী ও বরিশাল থেকে আসা চট্টগ্রামদগামী মো. আব্দুর রহিম এবং মো. আ. জলিল হাওয়ালাদার।
তবে এসব বিষয় ভোলার জেলা প্রশাসক মো. তৌফিক-ই-লাহী চৌধুরী বলেন, ‘সরকার যেহেতু রপ্তানিমুখী শিল্পকারখানা খুলে দিয়েছে তাই কর্মমুখী মানুষদের যেতেই হবে। এসব নিয়ে আসলে আমাদের কিছু বলার নেই।’