ভৈরবে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতি মৃত্যুর অভিযোগ
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে রেড ক্রিসেন্ট মাতৃসদনে ভুল চিকিৎসায় স্মৃতি বেগম (২১) নামে এক প্রসূতি মায়ের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। গতকাল শনিবার (১৫ এপ্রিল) শহরের দক্ষিণ চণ্ডীবের এলাকায় বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি পরিচালিত মাতৃসদনে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত স্মৃতি পৌর শহরের কালিপুর দক্ষিণপাড়া এলাকার জামাল মিয়ার মেয়ে। তবে ভুল চিকিৎসার কথা অস্বীকার করেছেন মাতৃসদনটির কর্তব্যরত মিডওয়াইফ শামীমা আক্তার ও আইরিন বেগম।
নিহত স্মৃতি বেগমের পারিবারিক সূত্র জানায়, নরসিংদীর বেলাবো উপজেলার সররাবাদ ইউনিয়নের ইব্রাহিমপুর এলাকার সজিব মিয়ার সঙ্গে দুই বছর আগে স্মৃতির বিয়ে হয়। সন্তান প্রসবের জন্য ভৈরবে পৈত্রিক বাড়িতে আসেন তিনি। প্রসব ব্যথা শুরু হলে গতকাল শনিবার বিকেল শহরের দক্ষিণ চণ্ডীবের এলাকায় বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি পরিচালিত রেড ক্রিসেন্ট মাতৃসদনে নিয়ে যান। পরে সেখানে কর্তব্যরত দুই মিডওয়াইফ শামীমা আক্তার ও আইরিন বেগম তাঁকে ডেলিভারি করতে এপিসিওটমি (প্রসব রাস্তা কেটে) করে বাচ্চা প্রসব করান। এ সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য স্বজনরা নিয়ে যেতে চাইলে তাঁরা বাধা দেন। রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে একপর্যায়ে চিকিৎসার জন্য অন্য হাসপাতালে নিতে বলেন। স্বজনরা পরে বাজিতপুরের ভাগলপুরে জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। এপিসিওটমি করার সময় স্মৃতি বেগমের রগ কেটে ফেলায় অতিরিক্ত রক্তক্ষণে মারা গেছেন বলেও জানান চিকিৎসকরা।
স্মৃতি বেগমের ভাবী শাহানা বেগম ও চাচি রহিমা বেগম জানান, প্রসব ব্যথা শুরু হলে তাঁরা স্মৃতিকে রেড ক্রিসেন্ট মাতৃদসনে নিয়ে যান। তখন তাদের জানানো হয় নরমাল ডেলিভারি হবে। কিন্তু পরে বাচ্চা ডেলিভারির সময় এপিসিওটমি করতে চাইলে তারা অস্বীকৃতি জানান। তার পরও তারা এপিসিওটমি করেন। এ সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হতে থাকলে স্বজনরা বারবার অন্য হাসপাতালে নিয়ে যেতে চাইলে তাঁরা বাধা দিয়ে বলেন, ঠিক হয়ে যাবে। রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে তাঁরা সেলাইন করেন। ইনজেকশন ও ট্যাবলেট দেন। কিন্তু রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়নি। অবস্থা খারাপ হলে তাঁরা তাঁকে সেখান থেকে বাজিতপুরের ভাগলপুর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার বলেন মারা গেছেন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত রেড ক্রিসেন্ট মাতৃসদনের কর্তব্যরত দুই মিডওয়াইফ শামীমা আক্তার ও আইরিন বেগম অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কথা স্বীকার করে বলেন, ‘বাচ্চা সুস্থ্যভাবে ডেলিভারি করিয়েছি। ডেলিভারির সময় আমরা অতিরিক্ত রক্তক্ষণের জন্য ওষুধ ব্যবহার করেছি। রক্তক্ষরণ বন্ধও হয়েছিল। হঠাৎ পেট ব্যথা হওয়ায় রোগীর স্বজনদের আল্টাসনোগ্রাফি করানোর জন্য হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলি। পরে শুনেছি মারা গেছে।’
ভুল চিকিৎসার কথা অস্বীকার করে তাঁরা আরও বলেন, ‘আমরা প্রতিদিন এখানে ১৫ থেকে ২০ জন গর্ভবতী রোগীর বাচ্চা নরমালে ডেলিভারি করাই। আমরা এ বিষয়ে ট্রেনিংপ্রাপ্ত।’
ভুল চিকিৎসায় মেয়েকে হারিয়েছেন অভিযোগ করে নিহত স্মৃতির বাবা জামাল মিয়া বলেন, ‘আমি আমার মেয়েকে হারিয়েছি। আমি দোষীদের শাস্তি চাই। আমার মতো যেন আর কোনো বাবার কোল খালি না হয়।’
স্মৃতি বেগমের স্বামী সজিব মিয়া বলেন, ‘আমার স্ত্রীর অবস্থা খারাপ শুনে আমি রেড ক্রিসেন্ট থেকে তাকে নিয়ে ভাগলপুর হাসপাতালে যাই। সেখানে ডাক্তার জানান বাচ্চা প্রসবের সময় তার রগ কেটে ফেলেছে, তাই অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে সে মারা গেছে। আমি হত্যাকারীদের বিচার চাই।’
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. বুলবুল আহমেদ বলেন, ‘ভুল চিকিৎসায় রোগী মারা যাওয়ার অভিযোগ পেলে বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
ভৈরব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাকছুদুল আলম বলেন, ‘এ বিষয়ে এখনও কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনগত সহায়তা দেওয়া হবে।’